বাংলা

মহামারির হুমকি ও মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে দেশ

CMGPublished: 2022-06-18 18:29:33
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়েছে। সম্প্রতি দেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের হার ৫ ভাগ ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন ‘চতুর্থ ঢেউয়ের’। পাশাপাশি দেশে আরেকটি ডলার সংকট তথা মূল্যস্ফীতির আশংকা করছেন আর্থিক বিশ্লেষকরা। আর এই সংকটের জন্য তারা দায়ী করছেন মার্কিন মুদ্রানীতিকে। মহামারীর প্রকোপের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-নির্ধারণী সুদহার বৃদ্ধির ফলে পরোক্ষভাবে আরও ক্ষতির শিকার হবে আমদানি-রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত সাধারণ মানুষ।

মহামারীর সংকট সম্পূর্ণ কাটাতে পারেনি বাংলাদেশ। গেল তিন মাসের বেশি সময় ধরে সংক্রমণের হার এক শতাংশের কম থাকলেও গত এক সপ্তাহের তা ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ গণমাধ্যমে জানান- এর মানে হচ্ছে দেশে করোনার নতুন সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। তাই এখনই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগাম সর্তকতা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এখন থেকেই কঠোরভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং দ্রুত বুস্টার টিকা দেওয়ার হার বাড়াতে হবে। তাহলে ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যাবে।

গত শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৪৩৩জন রোগীর খবর পাওয়া যায়। একই সময়ে পজিটিভিটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.২৭% যা গত সাড়ে তিন মাসের সর্বোচ্চ। তবে সংক্রমণ বাংলাদেশ গত কয়েক সপ্তাহে কোন মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া যায়নি।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয়। সেই বছরের ১৮ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু ঘটে। এরপর থেকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তবে সাত মাস পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হতে শুরু করে। কিন্তু পরের বছর মার্চে দেশব্যাপী ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পেইন শুরু হয়।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি বাংলাদেশে মুল্যস্ফীতি ডেকে আনতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকরা। গত চার দশকের মধ্যে এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি। যা এখন যখন সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি। এটিকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক- ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এজন্য বাজারে অর্থের সরবরাহ কমাতে ঋণ গ্রহণকে দাবি করেছে ফেড। আর সেই প্রেক্ষাপটেই নীতি সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত মার্চের পর তৃতীয়বারের মতো সুদের হার বাড়ালো ফেড। সামনের মাসগুলোতে তা আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে ফেড।

ফেডের সুদ হার বাড়ানোতে বাজারে ডলারের সরবরাহ কমছে। শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। আর তার বিপরীতে মান কমছে বিশ্বের অন্যান্য মুদ্রার। সবশেষ গ্লোবাল ডলার ইনডেক্স অনুসারে ডলারের মান বেড়েছে। আমরা জানি, বৈশ্বিক পণ্যমূল্য নির্ধারিত হয় মার্কিন মুদ্রা ডলারে। তাই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে শক্তিশালী ডলার কেউ চায় না। বিশেষত আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য। কারণ আমদানি করতে বড় অংকের ডলার চলে যাবে দেশের বাইরে। দেখা দেবে ডলারের সংকট। পাশাপাশি, গত কয়েক মাসে দেশে রপ্তানি ও রেমিটেন্সের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারে দেখা দিয়েছে ডলারের সংকট। সেক্ষেত্রে বিনিময় হার ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কয়েকদফা পরিবর্তন করেও সামাল দেয়া যায় নি। এ অবস্থায় সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে নিয়মিতই ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৭০০ কোটি ডলার সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক- যাতে টান পড়ছে রিজার্ভে।

ফেডের সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কারণে ইতোমধ্যে দেশের পণ্য ও মুদ্রা বাজারে চলছে অস্থিরতা। নতুন করে ফেডের সুদ হার বৃদ্ধি এই অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের আর্থিক বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা বাড়বে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্থানীয় মুদ্রার মান অবনমন হবে। এর ফলে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে ডলার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবে। বাজারে দেখা দেবে দেবে মূল্যস্ফীতি। তখন বাজার থেকে নিত্যপণ্য কিনতে ভোক্তাকে দিতে হবে বাড়তি অর্থ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn