বাংলা

"মেনসিয়াস" ও চীনের প্রতিবেশী-কূটনীতির ধারণা

CMGPublished: 2023-09-22 15:42:39
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

গত পর্বে, আমরা "তরমুজ ক্ষেতে জল দিয়ে প্রতিবেশীর উপকার করা" শীর্ষক গল্পটি বলেছি। লিয়াং রাজ্যের "সদাচরণের মাধ্যমে অভিযোগ করার" পদ্ধতি ছু রাজাকে মুগ্ধ করেছিল এবং লিয়াং ও ছু-এর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। বিপরীতে, আমরা যদি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে যোগাযোগ না করি এবং সমস্যার সমাধান না করি, বরং একে অপরের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণ করতে থাকি, একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে থাকি, তাহলে অভিযোগের মাত্রা আরও গভীর হবে এবং শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে।

ইতিহাসে, "তরমুজের ক্ষেতে জল দিয়ে প্রতিবেশীর উপকার করার" গল্পকে প্রায়শই "দুই নারীর গাছের পাতার জন্য লড়াই"-এর সাথে তুলনা করা হয়। এ গল্প “শি চি” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। গল্পে বসন্ত ও শরতের সময়কালে, ছু রাজ্য এবং উ রাজ্যের দুই নারীর মধ্যে সীমান্তে তুঁত গাছের পাতা নিয়ে বিরোধ হয়েছিল, যা দুই পরিবারকে একে অপরকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তোলে এবং অবশেষে দুই দেশের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত ঘটে। ছু রাজ্য উ রাজ্যের সীমান্তের শহরগুলো ধ্বংস করে এবং উ-র রাজা ছু রাজ্যের দুটি শহর দখল করে। এ দুটি গল্পে প্রথম দিকে ছোটখাটো আকারের দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু বিভিন্ন মোকাবিলার পদ্ধতির কারণে, শেষ পর্যন্ত দুটি ভিন্ন পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। আগেরটি দুটি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বয়ে আনে, কিন্তু পরেরটি যুদ্ধের কারণ হয়।

"মেনসিয়াস” গ্রন্থে একটি গল্প লিপিবদ্ধ আছে: ছি-এর রাজা শুয়ান মেনসিয়াসকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রাখার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। মেনসিয়াস উত্তর দিলেন: শুধুমাত্র একজন সদগুণসম্পন্ন রাজা থাকলে একটি বড় দেশ একটি ছোট দেশকে সেবা করতে পারে। তাই শাং থাং রাজা গে বোকে সেবা করেছিলেন। চৌ ওয়েন রাজা খুনইকে সেবা করেছিলেন। শুধুমাত্র একজন জ্ঞানী রাজা থাকলে একটি ছোট দেশ একটি বড় দেশকে সেবা করতে পারেন। তাই চৌ থাই রাজা মাওওয়ান উপজাতির সেবা করেছিলেন এবং ইউয়ে রাজা কৌচিয়ান উ রাজা ফুছাই’কে সেবা করেছিলেন। যারা বড় দেশ হিসেবে ছোট দেশকে সেবা করে তারাই ভাগ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয়; যারা ছোট দেশ হিসেবে বড় দেশকে সেবা করে তারাই ভাগ্যকে ভয় পায়। যারা ভাগ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয় তারা পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে, আর যারা ভাগ্যকে ভয় করে তারা নিজের রাজ্যকে রক্ষা করতে পারে।

একটি স্থিতিশীল পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দেশের শান্তিপূর্ণ উত্থান এবং জাতির মহান পুনর্জাগরণের অপরিহার্য শর্ত। চীন ও প্রতিবেশী দেশগুলো ভৌগোলিকভাবে সংলগ্ন, সাংস্কৃতিকভাবে কাছাকাছি, এবং ঐতিহাসিকভাবে একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ। ইতিহাসে তাদের একে অপরের সাথে যোগাযোগ এবং বিনিময়ের সম্পর্ক ছিল এবং সাম্প্রতিক কালেও তাদের একে অপরকে সাহায্য করার ইতিহাস রয়েছে এবং বর্তমানে তাদের সাধারণ পুনরুজ্জীবনের অভিন্ন স্বপ্ন রয়েছে। চীন সবসময় প্রতিবেশী দেশগুলোকে তার কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রথম স্থানে রেখেছে। আস্থা বজায় রাখা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং প্রতিবেশীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আদানপ্রদান সবার জন্যই কল্যাণকর। একটি দেশ তার প্রতিবেশীকে বেছে নিতে পারে না। কিন্তু তার প্রতিবেশীদের সাথে কিভাবে সম্পর্ক রাখবে, তা ঠিক করতে পারে। প্রতিবেশীদের সাথে ভালো থাকা, তাদের অংশীদার হওয়া এবং তাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা হল সবচেয়ে বুদ্ধিমান পদ্ধতি।

প্রাচীন চীনারা বিশ্বাস করত যে, সঠিক উপায়ে কাজ করলে সফল হওয়া যাবে এবং সদয় হলে প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক ভালো হবে। "মেনসিয়াস" গ্রন্থে মেনসিয়াস এবং বাই গুইয়ের মধ্যে একটি কথোপকথন স্পষ্টভাবে প্রতিবেশীদের সাথে আচরণের ব্যাপারে চীনা জনগণের মনোভাব প্রদর্শন করে। বাই গুই যুদ্ধরত আমলে ওয়েই রাজ্যের একজন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ নির্মাণে দক্ষ ছিলেন এবং মনে করতেন যে, তিনি তা ইউ’য়ের চেয়ে আরও ভালোভাবে করতে পারেন। মেনসিয়াস কঠোরভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, বাই গুইয়ের বন্যা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ছিল দুর্যোগকে প্রতিবেশী দেশের দিকে ঠেলে দেওয়া, শুধুমাত্র নিজের দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। এটি একটি নির্দয় কাজ, যা আন্তর্জাতিক নৈতিকতা লঙ্ঘন করেছিল।

আজ, চীন তার প্রতিবেশী-কূটনীতিতে "সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, পারস্পরিক উপকারিতা এবং সহনশীলতা" ধারণার পক্ষে। সৌহার্দ্য হওয়ার অর্থ বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হওয়া, একে অপরকে সাহায্য করা; সমতাকে সম্মান করা; ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করা এবং একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা; হৃদয়গ্রাহী কাজ বেশি বেশি করা। আন্তরিকতা মানে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আন্তরিকতার সাথে আচরণ করা এবং বন্ধু ও অংশীদারদের মন জয় করা। পারস্পরিক উপকারিতা মানে পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা করা, অভিন্ন স্বার্থের একটি ঘনিষ্ঠ নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং উভয় পক্ষের স্বার্থের একীকরণকে উচ্চ স্তরে উন্নীত করা, যাতে প্রতিবেশী দেশগুলো চীনের উন্নয়ন থেকে উপকৃত হতে পারে, এবং চীনও প্রতিবেশী দেশগুলোর উন্নয়ন থেকে উপকৃত হওয়া। সহনশীলতার অর্থ হল সহনশীলতার ধারণাকে প্রচার করা। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল যথেষ্ট বড় যেখানে সকলের সাধারণ উন্নয়নের জায়গা রয়েছে। আরও উন্মুক্ত মন ও আরও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রচার করা।

চীন সবসময়ই ভালো, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ প্রতিবেশীর কথা বলে আসছে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমান আচরণের কথা বলে আসছে, এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক কল্যাণের সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তা ধারণাকে সমর্থন করে আসছে। চীনের ১৪টি ভূমিসংলগ্ন প্রতিবেশী রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২টির সাথে স্থল সীমান্ত সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। দ্বীপের সার্বভৌমত্ব এবং সামুদ্রিক অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বিরোধ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের সমস্যার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য প্রয়াস ও সহযোগিতা চালাতেও চীন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn