বাংলা

স্প্যানিশ বাস্তুবিজ্ঞানী খাং মুসা: চীনা বন্ধুদের সঙ্গে মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থানের পথ অন্বেষণ করেন

CMGPublished: 2023-04-12 16:35:54
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

খাং মুসা স্পেনের একজন বাস্তুবিজ্ঞানী। ২০০৬ সালে, তিনি গবেষণা করার জন্য প্রথমবারের মতো চীনের ইউননানের শিশুয়াংবান্নায় আসেন। ১৪ বছর পর যখন তিনি আবার এখানে আসেন, তিনি এখানকার পরিবর্তনগুলির কারণে গভীরভাবে আকৃষ্ট হন এবং তখন থেকে এখানেই থাকছেন। ঠিক কি কি বিষয় তাকে আকর্ষণ করেছিল? এ বছর চীন ও স্পেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। আসুন স্প্যানিশ বন্ধু খাং মুসার গল্প শুনি।

এটি ইউননান প্রদেশের শিশুয়াংবান্না প্রিফেকচারের চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সের ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন। সারা বছরই গাছ-গাছালি আর সবুজ ঘাসে ভরপুর থাকে বোটানিক্যাল গার্ডেন। তিন বছর ধরে, খাং মুসা এখানে বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীর বৈচিত্র্য ও সুরক্ষা গবেষণা গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে কাজ করছেন, গবেষণা ও শিক্ষাদানে নিযুক্ত রয়েছেন তিনি। যা তিনি ভালবাসেন। তিনি বলেন,

“আমি খুব সাধারণ জীবনযাপন করি, খুব সকালে উঠে অফিসে যাই। আমি ঠিক বোটানিক্যাল গার্ডেনে বাস করি এবং আমার প্রতিদিনের যাতায়াত খুবই আনন্দদায়ক, আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আমার অফিসে হেঁটে বা বাইক চালিয়ে যাওয়া যায়। পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গাতেই আপনাকে প্রকৃতিতে বাস করার সুযোগ দেবে না। একই সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য এখানে অনেক সুবিধা রয়েছে।”

আসলে প্রফেসর খাং মুসা এর আগেও চীনে এসেছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি চীন ও ইউননানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। সে সময়, তিনি তার ডক্টরেট থিসিস সম্পূর্ণ করতে শিশুয়াংবান্না আসেন। দশ বছর আগের তুলনায় এখানকার পরিবর্তন তাকে অবাক করেছে। তিনি বলেন,

“আমি যখন প্রথম এখানে আসি, তখন গবেষণা কেন্দ্রটি অনেক ছোট ছিল, যেখানে গবেষণার সুবিধা, গবেষণাগার এবং অবকাঠামো অনেক কম ছিল। বর্তমান গবেষণা ক্ষমতা, গবেষক, এবং গবেষণা তহবিল অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ গবেষক এসেছেন। তারা ভাল শিক্ষিত, তারা সাবলীল ইংরেজি বলতে পারে, যা আমার তুলনায়ও ভাল। তারা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত। এটি চীনের জন্য খুবই ইতিবাচক, কারণ তরুণরা ভবিষ্যতে দেশের সাথে নিজেদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য প্রস্তুত।”

খাং মুসার গবেষণার দিক হল বড় প্রাণীদের আচরণ, বাস্তুসংস্থান এবং মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক। ২০২১ সালে, ইউননানে এশিয়ান হাতি দলের উত্তরাঞ্চলে যাওয়া এবং দক্ষিণে ফিরে আসার ঘটনা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। সে সময়, ১৭টি এশীয় বন্য হাতি শিশুয়াংবান্না ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকে পড়ে যেখানে খাং মুসা কাজ করতেন। তিনি সংকটের স্থানীয় পরিচালনা ব্যবস্থাও প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

“স্থানীয় জনগণের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম দেখে আমি দারুণভাবে মুগ্ধ হয়েছি। পাঁচ সপ্তাহ এখানে হাতি ছিল, যা বিরাট সংকট ছিল। বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রায় ১৪ হাজার ধরনের মূল্যবান গাছপালা রয়েছে এবং আমাদের এখানেও অনেক পর্যটক, ছাত্র ও কর্মী আছে। তাই সেই সময় এটা খুবই বিপজ্জনক ছিল, কিন্তু সবাই দ্রুত ও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়েছিল। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও বোটানিক্যাল গার্ডেনে দুই দিনের মধ্যে ঘের তৈরি করা হয়। আমরা এই হাতিগুলিকে ২০৪৭বার পর্যবেক্ষণ করেছি, বেশ কয়েকটি গবেষণাদল, সময়, সম্পদ, ড্রোন-সহ, হাতিদের পিছু হটতে ও অনুসরণ করার জন্য কাজ করেছে। এরপর, আমরা বন্য হাতিদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে উঠি।”

খাং মুসা বিশ্বাস করেন যে, বন্য হাতি রক্ষার ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন,

“চীন সরকার হাতিদের রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি, খুব শক্তিশালী মানবিক, প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক ইনপুট দিয়েছে। ফলস্বরূপ, অন্যান্য অঞ্চলের হাতির তুলনায় এখানে গড়ে প্রতিটি হাতির পেছনে বেশি অর্থ, আরও দক্ষতা এবং আরও প্রযুক্তি বিনিয়োগ করা হয়। সুতরাং এর অর্থ এই যে, চীন যদি এই সম্পদগুলিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করে, তাহলে একবিংশ শতাব্দীতে হাতির সাথে সহাবস্থানের উপায় খুঁজে বের করা বেশ সম্ভব।”

এ বছর চীনে খাং মুসার তৃতীয় বছর। শিশুয়াংবান্নার অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানবিক বৈশিষ্ট্য তিনি খুব উপভোগ করছেন। তিনি বিশেষ করে এখানকার জাতিগত সংখ্যালঘু সংস্কৃতি অনেক পছন্দ করেন এবং স্থানীয় ‘দাই’ প্রতিবেশীদের এবং তাদের বিভিন্ন খাবারের সাথে গভীর সংযোগ স্থাপন করেছেন। গত বছর বসন্ত উত্সব চলাকালীন, খাং মুসা স্থানীয় দাই গ্রামে নববর্ষ উদযাপন করেছিলেন। সেখানকার উষ্ণ ও দয়ালু লোকেরা তাকে স্নেহময় স্মৃতি উপহার দিয়েছে। তিনি বলেন,

“চীনা খাবার সত্যিই সুস্বাদু। আমি বিশেষ করে দাই খাবার পছন্দ করি। আমাদের ভাল খাবার আছে এবং লোকেরা খুব উষ্ণ, খুব বন্ধুত্বপূর্ণ, খুব অতিথিপরায়ণ। আমি একটি দাই গ্রামে থাকি, এবং আমি আমার দাই প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সব ধরনের সুস্বাদু খাবার এবং ফল কিনতে পারি। বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকেদের সাথে সবসময় যোগাযোগ করতে পারাটাও আমার কাছে খুব আকর্ষণীয়।”

খাং মুসার জন্য, চীনে কাজ করা এবং সুখী ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বেশ ভালো। তিনি আশা করেন যে আগামী ৮ থেকে ১০ বছরে, আরও চীনা শিক্ষার্থীরা বাস্তুবিদ্যা অধ্যয়নে আত্মনিয়োগ করবে এবং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থানের পথ বাস্তবায়নে তার সাথে কাজ করবে। তিনি বলেন,

“আমি এখানে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বছর থাকার আশা করি, যাতে আমরা কয়েক প্রজন্মের ছাত্রদের শেখাতে পারি এবং স্বল্পমেয়াদী ফলাফলের পরিবর্তে আমাদের কাজ থেকে কিছু দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল লাভ করি। এই অধ্যয়নের প্রয়োজনীয় সময়কাল ৮ থেকে ১০ বছর। যখন গবেষণা জমা হয়, দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দেখা যায়। ভবিষ্যতে, তা শুধু চীনে গবেষণাই উন্নত করবে না, বরং সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে যৌথভাবে পরিবেশগত গবেষণার প্রচার চালাতে সাহায্য করবে।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn