বাংলা

"ছিন মু কংয়ের তিন ন্যায়বিচারের" গল্প

CMGPublished: 2023-08-19 18:56:54
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

আগের অনুষ্ঠানে, আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে চিন ওয়েন কংয়ের "৪৫ কিলোমিটার পিছনে সরে যাওয়ার’ গল্প বলেছি। আজ আমরা ছিন মু কংয়ের তিন বার ন্যায়পরায়ণতার জন্য কাজ করে, চিন হুই কং এবং চিন রাজ্যের জনগণকে সহায়তা দেওয়ার গল্প বলবো। এতে আপনারা চীনের "বিশ্বস্ততা ও ন্যায়বিচারের ধারণা" আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

বসন্ত ও শরতের সময়কালে, উত্পাদনের সরঞ্জাম ও সামাজিক উত্পাদনশীলতার পশ্চাদপদতার কারণে, কৃষি উন্নয়ন খুব পিছিয়ে ছিল, এবং মানুষের জীবন অনেকাংশেই নির্ভর করতো আবহাওয়ার ওপর। তাই যখনই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটতো তখনই মানুষের জীবন অস্থিতিশীল হয়ে উঠতো। বিশেষজ্ঞদের পরিসংখ্যান অনুসারে, বসন্ত ও শরত্কালে গড়ে প্রতি তিন বছরে একবার বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটতো; বন্যা, খরা, কীটপতঙ্গ, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ—ইত্যাদি হানা দিয়েছিল মোট ১৯০ বার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়, বেশিরভাগ দেশেরই অন্য দেশের সহায়তা প্রয়োজন হতো। জাতীয় স্বার্থ বা নৈতিকতার কারণে দেশগুলো তখন একে অপরকে সাহায্য করতো।

চিন শিয়ান কংয়ের মৃত্যুর পর (চিন হুই কংয়ের পিতা), নির্বাসনে থাকা চিন হুই কং সিংহাসনে আরোহণের জন্য ছিন রাজার সাথে একটি জোট স্থাপন করেন এবং চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি যদি দেশে ফিরে যেতে পারেন, তাহলে তিনি চিনহ্য পশ্চিমের আটটি শহর ছিন রাজ্যকে দান করবেন। ছিন রাজা সম্মত হন, এবং তার মন্ত্রী পাইলিশি’কে তার সৈন্যদের নেতৃত্ব দিতে পাঠান। কিন্তু চিন হুই কং তার দেশে ফিরে এসে সিংহাসনে আরোহণের পর তার শপথ লঙ্ঘন করেন এবং আটটি শহর ছিনকে হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন।

খ্রিস্টপূর্ব ৬৪৭ সালের শীতকালে, চিন রাজ্য দুর্ভিক্ষের শিকার হয় এবং ছিন রাজ্য থেকে খাদ্য কেনার জন্য অনুরোধ করে। ছিন মু কং তার মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করেন, জানতে চান চিন-এর অনুরোধ রাখবেন কি না। মন্ত্রীরা বিভক্ত রায় দেন। কেউ বলেন যে, চিন রাষ্ট্র কেবল অন্যের কাছ থেকে সহায়তা চায়, কিন্তু বিনিময়ে প্রতিদান দেয় না, তাই একসময় জনগণ চিন রাজা থেকে দূরে চলে যাবে। একটি দেশের জনগণ যখন রাজা থেকে দূরে চলে যায়, তখন সেনাবাহিনী পাঠিয়ে আক্রমণ করলে অবশ্যই জয়ী হওয়া যাবে। জনগণের সমর্থনহীন রাজা দুর্বল। মন্ত্রী পাইলিশি বলেন: "প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে-কোনো দেশের ওপরে আঘাত হানতে পারে। দুর্যোগ-কবলিত প্রতিবেশী দেশকে সাহায্য করা ও প্রতিবেশীদেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতি দেখানো নৈতিকতার দাবি। একটি দেশ নৈতিকতার ভিত্তিতে কাজ করলে আশীর্বাদ পাবে।” ছিন মু কং ছিলেন একজন জ্ঞানী শাসক, যিনি দেশকে দানশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে শাসন করতেন। গভীর বিবেচনা করার পরে, ছিন মু কং এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেন যে, চিন-এর রাজা অনৈতিক হলেও, চিন-এর জনগণ নির্দোষ। তাই তিনি খাদ্যপূর্ণ অনেকগুলো জাহাজ পাঠান এবং চিন’কে দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে সাহায্য করেন।

২৬০০ বছর আগে পরিবহনব্যবস্থা অত্যন্ত অনুন্নত ছিল। ছিন রাজ্যের জাহাজগুলোকে হলুদ নদীতে পৌঁছানোর জন্য ওয়েই নদীর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, তারপরে জলের বিপরীতে উত্তর দিকে যেতে হয়েছিল এবং তারপরে পরিবহনের জন্য ফেন নদীতে প্রবেশ করতে হয়েছিল। এটি বসন্ত ও শরতের সময়কালে দেশগুলোর মধ্যে দুর্যোগকালে সহযোগিতার একটি মডেল।

কিন্তু চিন হুই কং ছিনের সাহায্য গ্রহণ করার পর, তিনি আবার ছিন-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। "জুও চুয়ান" গ্রন্থে রেকর্ড আছে যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৬৪৬ সালের শীতকালে, ছিন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং চিন রাজ্যের কাছ থেকে খাদ্য কেনার অনুরোধ করে ছিন রাজ্য। চিন হুই কং এ বিষয়ে মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করেন। ছিনের কাছে শস্য বিক্রি করবেন কি না তা নিয়ে দরবারীদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছিল: সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে, চিন হুই কং ছিনের সহায়তায় সিংহাসনে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু পরে ছিন’কে জমি দেওয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করেন। কিন্তু চিনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ছিন অতীতের কথা বিবেচনা না করে চিনের কাছে খাদ্য বিক্রি করে। তাই এখন যেহেতু ছিন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে, অবশ্যই তাদের সহায়তা দেওয়া উচিত। আর বিরোধীরা বলেন, ঈশ্বর এবার চিনকে ছিন রাজ্য ধ্বংস করার সুযোগ দিয়েছে, তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিন রাজ্য আক্রমণ করা উচিত।

শেষ পর্যন্ত, চিন হুই কং ছিনকে খাবার সহায়তা দেননি, এবং ছিন রাজ্য আক্রমণ করতে শুরু করেন। ছিন রাজা ও মন্ত্রীরা জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন এবং ছিন রাজা নিজেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের সময়, ছিন সেনাবাহিনীর মনোবল উচ্চ ছিল, কিন্তু চিন সেনাবাহিনীর সৈন্যদের কোনো যুদ্ধের মনোবল ছিল না। চিন হুই কংয়ের গাড়িটি কাদায় আটকে যায়, কিন্তু কেউ তাকে উদ্ধার করেনি। শেষ পর্যন্ত, চিন হুই কং ছিনের বন্দী হন।

শাসকরা যদি উদারতা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে শাসনকাজ পরিচালনা করেন, তাহলে তিনি শুধু নিজের দেশে নয়, বরং অন্য দেশের জনগণের সমর্থনও পেতে পারেন। দানশীলতা ও পুণ্য বিভিন্ন দেশকে একে অপরের কাছাকাছি এনে দিতে পারে। ভালো কাজ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আন্তর্জাতিক বিনিময়ে বিশ্বস্ততা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখলে, আন্তর্জাতিক নৈতিকতা ও অন্যান্য দেশের বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে উপেক্ষা করলে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে; যা অন্যদের ক্ষতি করবে এবং নিজের উপকার করবে না।

বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ছিন রাজ্য দুর্যোগের সময় ত্রাণ-কূটনীতি চালাতে দ্বিধা করেনি, সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এবং জনগণের কাছ থেকে আরও সমর্থন অর্জন করেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যার কারণে ছিন রাজ্য একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn