বাংলা

‘চীনা সেতু ২০২৪’ চীনা ভাষা প্রতিযোগিতা ভারতে অনুষ্ঠিত, রাষ্ট্রদূত সুই ফেই হং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত

CMGPublished: 2024-06-25 15:47:11
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

গত ১৫ জুন ২০২৪ ‘চীনা সেতু’ বিদেশি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের চীনা ভাষা দক্ষতা প্রতিযোগিতার ভারত বিভাগের ফাইনাল প্রতিযোগিতা এবং পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত সুই ফেই হং এতে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতা দিয়েছেন। ভারতের ডুন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক সুরেখা ধানগারওয়াল, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালাইকা প্রেমন, বিশ্বভারতীর চীনাভবনের অধ্যক্ষ ও চীন-বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অভিজিত ব্যানার্জী, ভারত-চীন মৈত্রী সমিতির দিল্লি মহাসচিব ড. পারভীন গুপ্ত এবং ভারতে চীনা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি চিয়াং কুও বিং অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বক্তৃতা করেন। দূতাবাসের মন্ত্রী কাউন্সেলর মা চিয়া, মন্ত্রী কাউন্সেলর ওয়াং শিন মিং, কাউন্সেলর ইয়াং শিউ হুয়ান এবং ভারতে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ভারতের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা বিষয়ের প্রধান, স্থানীয় চীনা শিক্ষক, কিছু কলেজের শিক্ষক এবং ছাত্র ও চীনা কোম্পানির প্রতিনিধিসহ শতাধিক লোক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীন সফরের শততম বার্ষিকী স্মরণে ফটো প্রদর্শনী"। রাষ্ট্রদূত সুই ফেই হং প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

এ বছরের ‘চীনা সেতু’ কলেজ ও হাই-স্কুল ছাত্রদের জন্য চীনাভাষা দক্ষতা প্রতিযোগিতা ভারতের ২০টিরও বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ জন ছাত্রকে আকৃষ্ট করেছে। বিভিন্ন বাছাই এবং প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতার পরে ৭জন কলেজ ছাত্র এবং ৬জন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রদেরকে ফাইনালের জন্য বাছাই করা হয়েছে। ফাইনাল প্রতিযোগিতায়, চীনা ভাষার বক্তৃতা, প্রতিভা প্রদর্শন এবং কুইজ প্রতিযোগিতার পর, মণিপুরের ধানমঞ্জুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের থাং ই নান (চীন-ইন্ডিয়া কলেজ দ্বারা প্রস্তাবিত) বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে এবং মহারাষ্ট্রের সেন্ট মিরা স্কুল থেকে খুং জাও ই (ইয়িন ইয়াং কলেজ দ্বারা প্রস্তাবিত) মিডল স্কুল ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার জিতে বিশ্বব্যাপী ফাইনালে ভারত অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করবে।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত সুই ফেই হং তার বক্তব্যে বলেন, ভাষা সভ্যতা ও সংস্কৃতির বাহক এবং মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব বৃদ্ধির সেতু। ২০১০ সাল থেকে, জাতিসংঘ প্রতি বছর "চীনা ভাষা দিবস" উদযাপন করে। বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে চীনা ভাষা শিক্ষা চালু হয়েছে, ৮৩টি দেশ তাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় চীনা ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ চীনা ভাষা অধ্যয়ন করেছে। আরও বেশি সংখ্যক মানুষ চীনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি শিখছে। তারা চীনা ভাষার জানালার মাধ্যমে চীন ও চীনা জনগণকে বুঝতে পারছে।

হাজার বছর ধরে, "বিশ্ব সম্প্রীতি, এক বিশ্ব, একটি পরিবার"- সর্বদা চীনা জাতির আদর্শ সাধনা। এবার "চীনা সেতু" প্রতিযোগিতায় "এক বিশ্ব, এক পরিবার"-এর চেতনার ভিত্তিতে আয়োজন করা হয়েছে। ২০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের চীনা ক্লাসিক “লি চি”("বুক অফ রাইটস")তে উল্লেখ করা হয় যে, "ঋষি বিশ্বকে এক পরিবার হিসাবে বিবেচনা করেন।" যার অর্থ জ্ঞানী লোকেরা বিশ্বকে একটি পরিবার হিসাবে বিবেচনা করে। প্রাচীন চীনা ঋষিরা "মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, সব জাতির মধ্যে সম্প্রীতি এবং সর্বজনীন সম্প্রীতি" বলে বিশ্বাস করতেন যে, স্বর্গ ও পৃথিবী বড় পিতামাতা এবং সব মানুষ ভাই ভাই। পারিবারিক সম্প্রীতি থেকে সামাজিক সম্প্রীতি সম্প্রসারিত হয়, এবং এমনকি বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি অবশেষে সমগ্র বিশ্বকে একটি মহান সম্প্রীতির জগতে পরিণত করে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উদ্ভাবনী চিন্তার আলোকে "এক বিশ্ব, একটি পরিবার" ধারণাটি "মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের কমিউনিটি গঠন করার" ধারণায় বিকশিত হয়েছে এবং সৃজনশীল রূপান্তর হয়েছে, "প্রতিটি জাতি, দেশ ও প্রতিটি মানুষের ভবিষ্যত ও ভাগ্য ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। আমাদের উচিত একসাথে থাকা, এবং একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ গ্রহ গড়তে একটি সম্প্রীতিময় পরিবার গড়ে তোলার চেষ্টা করা। পাশাপাশি, সব দেশের মানুষের উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে পরিণত করা উচিত।

চীন ও ভারত উভয়ই দীর্ঘ ইতিহাস ও দুর্দান্ত সংস্কৃতির একটি প্রাচীন সভ্যতা। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাস সভ্যতার মধ্যে বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষার একটি দৃষ্টান্ত। প্রায় দুই হাজার বছর আগে, ভারতীয় সন্ন্যাসী কাশ্যপমাতাঙ্গ এবং ধর্মরত্ন সাদা ঘোড়ায় ধর্মগ্রন্থ নিয়ে চীনে এসেছিলেন। পূর্ব দিকে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রসারের সূচনা করেছিলেন। ফাহিয়ান, হিউয়ানসাং এবং ইজিং-এর মতো চীনা বিশিষ্ট সন্ন্যাসীরা ধর্ম অনুসন্ধানে পশ্চিম দিকে ভ্রমণ করেছিলেন এবং বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ ক্লাসিক সংগ্রহ, অনুলিপি ও অনুবাদ করেছিলেন। প্রাচীন সিল্ক রোড বরাবর, চীনা কাগজ তৈরি, সিল্ক, চীনামাটির বাসন এবং চা ভারতে সম্প্রসারিত হয়েছিল এবং ভারতীয় গান ও নৃত্য, জ্যোতির্বিদ্যা, স্থাপত্য, মশলা ইত্যাদি চীনে প্রবেশ করেছিল। দুই সভ্যতার মধ্যে বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষা উভয় দেশে এবং বিশ্ব সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

১৯২৪ সালে, মহান ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৪৯ দিনের মধ্যে বেইজিং এবং শাংহাই-সহ সাতটি শহর পরিদর্শন করেন। তিনি চীনের রাজনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সাহিত্যিক বৃত্তের সঙ্গে বিস্তৃত আদান-প্রদান করেন এবং তরুণদের বাস্তব বিশ্ব, তাদের নিজস্ব দায়িত্ব, ন্যায়বিচার এবং শান্তির মুখোমুখি হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেন। পরে তিনি চীনা পণ্ডিত তান ইউনশানকে চীনা শিক্ষার প্রচারের জন্য যৌথভাবে "চীনাভবন" তৈরি করতে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানান। চলতি বছর চীন ও ভারতের মধ্যে আদান-প্রদান ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান স্মরণে শততম বার্ষিকীর ফটো প্রদর্শনীও আয়োজন করা হচ্ছে এবং সে সময়ের সুদূরপ্রসারী মানবিক যাত্রার কথা স্মরণ করা হচ্ছে।

চীন ও ভারত উভয়ই জনবহুল দেশ এবং বিশ্বের বৃহত্তম উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশ। উভয় দেশের উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল চীন-ভারত সম্পর্ক উভয় পক্ষের সাধারণ স্বার্থে এবং অঞ্চল ও বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্যও সহায়ক। গত বছর থেকে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ বজায় রয়েছে। ২০২৩ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায় এবং চীন আবারও ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। দুই দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত পরিপূরক এবং এর বিপুল উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, ‘চীন ও ভারত যখন এক সুরে কথা বলবে, তখন সারা বিশ্ব শুনবে; যখন চীন ও ভারত একসঙ্গে কাজ করবে, তখন গোটা বিশ্ব মনোযোগ দেবে। ‘সত্তর বছর আগে চীন ও ভারত তাদের সম্পর্কের মূল নির্দেশিকা হিসাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি’ ব্যবহার করে এবং তাকে সাধারণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নির্দেশনা হিসাবে মেনে নেয়। যা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কাছে স্বীকৃতি পায়। এ নীতি এশিয়া ও বিশ্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সুষ্ঠু বিকাশের প্রচারে দারুণ অবদান রেখেছে।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, দুটি দেশ "সহযোগী অংশীদার, প্রতিযোগী নয়"। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে, "চীন ও ভারত একে অপরকে উন্নয়নের সুযোগ দেবে এবং একে অপরের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না।" যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। চীন ভারতের সঙ্গে দুই দেশের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য বাস্তবায়ন করতে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির চেতনা এগিয়ে নিতে, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে, মতভেদগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে, পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতা উন্নত করতে, প্রধান প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের উপায় অন্বেষণ করতে এবং চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক।

পরিশেষে, তিনি বলেন যে, ভারতে চীনা রাষ্ট্রদূত হিসাবে, তিনি ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করা, ভারতের সব স্তরের বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করা, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাস বাড়ানো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা পুনরুদ্ধার করা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য চীন-ভারত সম্পর্কের সুস্থতা রক্ষায় অবদান রাখার চেষ্টা করবেন।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn