চীনে প্রবীণদের পরিষেবা দিচ্ছে ক্রমবর্ধমান যুব-কর্মী
চীনে প্রবীণদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অর্থনীতির উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে, চীনা সমাজ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বার্ধক্য সমাজ’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে, বয়স্কদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও তাদের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি চীনা সমাজে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিষয়টি বলতে গেলে প্রতিটি পরিবারের সাথে সম্পর্কিত।
২০২০ সাল থেকে চীনের বিভিন্ন এলাকার নার্সিং স্কুলেগুলোতে ‘প্রবীণদের যত্ন নেওয়া’-সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। টানা কয়েক বছর ধরে এ বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। চীনা যুবক-যুবতীরা এ বিষয়ে পড়াশোনায় ব্যাপক আগ্রহও প্রকাশ করছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনে প্রবীণদের জন্য পরিষেবাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং খাতে যুব-কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্পর্কে আলোচনা করব।
লিন হং সেন চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের কৃষি কারিগরি কলেজের শিক্ষক। তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর। তবে, প্রবীণদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ইতোমধ্যেই জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং ও প্রবীণদের যত্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি এবং স্নাতক হওয়ার পর বয়স্কদের দেখাশোনায় বাস্তব কর্ম-অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শুরু করেন। সম্প্রতি চীনের কুইচৌ প্রদেশের রাজধানী কুইইয়াং শহরে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন কারিগরি দক্ষতা প্রতিযোগিতায় প্রবীণদের যত্ন বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন লিন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরে আয়োজিত কারিগরি কর্মদক্ষতা প্রতিযোগিতায়, টানা ১২ ঘন্টার তুমুল প্রতিযোগিতার পর, শিক্ষক লিন প্রবীণদের যত্ন বিভাগে আরেকটি স্বর্ণপদক লাভ করেন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুভূতি স্মরণ করে লিন বলেন, বর্তমানে সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতার প্রধান প্রতিযোগীদের বয়স ৩০ বছরের চেয়ে কম। তাই বলা যায়, চীনে প্রবীণদের জন্য পরিষেবা-শিল্প দ্রুত উন্নত হয়েছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের শেষ দিকে চীনে ৬০ বছরেরও বেশি বয়সী প্রবীণের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২১.১ শতাংশে দাঁড়ায়। অন্যভাবে বললে, চীন ‘মাঝবয়সী সমাজ’ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ ১২টি সরকারি বিভাগ যৌথভাবে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে চীনে প্রবীণদের যত্নসংশ্লিষ্ট কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে প্রবীণদের যত্নসংশ্লিষ্ট পরিষেবায় দক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণব্যবস্থা জোরদার করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বস্তুত, চীনে প্রবীণদের যত্ন পরিষেবা শিল্পের যাত্রা ১০ বছর আগে। চীনা সমাজের বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা বিবেচনা করে, প্রবীণদের আরও ভালো যত্ন পরিষেবা দিতে সক্ষম এই শিল্প। তবে, সমাজের দ্রুত উন্নয়ন আর প্রবীণদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে, সংশ্লিষ্ট পরিষেবার চাহিদাও বাড়ছে এবং এতে বৈচিত্র্যও আসছে। তাই, প্রবীণদের যত্ন পরিষেবায় দক্ষ ব্যক্তিদের কাজের মানও উন্নত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে শানতুং নারী কলেজ আর শাংহাই প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণদের যত্ন পরিষেবার মেজর কোর্স চালু হয় এবং একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণদের যত্ন পরিষেবা বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্নাতক ডিগ্রি পাবে এবং তাঁদের কর্মজীবন শুরু হবে।
চীনের কুইচৌ প্রদেশের ছিয়ানতুংনান মিয়াও আর তুং জাতির অধ্যুষিত এলাকার রংচিয়াং জেলা দরিদ্র ছিল। স্থানীয় যুবক-যুবতীদের অধিকাংশই অন্য শহরে গিয়ে চাকরি নিত। ফলে, সেখানকার প্রবীণদের বাসায় একা একা জীবন কাটাতে হতো। তবে, ধীরে ধীরে স্থানীয় প্রবীণদের যত্নে পরিষেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এখানে প্রবীণদের নার্সিং, যত্ন নেওয়া ও চিকিত্সাসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হয়। এখানে বিভিন্ন চিকিত্সা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়; চিকিত্সকরা আন্তরিকভাবে প্রবীণদের দেখা-শোনা করেন।
বর্তমানে, স্থানীয় প্রবীণদের পরিষেবাকেন্দ্রে মোট ৪৫ জন প্রবীণ রয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা তেমন একটা ভালো না। অনেকে নিজের যত্ন নিতে পারেন না। তাই, পেশাদার চিকিত্সক ও নার্সিং কর্মীরা তাদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যরেকর্ড তৈরি করেছেন। বিস্তারিতভাবে প্রত্যেক প্রবীণের শারীরিক অবস্থা জেনে নেওয়া এর লক্ষ্য। এ পরিষেবাকেন্দ্রের নার্সিং বিভাগের প্রধান চেং সিয়ং লি বলেন, বর্তমানে তাদের পেশাদার কর্মীর সংখ্যা ৫৫ জন। ২৬ বছর বয়সী চেং সিয়ং লি ২০২০ সালে স্নাতক হওয়ার পর থেকে এখানে কাজ করা শুরু করেন। তিনি প্রবীণদের পরিষেবা ও যত্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রবীণদের ভালো করে দেখাশোনা ও যত্নে প্রতিবছর তিনি দুই থেকে তিনবার পেশাদার প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন। প্রশিক্ষণের বিষয় বয়স্কদের খাবার, শরীর পরিষ্কার, বিনোদন ও পুনর্বাসন, ইত্যাদি। প্রশিক্ষণ গ্রহণের কারণে তাঁর নার্সিং-দক্ষতা অনেক উন্নত হয়েছে এবং পরিষেবাকেন্দ্রের প্রবীণরা তাঁকে বেশ পছন্দ করেন।
নিজের কাজ সম্পর্কে চেং বলেন, বয়স্কদের যত্ন নেওয়া এবং তাদের দেখাশোনার বিষয় এখন চীনা সমাজে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বয়স্কদের পরিষেবা শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগও দ্রুত বাড়ছে।
২০২০ সালে কাওখাও পরীক্ষায় পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রবীণদের যত্ন নেওয়া’ বিষয়টিকে পড়াশোনার মেজর হিসেবে বেছে নেন শিক্ষার্থী লিউ চিয়া ইয়ুন। তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্সে প্রথমবারের মতো এমন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে, তিনি শাংহাই প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন এবং টানা ৪ বছর পড়াশোনা ও ইন্টারশিপ করার পর, শাংহাই মহানগরের প্রবীণদের পরিসেবা পরিষদে চাকরি পান।
চীনে ক্রমবর্ধমান প্রবীণদের স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায়, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স্কদের দেখাশোনা ও যত্ন নেওয়ার বিষয় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শাংহাই প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও শাংতং নারী একাডেমি, চীনে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন বিভাগ চালু করে। দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বয়স্কদের পরিষেবা ও যত্ন নেওয়া বিষয়ে মোট ১০০ জন অনার্স শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
চলিত বছরের জুলাই মাসে এসব শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি পাবেন। তাঁরা চীনা প্রবীণদের পরিষেবা ও যত্ন নেওয়ায় কী কী ভুমিকা পালন করবেন? এ বিষয়ে ছাত্রী লিউ চিয়া ইয়ুন বলেন, প্রবীণদের দেখাশোনা বিষয়ের পড়াশোনা ধীরে ধীরে চালু হয়। সর্বপ্রথমে তাদেরকে চীনের প্রবীণদের যত্ন নেওয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। তারপর, সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও পেনশন সংস্থার পরিচালনাপদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় পড়ানা হয়।
‘চিকিত্সা ও দীর্ঘকালীন নার্সিং বীমা’ অনার্স কোর্সের মধ্যে একটি বিষয়। এটি ছাত্রী লিউ’র মনে গভীর দাগ কেটেছে। কারণ, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে শাংহাই মহানগরে ‘চিকিত্সা ও দীর্ঘকালীন নার্সিং বীমা’ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। পরে, সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও ব্যবস্থা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। এর মানে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে সংশ্লিষ্ট বিষয় পড়ার পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও ব্যবস্থা গড়ার কাজেও অংশ নেয়। শিক্ষকরা চীনের বিভিন্ন প্রদেশের অবস্থা ও পেশাদার গবেষণার ফলাফল সংগ্রহ করে, ছাত্রছাত্রীদের পড়ান এবং শাংহাই মহানগরের সংশ্লিষ্ট বীমার জরিপ প্রকল্পে অংশ নেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
তা ছাড়া, বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারশিপের সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করেন। যেমন, শাংহাই মহানগরের বিভিন্ন পেনশন সংস্থায় মৌলিক নার্সিং কাজ করা এবং ধীরে ধীরে নার্সিং ব্যবস্থাপনার কাজের দায়িত্ব পালন করা, ইত্যাদি। ছাত্রী লিউ একটি বেসরকারি পেনশন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেয়েছেন। শুরুর দিকে তার দৃষ্টিতে এ প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম ছিল উন্নত এবং প্রবীণদের বসবাস এলাকাও আরামদায়ক। তবে, ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন যে, প্রবীণদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন চাহিদা মেটানো আরও জরুরি।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ছাত্রী লিউ চিয়া ইয়ুন দুটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান। একটি হল আবাসিক কমিউনিটির বহুমুখী পরিষেবা কেন্দ্র এবং আরেকটি হল প্রবীণদের খাবার পরিষেবার প্রতিষ্ঠান। দুটি ভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাওয়া সম্পর্কে লিউ বলেন, তাঁর পড়াশোনার বিষয় অনেকের কাছে অপরিচিত মনে হতে পারে, তবে এটি আকর্ষণীয়। এখানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।
শাংহাই মহানগরের প্রবীণদের পরিষেবাকেন্দ্রে কাজ করার মাধ্যমে, এ প্রতিষ্ঠানের অধীন সহস্রাধিক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে ছাত্রী লিউ এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পণ্ডিতদের পেশাদার পরামর্শ ও জরিপ থেকে উঠে আসা তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কেও জানতে পারে। এতে, শাংহাই মহানগরের প্রবীণদের পরিষেবা শিল্পের উন্নয়নের প্রবণতাও অনুভব করা যায়।
চলতি বছরের মার্চ মাসে শাংহাই প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণদের পরিষেবা বিভাগের কর্মসংস্থান ও ইন্টার্নশিপ নিয়ে সেমিনার আয়োজিত হয়। চীনের সুবিখ্যাত বীমা কোম্পানি থাইখাং শাংহাই শাখা কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মাও চিয়া চিয়ে এতে বলেন, শাংহাইয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণদের দেখাশোনা বিষয়ে অনার্স শিক্ষার্থীদের স্নাতক হওয়ার খবর জানতে পারেন তিনি। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদেরকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে আগ্রহী। এ সেমিনারের মাধ্যমে, যারা এ বিভাগে পড়াশোনা করছে, তাঁরাও নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা পেতে পারে। তাই এটি বেশ ভালো উদ্যোগ।
জানা গেছে, শাংহাই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণদের দেখাশোনা বিষয়ে ৩২ জন অনার্স শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে বয়স্কদের যত্ন নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি পড়তে আবেদন করেছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চাকরি করবেন বলে ঠিক করেছেন।
অন্যদিকে, শাংতুং নারী একাডেমির ৬৪ জন অনার্স শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ বয়স্কদের যত্নসংশ্লিষ্ট চাকরি করবেন। মে মাসের শুরুতে একাডেমির চাকরি মেলায় ৩৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট হয়। তাঁরা মোট ৪০০টিরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে। এটি স্নাতক শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
শাংহাই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লুও চুয়ান বলেন, ২০১০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স্কদের যত্নসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জরিপকাজ শুরু হয়। এর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ চালু হযেছে। পাবলিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোতে, তিন ধরনের দক্ষ ব্যক্তির প্রশিক্ষণ প্রয়োজন: বয়স্কদের যত্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আবাসিক কমিউনিটিতে প্রবীণদের যত্ন পরিকল্পনাকারী, এবং বয়স্কদের ব্যক্তিগত যত্নের পরামর্শক।
তা ছাড়া, দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণে দক্ষ শিক্ষক প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা প্রশাসন, চীনা ঐতিহ্যিক চিকিত্সা, নার্সিং, পুষ্টিকর খাবারসহ বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িত পেশাদার পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের যৌথ প্রয়াসে, বয়স্কদের যত্নে দক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। চীনের অবস্থা বিবেচনা করার সাথে সাথে, শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা দিতে হবে। যেমন, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতা করা যেতে পারে। চীনা শিক্ষার্থীরা এসব দেশের বয়স্ক যত্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পেলে, নিজেদের কর্মদক্ষতা আরও উন্নত করতে পারে। তা ছাড়া, বয়স্কদের যত্নে নার্সিং কর্মীদের শিল্পকলা, স্বাস্থ্য রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। কারণ, বয়স্কদের যত্ন নেওয়া মানে শুধু তাদের শারীরিক অবস্থা, খাওয়া বা থাকার ওপর নজর রাখা নয়, বরং তাদের মানসিক অবস্থা ও আত্মার চাহিদা মেটানোও বটে।
অনেক বয়স্ক লোক নিজের যত্ন নিতে পারেন। তখন তাঁরা শিল্পকলা, ক্যালিগ্রাফি, হস্তকর্মশিল্প ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবীণদের জন্য নির্ধারিত ক্লাসে ভর্তি হতে পারেন। সংশ্লিষ্ট পেনশন প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ক্লাস চালু করাও জরুরি।
চীনা সমাজে বয়স্কদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে, বয়স্কদের জন্য পরিষেবা শিল্প ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে বয়স্কদের যত্নে আরও বিস্তারিত সেবা থাকবে, বয়স্কদের শিক্ষা, পর্যটন, চিকিত্সা বীমা, আর্থ-বাণিজ্যিক সেবা, আবাসিক এলাকার উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষ ব্যক্তির প্রয়োজনও বাড়বে।