বাংলা

"শি চি" থেকে চীনের "বংশ ও দেশ এক" চিন্তাধারার উত্স খুঁজে পাওয়া

CMGPublished: 2023-03-10 20:53:11
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

"শি চি" তথা “মহান ইতিহাসবিদদের লিপি সংকলণ” হল চীনের প্রথম জীবনীসংক্রান্ত সাধারণ ইতিহাস, যা চব্বিশটি ইতিহাস বই-এর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। লেখক হলেন সিমা ছিয়ান, পশ্চিম হান রাজবংশের একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, লেখক এবং চিন্তাবিদ। পুরো বইটি "বেন চি" (সম্রাটদের জীবনী), "পিয়াও" (বার্ষিক রেকর্ড করতে এবং ঐতিহাসিক সময়ের সীমানা ভাগ করতে ব্যবহৃত হয়), "শু" (বিশেষ বিষয়গুলো, যেমন আইন ও প্রবিধান, জ্যোতির্বিদ্যা, ভুগোল রেকর্ড, ইত‍্যাদি), "শি চিয়া" (রাজকুমারদের জীবনী), এবং "লিয়ে চুয়ান" (মন্ত্রী থেকে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধি)—এই পাঁচটি ভাগ নিয়ে গঠিত। এতে হুয়াং সম্রাট থেকে হান রাজবংশের সম্রাট উ পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

"শি চি" থাং ইউ, শিয়া, ইয়িন, চৌ, ছিন এবং হান রাজবংশের প্রায় ৩০০০ বছরের ইতিহাস রেকর্ড করেছে। "শি চি" পড়লে মনে হয় চীনের তিন হাজার বছরের ইতিহাসের বিভিন্ন সুবিখ‍্যাত ব‍্যক্তি চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে আমরা শুন এবং ইউ সম্রাটের গুণাবলী দেখতে পারি; ইউয়ের রাজা কৌচিয়ানের কাছ থেকে সহনশীলতা শিখতে পারি; কনফুসিয়াসের দেশের বাড়িতে ঋষিদের সম্মান জানাতে পারি; মিলুও নদীর তীরে ছুই ইউয়ানের দেশ-প্রেমের অনুভূতি অনুভব করতে পারি; উচিয়াং নদীর তীরে শিয়াং ইউ-এর বীরত্বের কথা মনে রাখতে পারি এবং তার পরাজয়ের কারণ পর্যবেক্ষণ করতে পারি।

"শি চি"-এর ১৩০টি অধ্যায়ের প্রথমটি হল "পাঁচ সম্রাটের পেনচি" এবং এতে লেখা প্রথমটি হল হুয়াং সম্রাটের ওপর। সিমা ছিয়ান শুধুমাত্র "শি চি"-এ হুয়াং সম্রাটের মাধ্যমে চীনা জাতির উত্স সন্ধান করেননি, "হুন জাতির জীবনী", "তুংইউয়ে জাতির জীবনী", "নানইউয়ে জাতির জীবনী" লিখে প্রথম জাতীয় ইতিহাসের জীবনীও তৈরি করেছেন। এতে তিনি সমস্ত জাতিগোষ্ঠীগুলোকে হুয়াং সম্রাটের বংশধর হিসাবে গণ্য করেছেন। তার ঐতিহাসিক ধারণার মূল হল “পার্থক্য বজায় রাখার ভিত্তিতে সম্প্রীতি অর্জন, নিজ নিজ ভিন্ন সৌন্দর্য দিয়ে বৈচিত্র্য সৃষ্টি”। আর এটাই হল চীনের সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য, সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তির ধারণার উত্স।

কেন "শি চি" হুয়াং সম্রাট দিয়ে শুরু হয়েছে? কারণ, তিনি নিজের রাজবংশ ও দেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ইয়ান এবং হুয়াং-এর বংশধরদের কাছে "বংশ এবং দেশ এক"—এই চিন্তাধারা রেখে গিয়েছিলেন। হলুদ সম্রাটের "নৈতিকতা গড়ে তোলা এবং সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা", "সকল মানুষকে সাহায্য করা, চার দিক রক্ষা করা", এবং "নিজ ভূখণ্ড ঘুরে দেখা" পরবর্তী রাজাদের দেশ পরিচালনার নীতিমালাকে প্রভাবিত করেছে। সম্রাট ইয়াও সিংহাসনকে নিজের সন্তাদের কাছে নয়, বরং দক্ষ ও যোগ্য মানুষের হাতে দিয়ে গেছেন। “পৃথিবী সর্বজনীন” এবং “জ্ঞানীরা দেশ শাসন করবে”-এই ধারণার উত্সব এখানেই। সম্রাট শুন-এর “পরিবারের প্রতি আনুগত্য এবং দেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা" শীর্ষক নৈতিকতার শিক্ষা বা নিয়ম "শি চি"-র মৌলিক নীতি।

সম্রাট,মন্ত্রী,প্রতিভাবানপণ্ডিতএবংসুন্দরীথেকেশুরুকরেঘাতক,রেঞ্জার,পাচারকারীপর্যন্ততাঁরলেখাথেকেবাদপড়েনি।তিনিলিখেছেন,“究天人之际,通古今之变,成一家之言”অর্থাত,প্রাকৃতিকঘটনাএবংমানবসমাজেরমধ্যেসম্পর্কঅধ্যয়ন,এবংঅতীতথেকেবর্তমানইতিহাসেরপরিবর্তনেরপ্রবণতাবুঝেনিজেরমতামতগড়েতোলা।চীনেরএইপ্রথমজীবনীমূলকসাধারণইতিহাসতৈরিরউদ্দেশ্যেতিনিশুধুমাত্রবিভিন্নব্যক্তিদেরজীবনীতৈরীকরেননি,ইতিহাসেরসরলবস্তুবাদীদৃষ্টিভঙ্গিথেকে“যামন্দতালুকিয়েনা-রাখা,যাঅসন্দরতাসুন্দরকরেবর্ণনানা-করা”-রদৃষ্টিভঙ্গিরেখেগেছেনপরবর্তীইতিহাসবিদদেরজন্য।

সিমা ছিয়ান "শি চি"-র ভূমিকায় নিজেই স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছেন যে, "শি চি" বইটি "ছুন ছিউ" ইতিহাস বই অনুসরণ করে রচিত হয়। এটি মানব নৈতিকতার একটি পাঠ্যপুস্তক, যা সমগ্র সমাজের প্রত্যেককে পড়তে হবে। "শি চি" পড়ার পরে, পুরো সমাজের লোকেরা জানবে কীভাবে আচরণ করতে হবে এবং কীভাবে কাজ করতে হবে, নিজের কী কী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সমাজকে কীভাবে সুরেলা করতে হবে।

“从善如流,施惠不倦”যারঅর্থহল,প্রবাহিতজলেরমতোদ্রুতএবংস্বাভাবিকভাবেসঠিকমতামতশোনাএবংভালোউদ্দেশ্যমূলকপরামর্শগ্রহণকরাএবংঅব্যাহতভাবেঅন্যকেঅনুগ্রহকরেযাওয়াউচিত।

“高山仰止,景行行止,虽不能至,然心向往之”এরঅর্থএইযে,চরিত্রএবংপ্রতিভাউচ্চপর্বতেরমতো,এবংসত্যকথাওআচরণচওড়াসড়কেরমতো,মানুষস্বাভাবিকভাবেইতাঅনুসরণকরতেচায়।যদিওআমিএমনঅবস্থায়পৌঁছাতেপারিনি,তবুওআমিআমারহৃদয়েরপ্রচেষ্টারলক্ষ্যকেজানি।

“仓廪实而知礼节,衣食足而知荣辱”এরঅর্থহল,মানুষেরখামারেযথেষ্টশস্যথাকলেশিষ্টাচারতারবিবেচনায়আসবেএবংপর্যাপ্তখাদ্যওপোশাকথাকলেমানুষতখনসম্মানওঅপমানেরপ্রতিমনোযোগদেবে।

“桃李不言,下自成蹊”এরঅর্থহলযে,পীচগাছএবংবরইগাছসক্রিয়ভাবেমানুষকেআকর্ষণকরেনা,তবেলোকেরাতাদেরফুলদেখতে,ফলতুলতেগাছেরনীচেঅজান্তেইআসেএবংএগাছগুলোরনিচেপথহয়।এটিএকটিরূপক,যাদেরমহতনৈতিকগুণআছেতারাস্বাভাবিকভাবেইমানুষেরকাছেসম্মানিতওপ্রশংসিতহবে।

“人固有一死,或重于泰山,或轻于鸿毛”এরঅর্থহল,সবমানুষএকদিনমারাযায়,কিন্তুকিছুলোকেরমৃত্যুথাইপাহাড়েরচেয়েওভারীএবংকিছুলোকেরমৃত্যুপালকেরচেয়েহালকা।

“大行不顾细谨,大礼不辞小让”যারমানে,আপনিযদিবড়কাজকরতেচান,তবেছোটব্যাপারনিয়েভাববেননা।যারাবড়শিষ্টাচারপালনকরেন,তারাছোটসৌজন্যবিবেচনাকরবেননা।

"আপনি মহান নিয়মকানুন জানতে চাইলে তবে আপনাকে প্রথমে ইতিহাস সম্পর্কে শিখতে হবে।" ইতিহাস জানলে সাফল্য বা ব্যর্থতার কারণ বোঝা যায়, লাভ-ক্ষতি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা যায় এবং সত্য-মিথ্যা বোঝা যায়। এই নিরন্তর পরিবর্তনশীল যুগে, শুধুমাত্র ক্লাসিক এবং ইতিহাসের বইয়েই আমরা জাতির মূল ও আত্মা খুঁজে পেতে পারি এবং নিরন্তর পরিবেশে একটি স্বাধীন চেতনা গড়ে তুলতে পারি।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn