বাংলা

সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদন এবং চীনের তরুণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী

CMGPublished: 2022-11-07 16:24:31
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র বিংশ জাতীয় কংগ্রেস আয়োজিত হয়। টানা এক সপ্তাহের কংগ্রেসে চীনের সমাজ উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে সিপিসি’র সদস্য ও প্রতিনিধিরা ব্যাপকভাবে আলোচনা করেন। বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের পর প্রকাশিত সিপিসি’র প্রতিবেদনও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে কিছু বিষয় চীনা যুবসমাজের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের তরুণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গত ১০ বছরের আত্মউন্নয়ন ও পরিবর্তনবিষয়ক কিছু গল্প শেয়ার করবো।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে চীনা যুবকদের স্বপ্ন নিয়ে পরিশ্রমের সাথে কাজ করা এবং সাহসের সাথে নব্যতাপ্রবর্তন করার উত্সাহ দিয়েছেন। তাঁর বিভিন্ন আশাবাদ ও আন্তরিক কামনা চীনা যুবকদের জন্য অনেক উত্সাহব্যঞ্জক ব্যাপার। তারা মনে করে, সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে চীনা যুবকদের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সুন্দর জীবনের চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে চীনের সার্বিক গণতান্ত্রিক আধুনিকায়নে যুবসমাজের আরও বেশি অবদান রাখার লক্ষ্যমাত্রাও পেশ করা হয়েছে। নতুন যুগের চীনা যুবকরা এ শ্রেষ্ঠ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখার ব্যাপারেও আশাবাদী।

আসলে গত ১০ বছরে চীনের ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটেছে। সিপিসি’র নেতৃত্ব ও সকল চীনাদের যৌথ প্রয়াসের ফল এই উন্নয়ন। এ উন্নয়ন চীনা জাতির জন্য মাইলফলক তাত্পর্য বহন করে।

২০২০ সালে কোভিড মহামারী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। একই বছরে চীন হতদারিদ্র্যমুক্তও হয়। ইয়ুননান প্রদেশের ৯টি চরম দরিদ্র জেলাও তখন দারিদ্র্যমুক্ত হয়। লানপিং জেলা এ ৯টি জেলার মধ্যে একটি। চীনের পিপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা একাডেমির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী চাও থিয়ান ইয়াং স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক হিসেবে এ জেলায় কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা স্মরণ করে চাও বলেন, গত ১০ বছরে স্থানীয় শিক্ষা-ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। স্কুলের অবকাঠামো নতুন করে সাজানো হয়েছে, বহুমুখী মিডিয়া সরঞ্জামও আজকাল ব্যবহার করা হয়, বাধ্যতামূলক শিক্ষা থেকে এখন আর কোনো শিক্ষার্থী বঞ্চিত নেই।

চীনের কুইচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিজ্ঞান একাডেমির প্রধান ছেন ছাও বহু বছর ধরে স্থানীয় কৃষকদের পশুপালনের মান উন্নতে করতে কাজ করেছেন। তিনি পাহাড়াঞ্চলে পরিবর্তনের স্বাক্ষী। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, হাজার বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে, আমাদের এ প্রজন্মের যুবকরা মহান বিপ্লব ও সংস্কার দেখেছি এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি সুন্দর কাহিনী আমরা যৌথভাবে রচনা করতে পারবো।

সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে রাজনীতি, অর্থনীতি, মতাদর্শ ও প্রকৃতিসহ বিভিন্ন খাতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে দেশ। এসময় যথাযথভাবে জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় চেষ্টা করে গেছে চীন সরকার। এ সম্পর্কে চীনের কুয়াংতুং চোংশান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট শিক্ষার্থী চাং সিয়ান থাও বলেন, এটা শুনে আমরা খুব পুলকিত হয়েছি। কারণ, চীনের মহামারী প্রতিরোধ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যা আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। এর সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সক হিসেবে আমাদের কাঁধে দায়িত্বও অনেক ভারী আর গুরুত্বপূর্ণ।

সাফল্য অর্জন সহজ ব্যাপার নয়, তাই প্রত্যেকের উচিত বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া। সিপিসি’র সাফল্যের সারাংশ করা হয়েছে এবারের প্রতিবেদনে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ ও রাজনীতি কোর্সের যুব শিক্ষক তুং বিয়াও বলেন, নতুন যুগে চীনের অর্জিত সাফল্য সহজে পাওয়া যায়নি। এ প্রাপ্তির সাথে সঠিক চিন্তাধারার নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জাতীয় পুনরুত্থানের যাত্রায় আমাদেরকে সবসময় সঠিকভাবে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা অনুসরণ করতে হবে।

প্রতিবেদনে সিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন যে, দেশ ও জাতির উন্নয়নের মূল ভিত্তি, চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভাগ্য নিজেদের হাতে রাখতে হবে। সেই মন্তব্য চীনা বিজ্ঞানীদের জন্যও বেশ উত্সাহব্যাঞ্জক ব্যাপার।

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও মহাশূন্য বিজ্ঞান একাডেমির গবেষক, যুব শিক্ষক হাও জি হুয়া বলেন, মহাশূন্যের বিভিন্ন গবেষণায় আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাবো, যাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। স্বাধীন গবেষণার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি আয়ত্ব করতে হবে। আর এভাবেই উচ্চমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য অর্জন করা সম্ভব।

চিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী অনুসন্ধান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমির যুব অধ্যাপক মা কুও ছিং বলেন, সংগ্রামী পথ কখনো শেষ হয় না। আমি এবং আমার গবেষকদল আরো বেশি কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি অর্জনের ওপর মনোযোগ দেবো, যাতে এ খাতের নতুন অগ্রগতি অর্জনে দেশকে সাহায্য করতে পারি।

সমাজতান্ত্রিক শক্তিশালী দেশ গঠন এবং চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান একটি রিলে দৌড়ের মতো। কেবল দেশের নির্দেশনা ও চাহিদা বিবেচনা করে এ মহান আদর্শ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেটি ব্যাপক চীনা যুবকদের অভিন্ন আশাবাদ।

সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে যুবকদের কাজের ওপর অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সিপিসি’র বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব যুবকদের অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। প্রেসিডেন্ট সি সবসময় দেশের উন্নয়ন ও জাতীয় পুনরুত্থানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কথা বলেন। এটা চীনা যুবকদের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের যুবকদের প্রচেষ্টায় ২০৪৯ সালে চীনের সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়ন লক্ষ্যমাত্রা কেবল একটি কথা নয়, বরং বাস্তব দৃশ্যে পরিণত হবে।

আধুনিক চীনের যুবকদের জন্য দেশের উন্নয়নে তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের মঞ্চ অনেক বিস্তৃত হয়েছে, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও এখন উজ্জ্বল। বেইজিং নোর্মল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়োং কুও জিন বলেন, আমি একটি মহান যুগে বাস করছি। তাই আমার জানা জ্ঞান আর অর্জিত দক্ষতা দিয়ে ভালো করে শিক্ষকতার কাজ করবো। এভাবে আরো বেশি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীকে আমরা প্রশিক্ষণ দিতে পারি।

চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শিক্ষার্থী উ রি না বলেন, আমার মেজর জাতিতত্ত্ব। স্নাতক হওয়ার পর আমি জন্মস্থানের জনগণের সুখী জীবন বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালাবো। বিভিন্ন জাতির ঐক্য ও অগ্রগতিতে আমার অবদান রাখতে হবে।

ফুচিয়ান প্রদেশের মিনচিয়াং একাডেমির কাপড় ও শিল্পকলা একাডেমির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লান ইয়ু ইং বলেন, সমাজের প্রয়োজনীয় দক্ষ ব্যক্তি হতে হবে। এ নতুন যুগে দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য মঞ্চ বিস্তৃত। তাই আমরা অনেককিছু করতে পারি।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn