বাংলা

বাচ্চাদের কম চিনি ও লবণযুক্ত খাবার খাওয়ান

CMGPublished: 2024-07-22 16:44:33
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সম্প্রতি চীনের জাতীয় পুষ্টি ও স্বাস্থ্য পরামর্শ কমিটির পুষ্টিবিদরা চীনাদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের তালিকা প্রকাশ করেন এবং এ সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ দেন। তাঁরা ‘কম ভোজ্যতেল, বেশি মটরশুটি ও দুগ্ধজাত খাবার’ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট পুষ্টিবিদরা মনে করেন, দীর্ঘকাল ধরে অতিরিক্ত ভোজ্যতেল খেলে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে এবং রক্তে লিপিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি, করোনারি হৃদরোগ ও ডায়াবিটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তাতে বাড়বে।

পুষ্টিবিদরা বলেন, বিশেষ করে শিশু ও বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে কম তেল, লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। তাতে বড় হওয়ার পর এসব রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা কমবে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বাচ্চাদের পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার রান্নার পদ্ধতি ও পুষ্টিকর খাবারের তালিকা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করব।

বস্তুত, ভোজ্যতেল বেশি খাওয়া নিয়ে বড়দের একটি ভুল ধারণা আছে। ভোজ্যতেল বাচ্চাদের শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ, এতে সন্দেহ নাই। তবে, অতিরিক্ত ভোজ্যতেল তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। কোনো কোনো বাবা-মা মনে করেন, বিভিন্ন ধরনের সবজিজাত তেল প্রাণীজাত তেলের চেয়ে স্বাস্থ্যকর, তাই তা বেশি খেলেও অসুবিধা নেই। তবে, কিছু কিছু সবজিজাত তেল প্রক্রিয়াকরণের সময় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং তাতে তেলের পুষ্টিগুণ কিছুটা হলেও হারিয়ে যায়। তা ছাড়া, নারিকেল তেল বা পাম তেলের মধ্যে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ক্ষতিকর।

এশিয়ায় গরম তেলে ভাজা বা রান্না প্রচলিত। উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা খাবার খেতে সুস্বাদু। তবে, ভাজা খাবারে সহজে শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা কম খাওয়া ভালো। পিতামাতারা বাচ্চাদের জন্য খাবার রান্নার সময় নিম্ন তাপমাত্রায় খাবার সিদ্ধ বা স্টু করতে পারে, যা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে, ভোজ্যতেলের পুষ্টিকর উপাদান খাবারে বেশি পরিমাণ থাকে।

অনেক পরিবার নিয়মিত একই ধরনের তেল খাওয়া হয়, যা ঠিক নয়। বিভিন্ন ধরনের ভোজ্যতেলের পুষ্টিউপাদান ও ভুমিকা আলাদা। তাই, সবসময় এক ধরনের ভোজ্যতেল খেলে শরীরে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। সালাদে জলপাই তেল বেশ উপযোগী, আর শাকসবজি রান্নায় চিনাবাদামের তেল আরও ভালো।

রান্নায় ভোজ্যতেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি, বাচ্চাদের জলখাবারেও তেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৭৫ গ্রাম চিপস রান্না করতে ১২০ গ্রাম আলু ও ১০ গ্রাম ভোজ্যতেল দরকার। এক প্যাকেজ আলু চিপসের মধ্যে ১৬০ গ্রাম আলু ও ২৬ গ্রাম ভোজ্যতেল থাকে। ৪টি স্টিম কেক একসাথে খেলে প্রায় এক চামচ তেল খাওয়া হয়। তা ছাড়া, ওয়াফেলস বা বিস্কুটের মধ্যেও অনেক ভোজ্যতেল আর চিনি রয়েছে।

বাচ্চাদের অতিরিক্ত তেল খাওয়ার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যেমন, খাবার রান্নার সময় নির্ধারিত পরিমাণে তেল ব্যবহার করতে হবে। স্টু, স্টিম বা সিদ্ধর পদ্ধতি ব্যবহার করে কার্যকরভাবে তেল খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এমন পদ্ধতিতে রান্না হলে খাবারে বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি এড়ানো যায়। খাবারের পুষ্টিগুণও এতে বজায় থাকে।

বাচ্চাদের শরীর গঠনে সয়া পণ্য বা দুগ্ধজাত দ্রব্য খাবার বেশি খাওয়া ভালো। এমন খাবারে প্রচুর ভালো প্রোটিন থাকে, যা বেশি খেলে শরীর বেশি ক্যালসিয়াম পায় এবং বাচ্চাদের দাঁত ও শরীরের হাড় শক্ত হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণের সয়া পণ্য ও দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া বাচ্চাদের জন্য বেশ ভালো।

রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ বা ডিনারের সময়, বাচ্চাদের জন্য কম তেলযুক্ত খাবার অর্ডার করা ভালো। অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে খাবর কেনার সময় শুধু ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ফাস্টফুডের ওপর নির্ভর করা চলবে না। এ ধরনের খাবার বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বস্তুত, খাদ্যাভ্যাস ছোটবেলা থেকেই গড়ে ওঠে। বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে তাদের যত বেশি শাকসবজি, আস্ত শস্যদানা ও কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে উত্সাহ দেওয়া উচিত। ভাজা খাবার ও বেশি মিষ্টি খাবার যত কম খাওয়া যায়, তত ভালো। এভাবে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn