গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলের জন্য "চীনা প্রেসক্রিপশন"
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর প্রাকৃতিক অবস্থা ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে, অনুন্নত রোপণ প্রযুক্তি এবং উচ্চ সংগ্রহ-পরবর্তী ক্ষতির কারণে ফলের ফলন কম হয় এবং গুণমান আন্তর্জাতিক মান পূরণ করে না। শ্রীলঙ্কার ফল রোপণ শিল্পকে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজারের মূল্য শৃঙ্খলের সম্পূর্ণ বিকাশ এবং উন্নতি করতে সহায়তা করার জন্য, চীন-জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা প্রকল্প ত্রিপক্ষীয় চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে কার্যকর করা হয়।
শ্রীলঙ্কার কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে একটি সবজির বাজারে, ফলের স্টলের ব্যবসা বিশেষভাবে সমৃদ্ধ ছিল, এবং সেখানে ফল কিনতে আসা মানুষের ব্যাপক স্রোত দেখা যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার শ্রীলঙ্কা প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মিঃ কপিলা, যিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপের প্রতিবেদকের সাথে ফলের স্টল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন যে, শ্রীলঙ্কায় প্রচুর পরিমাণ ফল রয়েছে, যার অনেকগুলিই অনন্য। কপিলা বলেন,
‘শ্রীলঙ্কায় প্রচুর পরিমাণ ফল রয়েছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ ফলের মধ্যে রয়েছে আম, আনারস ও কলা। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কায় কলা রয়েছে প্রায় ৩০ প্রকারের। আরেকটি উদাহরণ হল শ্রীলঙ্কার আনারস, এর একটি অনন্য স্বাদ আছে, এটি একটি অনন্য বিক্রয় পয়েন্ট দেয়।”
উল্লেখযোগ্য, গত অগাস্ট মাসে, চীনের কাস্টমসের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাজা ফলের প্রকার এবং রপ্তানিকারক দেশ ও অঞ্চলের তালিকা আপডেট করেছে, যেগুলি চীনের পরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টাইনে অ্যাক্সেস রয়েছে, শ্রীলঙ্কার আনারস-সহ ৭টি দেশ থেকে মোট ১০টি নতুন ফল যোগ করেছে।
কলার পরে শ্রীলঙ্কার আনারস হল দেশটির দ্বিতীয় ফল যা চীনের কাস্টমসের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুমোদন করেছে। কিন্তু বাস্তবে, দেশীয় ফলের বাজারে আপনি খুব কম শ্রীলংকার আনারস বা কলা দেখেন, কেন? চাইনিজ একাডেমি অফ ট্রপিক্যাল এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ লি জিফেং বলেছেন,
“শ্রীলঙ্কায় ফল চাষ তুলনামূলকভাবে কম মাত্রা, রোগ ও পোকামাকড়ের অপর্যাপ্ত প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কারণে ফলন কম হয়। পাশাপাশি ফলের মান এখনও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। তাই শ্রীলঙ্কার ফল এখনো চীনের বাজারে প্রবেশ করেনি।”
শ্রীলঙ্কার ফল রোপণ শিল্পকে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজারের মান শৃঙ্খলের সম্পূর্ণ বিকাশ এবং উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য, চীন-জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা প্রকল্প ত্রিপক্ষীয় চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের মে থেকে বাস্তবায়ন করেছে। এর উদ্দেশ্য হল, শ্রীলঙ্কাকে ফল চাষের স্তর উন্নতিতে সাহায্য করা, যাতে ফলের মূল্য শৃঙ্খলকে উন্নত করা যায়। বর্তমানে, এই প্রকল্পটি কী প্রভাব ফেলেছে?
শ্রীলঙ্কার মাকান্ডুলা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে আনারসের একটি প্রদর্শন ক্ষেতে সাংবাদিকরা দেখেছেন যে, চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষ করা আনারস গাছগুলি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেনি এমন গাছের চেয়ে লম্বা ও বড়।
চীন-জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা প্রকল্প ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, চীন কলা, আম এবং আনারসের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফসলের পেশাদার ক্ষেত্রে ১০জন বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদকে বেছে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় দুই বছরের প্রযুক্তিগত সহায়তা মিশন সম্পাদন করেছে। চীন ও শ্রীলঙ্কার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে এই প্রকল্পে সহযোগিতা করেছে। চীনের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান, চাইনিজ একাডেমি অফ ট্রপিক্যাল এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের বিশেষজ্ঞ সুন দে ছুয়ান বলেন, এই তিনটি ফল চীনের প্রযুক্তি ব্যবহার করার পর, তাদের উত্পাদন পরিমাণ এবং পণ্যের মান স্পষ্টভাবে উন্নত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার মাকান্দুরা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক গিয়ামানি বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে চীনা বিশেষজ্ঞ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ও শ্রীলঙ্কার বিশেষজ্ঞরা একসঙ্গে কাজ করেছেন এবং নিঃস্বার্থভাবে চীনা প্রযুক্তি শ্রীলঙ্কায় হস্তান্তর করেছেন। গিয়ামানি বলেন,
“এই প্রকল্পটি আগের চেয়ে ভিন্ন, কারণ সহযোগিতা পদ্ধতি ভিন্ন। চীনা বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সাথে কাজ করছেন, তারা আমাদের ইনস্টিটিউটে থাকেন, আমাদের সাথে কাজ করেন এবং নিয়মিত ও দক্ষতার সাথে আমাদেরকে তাদের নির্দেশনা ও পরামর্শ দেন। তারা সর্বদা পরীক্ষামূলক ক্ষেত্রে আমাদের সাথে কাজ করে এবং আমাদের তাদের কার্যকরী কৌশল শেখায়, যা বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রতি মানুষের ধারণা এবং মনোভাব পরিবর্তন করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।”
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার শ্রীলঙ্কা প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মিঃ কপিলা বলেন, “আমি মনে করি, আমরা ইতিমধ্যেই আম, কলা ও আনারস এই তিনটি ফলের উত্পাদন উন্নতি করেছি, যদি আমরা প্রশিক্ষণের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে পারি এবং আরও বেশি চাষিদের কাছে প্রযুক্তির বিস্তার ঘটাতে পারি, তাহলে আমরা শুধু উত্পাদনই বাড়াতে পারব না। কিন্তু আমরা ফলের মানও উন্নত করতে পারব, ফলে ফলের মান শৃঙ্খলকে আরও আপগ্রেড করতে পারব। ভবিষ্যতে আরও এধরনের প্রকল্পে সহযোগিতা করতে পারব।”