ফান জং ইয়ানের সংস্কার: নমনীয়তা দীর্ঘস্থায়িত্বের প্রতীক
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, সং রাজবংশের পণ্ডিত-আমলা ও সাহিত্যিকরা সংস্কৃতি ও শিক্ষার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে থাকেন। প্রথম সং রাজবংশের শান্তিপূর্ণ এক দশকে, পণ্ডিত-আমলারা একটি দল হিসাবে, ধীরে ধীরে সচেতনভাবে বৈশ্বিক দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার চেতনা ধারণা পোষণ করতে শুরু করেন। তাঁরা তত্কালীন সমাজের খারাপ অবস্থঅর পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছিলেন এবং কনফুসিয়াসবাদের আদর্শ রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। এই চেতনা অনেকের কাছে ছিল অস্পষ্ট। তবে এটি শুধুমাত্র ফান জং ইয়ানের কাছে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছিল। ঐতিহাসিক নথি অনুসারে, ফান জং ইয়ান প্রায়শই বিশ্ব নিয়ে আলোচনা করার সময় নিজের কথা বা স্বার্থকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দিতেন। পণ্ডিত-আমলারা তার চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্মান ও সততাকে ধারণ করতে শিখেছিলেন। “বিশ্বের উদ্বেগ নিয়ে প্রথমে চিন্তা করতে হবে এবং পরে বিশ্বের সুখের আনন্দ ভাগাভাগি করা যেতে পারে“—ফান জং ইয়ানের এই বিখ্যাত বাণীতে সেই সময়ের সাধারণ পণ্ডিতদের হৃদয়ের কথা প্রতিফলিত হয়। ফান জং ইয়ান হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বোত্তমভাবে জ্ঞান ও কর্মের মধ্যে ঐক্যের জন্য কাজ করেছিলেন।
সং রেনজংও বুঝতে পেরেছিলেন যে, পরিবর্তন করতে হবে। তাই তিনি ফান জং ইয়ান ও অন্যদের একটি সংস্কার পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দেন। ফান জং ইয়ান দশ-দফা প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথমত, সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদচ্যুতি সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করতে হবে; দ্বিতীয়ত, কর্মকর্তাদের বংশধরদের তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন না-করেই সরকারি পদে উত্তরাধিকারী হতে বাধা দিতে হবে; তৃতীয়ত, সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষায় ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও কৌশল যাচাই করতে হবে প্রতিভা বিকাশের জন্য স্কুল তৈরি করতে হবে; চতুর্থত, কর্মকর্তা নির্বাচন করার সময় রাজনৈতিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে যোগ্যতা অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে এবং যারা অযোগ্য তাদের অপসারণ করতে হবে; পঞ্চমত, সরকারি জমির সমবণ্টন নিশ্চিত করতে হবে, কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি দিতে হবে, যাতে তারা নিজেদের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট আয় করতে পারেন; ষষ্ঠ ও দশম দফা ছিল কৃষি শক্তিশালী করা এবং কৃষকদের বাধ্যতামূলক শ্রম কমানো তথা কৃষি উত্পাদনে গুরুত্ব দেওয়া এবং মানুষের বোঝা কমানো, যাতে সে সময়ের সামাজিক দ্বন্দ্বগুলো দূর করা যায়; আট ও নয় নম্বর প্রস্তাব ছিল বিশ্বস্ততার চর্চা করতে হবে, কারণ আদেশ পালন আইনের শাসনের জন্য অপরিহার্য, আদেশ অবশ্যই মানতে হবে।