বাংলা

চীনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের নামতালিকা প্রকাশ

CMGPublished: 2022-10-03 17:36:06
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চলতি বছরের ১০ই সেপ্টেম্বর ছিল চীনের শিক্ষক দিবস এবং ঐতিহ্যিক মধ্য-শরত্ উত্সব। চীনাদের জন্য এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা জানি, শিক্ষক হচ্ছে আমাদের জীবনের খুবই প্রয়োজনীয় ব্যক্তি। সেরা শিক্ষকের সাহায্যে বাচ্চাদের সঠিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। বাচ্চারা তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ করে থাকে। শিক্ষকরা মানবজাতির উন্নয়নে অতুলনীয় ভুমিকা পালন করে থাকেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের বিভিন্ন স্কুলের সেরা শিক্ষকদের নামতালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রিস্কুল থেকে কারিগরি শিক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তালিকায় স্থান পেয়েছেন মোট ১২ জন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

চীনের চিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুন চেং ল্যু টানা ৪০ বছর ধরে শিক্ষকতার কাজ করে আসছেন। তাঁর রচিত ‘দার্শনিক তত্ত্ব’ গ্রন্থটি এ পর্যন্ত ১০ বার প্রিন্ট হয়েছে। এ বই চীনের উচ্চশিক্ষা খাতে অপরিহার্য পাঠ্যপুস্তকে পরিণত হয়েছে। শিক্ষক সুনের দৃষ্টিতে দার্শনিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার মেজর দর্শন এবং মার্ক্সবাদী দর্শনের গবেষণা ও সর্বজনীনতা আমার মূল কাজ।’ যদিও অধ্যাপক সুনের বয়স ৭০ বছরেরও বেশি, তবে তিনি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস নেন এবং সেরা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণে নিজের অবদান রেখে চলেছেন। কার্ল মার্ক্স তাঁর দৃষ্টান্ত। তিনিও মার্ক্সের মতো মানবজাতির উন্নয়নে নিজের অবদান রাখার চেষ্টা করেন।

সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক সুন টানা ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দর্শনের ক্লাস নিচ্ছেন এবং জুনিয়র শিক্ষক কুও সিয়াও ফাং নতুন পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক জ্ঞান বিতরণ করে আসছেন। চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরের একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে, কুও সিয়াও ফাং হুনান প্রদেশের অনলাইন ক্লাসের দায়িত্বশীল শিক্ষক। তিনি ছাত্রছাত্রীদের জন্য মোট ৬০০টিরও বেশি সাপোর্টিং পেপার রচনা করেছেন, যা হুনান প্রদেশের ২৮ হাজারেরও বেশি স্কুলে ব্যবহার করা হয়।

চীনের হারবিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াং শি এ্য-র বয়স ৯০ বছরের বেশি। বয়স্ক হলেও তিনি সবসময় ক্লাসে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ান। যখন তিনি ৯০তম জন্মদিন পালন করেন, তখন তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, যুব শিক্ষার্থীরা দেশের সমুদ্র কর্তব্যের জন্য আরো বেশি অবদান রাখবে। চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ কাং শাও চুং গত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে কৃষি খাতে কার্যকর জল প্রয়োগ নিয়ে গবেষণাকাজ শুরু করেন। চীনের বিভিন্ন খরাপ্রবণ এলাকায় কৃষির মৃত্তিকা ও জল প্রকৌশলের পরীক্ষাগার চালু করেন তিনি। চীনের জল গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। শিক্ষাবিদ থাংয়ের গবেষণায় চীনের কৃষি খাতের জল সাশ্রয় প্রযুক্তিতে বার্ষিক ১ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি সাশ্রয় হয়। উত্তর-পশ্চিম চীনের খরাপ্রবণ এলাকায় মরুদ্যান গঠন করা তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

চীনের চিয়াংসু প্রদেশের নানচিং শহরের পুখৌ এলাকার শিক্ষা গ্রুপের প্রেসিডেন্ট শিক্ষক ইয়াং রুই ছিং টানা ৪০ বছর ধরে তৃণমূলের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে অবদান রেখে আসছেন। তাঁর নিরলস প্রয়াসে সিংচি প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি গ্রামীণ প্রাথমিক স্কুল এখন আধুনিক শিক্ষা ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রিস্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের বাধ্যতামূলক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আনহুই প্রদেশের লুআন শহরের হুওছিউ জেলার মাধ্যমিক স্কুলের প্রেসিডেন্ট ইয়াং মিং শেংয়ের জন্মস্থান দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জায়গায়। তবে টানা ৩০ বছর ধরে তিনি, আকর্ষণীয় বেতনের অফার নাকচ করে, জন্মস্থানের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও নিজের শরীরের অবস্থা তেমন একটা ভালো না, ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি, তবে তিনি কখনও জন্মস্থান ত্যাগ করেননি। তাঁর অবদান ও সংগ্রাম স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

কানসু প্রদেশের চাংইয়ে শহরের সুনান জেলার মিংহুয়া স্কুলের শিক্ষক আন ওয়েন চুন গত ৩০ বছরে ৪টি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করেছেন। তিনি পশুপালন এলাকার বাচ্চাদের শিক্ষায় ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তাঁর সাহায্যে পশুপালন এলাকার বাচ্চাদের পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি হয়েছে, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়েছে। তিনি তাদের সুন্দরভাবে গড়ে ওঠার স্বার্থে বিভিন্ন কোর্স চালু করেন। চীনের সংখ্যালঘু জাতির বাচ্চাদের সার্বিক উন্নয়নে এটি ছিল ইতিবাচক ভুমিকা।

শাংহাই মহানগরের বিশেষ শিক্ষা স্কুলের প্রেসিডেন্ট, শিক্ষিকা চৌ মেই ছিন টানা ৩৫ বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিশুদের যত্ন নিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের দুঃখ ও সুখ তিনি আন্তরিকভাবে অনুভব করেন। তাঁর সাহায্যে অনেক প্রতিবন্ধী বাচ্চা সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। শিক্ষক চৌ’র জন্য এটা বেশ তাত্পর্যপূর্ণ।

ছোংছিং মহানগরের নতুন যুগের কৃষকরা গ্রামাঞ্চলের পুনরুজ্জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তি

২০১৫ সালে চীনের ছোংছিং মহানগরের ফেংতু জেলায় সিয়ানন্যুহু উপজেলায় বিশেষ কৃষি উদ্যান গড়ে ওঠে। তখন থেকে অনেক যুবক কৃষক এখানে আসেন এবং তাদের প্রচেষ্টায় স্থানীয় কৃষি উদ্যানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে।

ফেংতু জেলার নতুন কৃষিপ্রযুক্তি উদ্যানে নতুন প্রজন্মের কৃষক হৌ চুন এবং ওয়াং হ্য সিং সংবাদদাতাদের জন্য বিভিন্ন প্লাস্টিক তাঁবুতে চাষ করা শাকসবজির তথ্যপরিচয় তুলে ধরেন। এখানে ১৭০টিরও বেশি ফল গাছ, মিনি সাইজের তরমুজ ও স্ট্রবেরি বাগান রয়েছে। এখন আর এখানকার কৃষিকাজ প্রাকৃতিক পরিবেশ ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে অনেকটাই প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবমুক্ত।

যুবক হৌ চুন আগে ব্যবসা করতেন। আর ওয়াং হ্য সিংয়ের পাহাড়াঞ্চলে শাকসবজি চাষের অভিজ্ঞতা আছে। দু’জন যৌথভাবে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখতে আগ্রহী হন। সিয়ানন্যুহু উপজেলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত। তাই দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি সুবিখ্যাত। স্থানীয় পাহাড়াঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে শানতুং প্রদেশের কৃষিবিশেষজ্ঞদের দলের সাহায্যে শাকসবজি চাষাবাদ ও চারার প্রজনন ঘাঁটি নির্মিত হয়েছে এখানে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কারখানা, হোটেল ও পর্যটন বাগানের সাথে সহযোগিতা করে কৃষিপণ্যের সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের কৃষি উদ্যানে মোট ৭ কোটিরও বেশি ইউয়ান অর্থায়ন করা হয়েছে এবং স্থানীয় ৪০০টিরও বেশি কৃষক পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ফেংতু জেলা তিন গিরিখাত বিদ্যুত্ কেন্দ্র প্রকল্প-এলাকায় অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট লাখ। তাদের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ অন্যান্য শহর বা জেলায় চাকরি করেন। তাই অতীতে স্থানীয় কৃষিকাজ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এ সম্পর্কে ফেংতু জেলার সিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক চাং কুও চোং বলেন, গ্রামবাসীদের অনেকেই শহরে চলে যেতেন। এ অবস্থায় গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন ধরনের কৃষকদের আকর্ষণ করা প্রয়োজন হয়। তারা গ্রামের উন্নয়নে আবেগ ও দক্ষতা প্রয়োগ করেছে। তারা এখন গ্রামাঞ্চলের পুরুজ্জীবনের অন্যতম প্রাণশক্তি।

লংহ্য জেলার তুংচুয়াংপিং গ্রামের পুনরুজ্জীবনের বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তাবায়নের কাজ এখনও চলছে। এ প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী ৩৭ বছর বয়সের লেখক স্যু পেং বিদেশ থেকে পড়াশোনাশেষে গ্রামে এসে নতুন ধরনের কৃষক হিসেবে জীবন শুরু করেন। তিনি গ্রামাঞ্চলে বাড়িঘর ভাড়া করেন এবং স্থানীয় গ্রামের কর্মকর্তাদের সাথে গ্রামের উন্নয়নে নিজের অবদান রাখেন।

গত বছরের শেষ দিকে স্যু পেং তুংচুয়াংপিং গ্রামে আসেন। স্থানীয় সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ তাঁর জন্য অনেক আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিল। তিনি খেয়াল করেন যে, গ্রামের অধিকাংশ যুবক অন্যান্য শহরে চাকরি করছেন। পিতামাতার সাথে না-থাকা বাচ্চার সংখ্যাও অনেক বেশি। তখন তিনি ৭ লাখেরও বেশি ইউয়ানের ‘শিক্ষা তহবিল’ গঠন করেন। তাঁর কয়েক জন বন্ধুও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন। তাদের যৌথ প্রয়াসে তুংচুয়াংপিং গ্রামের উন্নয়নে পরিকল্পনা রচিত হয়, অবকাঠামো উন্নত হয়, এবং পিতামাতা থেকে আলাদা থাকা বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার সুবিধা সৃষ্টি করা হয়।

এ সম্পর্কে স্যু পেং বলেন, “আমরা বাচ্চাদের বই দেই, তাদের নিয়ে বড় শহরে ঘুড়তে যাই, গ্রামাঞ্চলের রাস্তা মেরামত করি। এখন অনেক যুবকর্মী জন্মস্থানে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং এ বহুমুখী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। আমরা শিক্ষা তহবিলের মাধ্যমে আরও বেশি লোককে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম। এ গ্রামের ভবিষ্যত আরও সুন্দর হবে।”

জানা গেছে, ফেংতু জেলায় নতুন ধরনের কৃষকের সংখ্যা ৭২৭ জন। তারা চাষাপাদ, পশুপালন, অনলাইন ব্যবসা, পর্যটনসহ বিভিন্ন শিল্পের সাথে জড়িত। তাদের প্রচেষ্টায় ২২ হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবারের ৭৮ হাজার জনেরও বেশি গ্রামবাসীর বার্ষিক আয় বেড়েছে। এর ফলে ফেংতু জেলার আরও বেশি যুবকের মধ্যে জন্মস্থানে ফিরে আসার আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সুবিধাজনক ব্যবস্থার কারণে ভবিষ্যতে আরও বেশি নতুন কৃষক হবেন এবং তাঁরা গ্রামাঞ্চলের পুনরুজ্জীবনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা যায়।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা এ পর্যন্ত। আপনারা আমাদের অনুষ্ঠান সময়মতো শুনতে না পারলে আমাদের ওয়েবসাইটে শোনা যায়, আমাদের ওয়েবসাইট ঠিকানা Bengali.cri.cn,ফেসবুক অ্যাকাউন্ট CRIbanglaথেকেও প্রতি সোমবার আমাদের অনুষ্ঠান শোনা যায়। তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, আগামী সপ্তাহের একই দিনের একই সময় আবার কথা হবে, যাইচিয়ান।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn