বাংলা

বেইজিং অ্যারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্স বিশ্ববিদ্যালয় তথা বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সু তোং লিনের গল্প

CMGPublished: 2023-08-28 17:00:14
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

গত সপ্তাহে আমরা বেইজিং ইয়ুইং মাধ্যমিক স্কুলের প্রেসিডেন্ট তথা ২০২৩ সালের সেরা শিক্ষকদের একজন হিসেবে মনোনীত বেইজিংয়ের ইয়ু হুই সিয়াংয়ের গল্প তুলে ধরেছি। আজকের অনুষ্ঠানে আরেকজন সেরা শিক্ষকের কথা বলব। তিনি হলেন বেইজিং অ্যারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্স বিশ্ববিদ্যালয় তথা বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সু তোং লিন।

বেইজিং অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিক্স ইউনিভার্সিটি চীনের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। চীনের মহাশূন্য ও নভোযান গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। শিক্ষক সু তোং লিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের শিক্ষক এবং চীনের প্রকৌশল একাডেমির শিক্ষাবিদ।

বর্তমানে তিনি চীনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিকসংক্রান্ত প্রধান পরীক্ষাগারের পরিচালক। চীনের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি ২০২২ সালে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের মশাল বহনসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৩০ বছর ধরে তিনি মনোযোগ দিয়ে ক্লাসরুমের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক জ্ঞান বিতরণ করেছেন। তাঁর প্রশিক্ষিত ছাত্রছাত্রীরা চীনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক গবেষণা খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিকর্মী ও গবেষকে পরিণত হয়েছে।

অধ্যাপক সু’র মেজর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক গবেষণা। তাই, গত ৩০ বছর ধরে তিনি অনার্স শিক্ষার্থীদের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তত্ত্বসহ বিভিন্ন বিষয় শেখাচ্ছেন। শেখানোর পাশাপাশি চীনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক গবেষণায় দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উত্তরাধিকারে দেশপ্রমের প্রমাণ রাখেন।

যদিও তিনি একজন সিনিয়ার শিক্ষক, তবে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে তিনি ব্যাপক আগ্রহী। তিনি সবসময় নতুন পদ্ধতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয় পড়াতে চেষ্টা করেন। যখন ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেন, তখন শিক্ষক সু অনেক গম্ভীর থাকেন; তিনি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রচেষ্টা চালান। শিক্ষার্থীদের আত্মউন্নয়নের প্রতি তিনি অধিক নজর দেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা উন্নত করার প্রয়াস চালান। তাঁর উদ্ভাবনী শিক্ষাপদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খুবই প্রিয়।

সু’র দৃষ্টিতে শিক্ষকের দায়িত্ব কেবল ছাত্রছাত্রীদের কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়া নয়, বরং তাদের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডে গবেষণায় উত্সাহিত করা ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনুপ্রাণিত করা শিক্ষকের দায়িত্ব। তিনি সবসময় তরুণ শিক্ষকদের বলেন, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডে শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। অধ্যাপক সু সবসময় ক্লাসে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র ও জ্ঞানের যৌক্তিক বিশ্লেষণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের চিন্তা-গবেষণা করতে উত্সাহিত করেন।

ডাইভারজেন্স সূত্র ব্যাখ্যা করার সময় তিনি বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন এবং জটিল সমস্যার মোকাবিলার ক্ষেত্রে উপযুক্ত মডেল বেছে নেন। জটিল সমস্যা মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্লেষণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। শিক্ষার্থীরা তাঁর সহায়তা ও পরামর্শে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ডেরিভেশন প্রক্রিয়াও বুঝতে সক্ষম হয়, যা তাদের অনুসন্ধান ও গবেষণার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক।

ক্লাসের ত্বাত্তিক জ্ঞান ও সে জ্ঞানের অনুশীলনের ওপর গুরুত্ব দেন অধ্যাপক সু। তিনি শাস্ত্রীয় পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা, পরীক্ষা ও প্রকৌশল ইস্যুর ভিত্তিতে ‘শিক্ষার নমূনা’ তৈরি করেন। শিক্ষকদের নিয়মিত জ্ঞানচর্চা ও নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট থাকা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

নিয়মিত পড়াশোনার বাইরেও যাদের আগ্রহ আছে, তেমন শিক্ষার্থীদের তিনি গবেষণায় অংশ নিতে উত্সাহ দেন। এভাবে তাঁরা সংশ্লিষ্ট জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করার কৌশলও শিখতে পারে। মৌলিক তত্ত্ব, সেরা গবেষণার নমুনা, ও ভালো শিক্ষদের সমন্বয়ে তিনি অনার্স, মাস্টার্স ও ডক্টরেট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করে থাকেন। তিনি গবেষণা ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা সৃজনশীল প্রস্তাব ও চিন্তাধারা সংগ্রহ করে।

আন্তর্জাতিক সেমিনারের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে শিক্ষার্থীদের উত্সাহ দেন তিনি, যাতে মধ্যে তাদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থনে ৩১তম আন্তর্জাতিক রেডিও বিজ্ঞান কংগ্রেস ইউনিয়নের যুব বিজ্ঞানীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণী অনুষ্ঠান বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের কয়েক ডজন স্নাতক শিক্ষার্থী এ অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে। এ কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশের অতিথিদের সাথে দেখা করার সুযোগ পায় এবং পেশাদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা লাভ করে। তাদের মাধ্যমে আধুনিক চীনাদের আত্মা প্রতিফলিত হয়েছে। অধ্যাপক সু অনার্স শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সামঞ্জস্য উন্নত প্রযুক্তির’ বিশেষ ক্লাস চালু করেছেন। তিনি ২০২৩ সালে বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষক’ পুরস্কার লাভ করেছেন।

অধ্যাপক সু’র দৃষ্টিতে দেশের চাহিদা মেটানো, আন্তর্জাতিক উন্নত প্রযুক্তির আলোকে দক্ষ ব্যক্তি গড়ে তোলা, এবং শিক্ষার্থীদেরকে চরিত্র ও কর্মদক্ষতার চর্চা করতে শেখানো তাঁর দায়িত্ব। দেশপ্রেমসমৃদ্ধ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় যুব শিক্ষার্থীরা কেবল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক গবেষণায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে তা নয়, বরং দেশের উন্নয়নে তাঁদের অবদান রাখতেও তাঁরা এখন আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী। প্রাণবন্ত যুব গবেষকদলের প্রশিক্ষণ বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সিনিয়র গবেষক জুনিয়ার গবেষকদের সহায়তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তত্ত্ব কোর্সের ৭ জন যুব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

চীনা সমাজকে আরও বেশি সেবা দিতে অধ্যাপক সুও ব্যাপক প্রয়াস চালিয়েছেন। চীনের ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা, এবং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে চীনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পরিবেশ প্রভাবিত প্রযুক্তি উদ্ভাবন কৌশল ইউনিয়ন তাঁর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের চাহিদা মেটাতে সংশ্লিষ্ট শিল্প, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রয়োগের সম্পদ সংগ্রহ করা হয়েছে। এভাবে চীনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শিল্পের প্রতিযোগিতা-দক্ষতা উন্নত হয়েছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn