‘’রবীন্দ্রনাথ এবং আমাদের গল্প‘’——পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লালভবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সফরের শততম বার্ষিকী স্মরণানুষ্ঠান
এক’শ বছর আগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চীন সফরের সময় পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লালভবনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দুটি চমত্কার ভাষণ দিয়েছিলেন। এক’শ বছর পরে, ৭ মে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লালভবনে এই মহান কবিকে স্মরণ করার জন্য ‘রবীন্দ্রনাথ এবং আমাদের গল্প-লালভবন থেকে ইয়ানইউয়ান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লালভবন এখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রারম্ভিক বিপ্লবী কার্যক্রমের মেমোরিয়াল হল হিসেবে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীন সফরের শততম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘জাগরণ যুগ’ অধ্যয়ন ভ্রমণ এবং ২০২৪ পিকিং ইউনিভার্সিটি লালভবন একাডেমিক মৌসুমে ‘নতুন সংস্কৃতি আন্দোলন’ সংক্রান্ত বক্তৃতার ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এর একটি অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় পার্টি স্কুলের সাহিত্য ও ইতিহাস শিক্ষাদান ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাবলী’ চীনা ভাষার সংস্করণের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক তোং ইউচেন, এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ভাষা ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের এশিয়া ও আফ্রিকা বিভাগের অধ্যাপক ওয়েই লিমিংকে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। অধ্যাপক ওয়েই লিমিং ‘আইডিয়াল চায়না-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখে চীন’ বইয়ের লেখক এবং তিনি এই অনুষ্ঠানের মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক তোং ইউচেন হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনার অনুবাদক, রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ এবং বাংলা সাহিত্যের অনুবাদক। তিনি ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর বেঙ্গলি স্টাডিজের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৮০ বছর বয়সে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’র চীনা সংস্করণ (৩৩ খণ্ড) সম্পাদনা কাজের প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠান চলাকালীন, তিনি ‘ঠাকুরের গুণী ব্যক্তিত্ব’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা দেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহান প্রেমের চেতনা এবং গুণী ব্যক্তিত্বের একজন মহান কবি ছিলেন। তিনি চীনকে ভালোবাসতেন এবং চীনা জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে সমর্থন করতেন। ঠাকুরের চিন্তাধারা এই আধুনিককালেও চীনের তরুণদের অনুপ্রাণিত করে।
অধ্যাপক ওয়েই লিমিং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কিত কোর্সের উপর তার শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের নাটক অনুশীলনের জন্য পুরো ইয়ানইউয়ান ক্যাম্পাসকে একটি বড় মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তার নির্দেশনায় পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্রনাথের ‘বসন্ত’ ও ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ এবং অন্যান্য নাটক পরিবেশন করেন, যার মাধ্যমে আরো বেশি মানুষ রবীন্দ্রনাথের নাটকের জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি ‘রবীন্দ্রনাথ পরিচিতি’ ক্লাসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে তাদের বোঝাপড়া বিনিময় করতে বলেছিলেন।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন রবীন্দ্র কবিতার অনুবাদক ওয়াং সিন কাং। যদিও তিনি আর্থিক শিল্পে কাজ করেন, কবিতার প্রতি তার ভালোবাসার কারণে, তিনি তার অবসর সময়ে ‘দ্য বার্ডস’সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইংরেজি কবিতার চারটি সংকলন সম্পূর্ণরূপে অনুবাদ করেছেন। তার অনুবাদটি মার্জিত এবং সুরেলা, বিশুদ্ধ শৈল্পিক ধারণার সাথে ছন্দের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি যে কবিতা সংকলনটি অনুবাদ করেছেন তা ২০১৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ২৮ বার পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, পাঠকরা অনুবাদটিকে কতটা স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং ভালোবাসেন।
অনুষ্ঠানে, অধ্যাপক তোং ইউচেন, অধ্যাপক ওয়েই লিমিং এবং অনুবাদক ওয়াং সিন কাং যথাক্রমে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রারম্ভিক বিপ্লবী কার্যক্রমের লালভবন মেমোরিয়াল হলে তাদের বইগুলো উপহার দেন। মেমোরিয়ার হলের পরিচালক ইয়াং চিয়া ই উপহারের বইগুলো গ্রহণ করে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি উপহার বইগুলো মেমোরিয়াল হলে সংরক্ষণ করবেন।