বাংলা

শি পো এবং সম্প্রীতি ও সহযোগিতা

CMGPublished: 2023-10-13 16:56:14
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

শি পো পশ্চিম চৌ রাজবংশের একজন বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি জ্ঞানী ও ইতিহাসে সুপণ্ডিত ছিলেন। চেং-এর রাজা হুয়ান ছিলেন চেং-এর প্রতিষ্ঠাতা-রাজা। তিনি চৌ রাজবংশের রাজা ইয়ৌ-এর শাসনামলে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। চৌ ইয়ৌ রাজার শাসনামলে, তিনি তার দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে পালন করেছিলেন এবং পশ্চিম চৌ রাজ্যের মানুষের হৃদয় ও মন জয় করেছিলেন।

সেই সময় চৌ ইয়ৌ রাজা ক্ষমতায় ছিলেন। দেশের পতন দেখে চেং হুয়ান কুং চিন্তিত হয়ে শি পো-কে প্রশ্ন করেন: "চৌ রাজবংশের কি পতন হবে?" শি পো উত্তর দিয়েছিলেন, "এর অবশ্যই পতন হবে।"

শি পো দেশের শাসননীদি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, চৌ-এর রাজা সম্প্রীতির আইন অনুসারে দেশ পরিচালনা করেননি, যা অনিবার্যভাবে চৌ রাজবংশকে পতনের দিকে নিয়ে যাবে। শি পো তার নিজস্ব ধারণা প্রমাণ করতে "শাংশু" গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: "মানুষ যা চায়, তা অনুসরণ করতে হবে।" এখন চৌ-এর রাজা গুণী লোকদের ত্যাগ করেছেন এবং বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক খলনায়কদের পছন্দ করেছেন; তিনি জ্ঞানী ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ থেকে দূরে গেছেন এবং মূর্খ ও ঘৃণ্য লোকদের কাছে গেছেন; নিজের মতামতের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সঠিক মতামতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং নিজের মতামতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভুল মতামত গ্রহণ করেছেন; সম্প্রীতি পরিত্যাগ করেছেন এবং ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছেন।

শি পো উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের সমস্ত জিনিসই মূলত “বৈচিত্র্যের সম্প্রীতি থেকে জন্মায়, একই রকম হলে আর টিকে থাকে না।" এর মানে, সমস্ত জিনিস সম্প্রীতি থেকে জন্মগ্রহণ করে এবং এগুলো কখরনই এক হবে না। বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয় ও ভারসাম্যকে সম্প্রীতি বলা হয়। শুধুমাত্র সম্প্রীতিই পারে সব কিছুকে সমৃদ্ধ, উন্নত ও ঐক্যবদ্ধ করতে।

শি পো বিশ্বাস করেন যে, সম্প্রীতি হল একটি সহনশীল অবস্থা। শেষ পর্যন্ত সমস্ত ভিন্ন জিনিসের সহাবস্থান দরকার। শুধুমাত্র একটি শব্দ শোনা অর্থহীন, শুধুমাত্র একটি রঙ যথেষ্ট নয় এবং শুধুমাত্র একটি স্বাদ গ্রহণ করলে তাকে সুস্বাদু বলা যায় না। কারণ, শুধুমাত্র একটি জিনিস থাকলে তাকে অন্যকিছুর সাথে তুলনা করা যায় না। তাই সম্প্রীতি প্রথমে বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে। শি পো পূর্ববর্তী রাজাদের উদাহরণ টেনে বলেন, পূর্ববর্তী রাজারা প্রথমে বিদেশী নারীদের রাণী হিসেবে বিয়ে করতেন, তারপর সারা বিশ্ব থেকে ধন-সম্পদ সংগ্রহ করতেন। যারা সরাসরি ভালো ও সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন, তাদের সরকারি কর্মকর্তা বানাতেন।

তখনকার রাজারা ভিন্নতার মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করতেন, তাই দেশ সুশাসিত ছিল এবং রাজা নিজেই শান্তিতে তার সিংহাসন ভোগ করতে পারতেন। কিন্তু চৌ ইয়ৌ রাজা সম্প্রীতির নিয়ম পরিত্যাগ করে সব জিনিস একই রকমের বানাতে চেয়েছিলেন। তাই, শি পো জোর দিয়ে বলেন, চৌ রাজবংশ তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যেম শি পো একজন মহান রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বক্তা ছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৭৭১ সালে, চৌ ইয়ৌ রাজা নিহত হন, পশ্চিম চৌ রাজবংশের অবসান ঘটে।

আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানে, চীন অন্যান্য দেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্প্রীতিময় সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। তার পাশাপাশি নিজস্ব স্বাধীনতার উপর জোর দেয় এবং অন্যান্য দেশের সাথে অন্ধভাবে একমত হয় না। শি পো-র "সম্প্রীতি" তত্ত্বের "সম্প্রীতি অথবা অভিন্নতা" নিয়ে তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কনফুসিয়াস বলেছেন, “শিষ্টাচারের ব্যবহারের সময়, সম্প্রীতি সবচেয়ে মূল্যবান। প্রাচীন রাজারা এ নিয়ম অনুসরণ করতেন, এটাই সবচেয়ে সুন্দর।" এখানে "সম্প্রীতি"-এর মধ্যে “বৈচিত্র্য” ইতোমধ্যে অন্তর্নিহিত করা হয়েছে। তার লক্ষ্য হল ভিন্নতা পাশে রেখে অভিন্নতা অনুসন্ধান করা, পার্থক্যকে সম্মান করা এবং সুরেলা সহাবস্থান বাস্তবায়নের নীতি ও নিয়ম মেনে চলা। তা হল অনেক কিছুর সুশৃঙ্খল বিকাশের সংমিশ্রণ।

সম্প্রীতির মূল্যবোধ প্রাচীন চীনের দেশগুলির মধ্যে আদান-প্রদান পরিচালনায় প্রতিফলিত হয়, যা সুরেলা সহাবস্থানের মডেল তৈরি করে। তাই, প্রাচীন চীনারা "সদ গুণাবলী লালন করার মাধ্যমে বিশ্বকে জয় করা", "বিশ্বাস ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা" এবং "শক্তির মাধ্যমে সংঘর্ষ বন্ধ করা"-র মতো কূটনৈতিক চিন্তাভাবনার উপর জোর দিয়েছিলেন। তখনকার দেশগুলো প্রায়শই মৈত্রীর জোট, বিবাহ, উপহার বিনিময় এবং সীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ জোরদার করতো।

"সম্প্রীতি ও সহযোগিতা"-র প্রাচীন কূটনৈতিক চিন্তাধারা আজ চীনের কূটনৈতিক দর্শনকে প্রভাবিত করেছে। অভ্যন্তরীণভাবে, সম্প্রীতি হল চীনের ৫৬টি জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি এবং সুরেলা সহাবস্থান; বাহ্যিকভাবে, চীন সক্রিয়ভাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উত্থানকে সমর্থন করে। অন্য দেশগুলোর নিজস্ব পথ অনুসারে বিকাশকে চীন সমর্থন করে। পাশাপাশি চীন সাধারণ স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় এবং দ্বন্দ্বকে কমানোর নীতি অনুসরণ করে। এটি বর্তমান শৃঙ্খলাকে নতুন করে উদ্ভাবন করে না, বরং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে আরও গণতান্ত্রিক, ন্যায্য, ন্যায়ভিত্তিক করে।

প্রাচীন চীনের "এক বিশ্ব, এক পরিবার", নতুন চীনের "শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি", "দুটি রূপান্তর" এবং সি চিন পিংয়ের নতুন যুগে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক কূটনৈতিক ব্যবস্থা পর্যন্ত, বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়কালে, চীন তার জাতীয় পরিস্থিতি ও জনমতের উপর ভিত্তি করে, তার কূটনৈতিক ধারণা ও ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও উন্নত করেছে। "সম্প্রীতি ও সহযোগিতা"-র ধারণা থেকে চীন কখনও সরে আসেনি। (ইয়াং/আলিম/ছাই)a

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn