বাংলা

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়?

CMGPublished: 2022-06-28 15:17:39
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

জুন ২৮: গত ২৬ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-৭ গোষ্ঠীর শীর্ষসম্মেলনে ‘বিশ্বের অবকাঠামোর অংশীদারিত্বের সম্পর্ক’ বা পিজিআইআই ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণায় তিনি জি-৭ গোষ্ঠীর দেশগুলোর সঙ্গে ২০২৭ সালের আগে বিশ্বের অবকাঠামো খাতে ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করার কথা বলেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করবে।

শুনে মনে হয় এই ঘোষণা সত্যিই বড় একটি পরিকল্পনা। তবে ভেবেচিন্তে বোঝা যায়, এর অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এটি একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

প্রথমে, পরিকল্পনার উদ্দেশ্যের ওপর দৃষ্টি দেওয়া যাক। ভাষণে বাইডেন চীনের নাম উল্লেখ না-করলেও মার্কিন জাতীয় উপদেষ্টা জ্যাক সুল্লিভান স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, এটি চীনাদের দেওয়া জিনিসের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে এবং বিকল্প একটি বাছাই হতে পারে।

বহির্বিশ্ব সাধারণত মনে করে যে, তথাকথিত পিজিআইআই চীনের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে প্রতিহত করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও এমনটি করেছে।

এক বছর আগে জি-৭ গোষ্ঠীর শীর্ষসম্মেলনে তথাকথিত ‘বিল্ড ব্যাক এ বেটার ওয়ার্ল্ড’ বা বিবিবিডাবলিউ অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অবকাঠামো খাতের প্রয়োজনে ৪০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা হবে। সেই সময় বাইডেন বলেছিলেন যে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের চেয়ে এই পরিকল্পনাটি আরো ভালোভাবে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো খাতে চাহিদা মেটাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে দলাদলির কারণে পরিকল্পনাটি প্রায় বাতিল হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।

তাই সহজেই দেখা যায়, বিবিবিডাবলিউ বা পিজিআইআই, যাই হোক, উত্থাপনের শুরুর উদ্দেশ্যও ছিল নোংরা। মার্কিন রাজনীতিবিদরা অবকাঠামো নির্মাণের অজুহাতে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে ধোঁকা দেওয়া ও নাশকতা চালানোর চেষ্টা করেছে এবং রাজনৈতিক অবস্থান দখল করেছে। তারা চীনের ‘বন্ধু বলয়’ সম্প্রসারণে ঈর্ষান্বিত। তবে তারা থামাতে অক্ষম, তাই তাদের উদ্বেগ ও দুর্বলতা লুকানোর জন্য কিছু নতুন শব্দ ও ধারণা উদ্ভাবন করা দরকার।

বিশ্বের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পুঁজির যোগান। পিজিআইআইতে অর্থ কোথা থেকে এসেছে? যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আগামী ৫ বছরে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চাঁদা, ফেডারেল তহবিল এবং ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগ, অন্য কয়েকশ’ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত মার্কিন ডলার- সম্ভবত বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক, উন্নত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেবে। এএফপি মনে করে, এই পরিকল্পনার পুঁজি প্রধান ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগকারীদের থেকে এসেছে। তাই তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা, জি-৭ গোষ্ঠীর সদস্যদেশগুলোর উচ্চ মানের মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীনসহ নানা উপাদানের কারণে তথা পিজিআইআই যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি শূন্য কথা হতে পারে বলে মনে করে সিএমজি সম্পাদকীয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বোঝা উচিত্ যে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে শতাধিক দেশ স্বাগত জানিয়েছে। শুধু ফাঁকা কথা বললেই চলবে না; এর পিছনে রয়েছে বিশ্বের সঙ্গে উন্নয়নের সুযোগ ভাগাভাগি করা এবং পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়নের সদিচ্ছা, প্রযুক্তি, আকার ও গতিসহ নানা দিকে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দশাধিক বছরের শক্তির জমা এবং গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার প্রকল্পে চীনের পুঁজি দেওয়া।

বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপনের নয় বছরে পার্শ্ববর্তী দেশের জনগণের জন্য বাস্তব কল্যাণ বয়ে আনছে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের কাঠামোতে পরিবহন-সংক্রান্ত অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সালে প্রতি বছর বিশ্বের জন্য ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা সৃষ্টি হবে; যা বিশ্বের জিডিপি’র ১.৩ শতাংশ। এর ৯০ শতাংশ অংশীদারি দেশগুলোই পাবে; নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলো আরো বেশি কল্যাণ পাবে। ২০১৫ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৭৬ লাখ জনগণ চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে এবং ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ মধ্যমানের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে।

বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে অবকাঠামো খাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পুঁজির বিশাল অভাব দেখা যাচ্ছে। মার্কিন রাজনীতিবিদরা প্রকৃত পুঁজি দিয়ে সাহায্য করলে তা ভালো ব্যাপার। তবে, যদি তারা পরিকল্পনার মাধ্যমে নিষ্ফল খেলা খেলতে চায়, তাহলে নতুন ধারণা সৃষ্টি করলেও অন্যদের প্রতারিত করতে পারে না। শুরু থেকেই তা ব্যর্থ হবে বলে সিএমজি সম্পাদকীয় মনে করে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn