বাংলা

অর্ধেক জীবন চীনে থাকা ইতালীয় চীনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্বকে জানাতে চায়

CMGPublished: 2022-07-19 15:14:18
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

কয়েকশ’ বছর আগে, ইতালির পর্যটক মার্কো পোলো গোটা চীন ভ্রমণ করেছিলেন। এরপর ‘মার্কো পোলোর ভ্রমণ রেকর্ড’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়, যা সারা ইউরোপে রহস্যময় পূর্বের দরজা খুলে দেয়। কয়েকশ’ বছর পর, অন্য একজন ইতালীয় গ্যাব্রিয়েলা বনিনো ইতালি ভাষায় বই লিখে তার নিজের দেশে চীনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরেন। আজ আমরা ইতালীয় গ্যাব্রিয়েলা বনিনোর কাছ থেকে তার চীনের অভিজ্ঞতার নানা গল্প শুনব।

গ্যাব্রিয়েলা বনিনোর, একটি চীনা নাম আছে—থাং ইয়ুন। তিনি ইতালির তুরিনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ও চীনের গল্পগুলো ৩০ বছর স্থায়ী। যখন তিনি ১৮ বছর বয়সী ছিলেন তিনি প্যারিসের গুইমেট যাদুঘর পরিদর্শন করেন, তখন চমত্কার চীনা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তাকে আকর্ষণ করে। তখনই তার হৃদয়ে চীনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। ১৯৮৭ সালে থাং ইয়ুন চীনে আসেন। তিনি তত্কালীন বেইজিং ভাষা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। স্নাতক পাসের পর একটি চীনা মিডিয়া কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। থাং ইয়ুন বলেন,

“আমি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি এবং আমার শো- চায়না নিউজ পুরস্কারের প্রথম পুরস্কার জয় করে। আমার কাজের অভিজ্ঞতা চীনকে বোঝার জন্য একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম।”

মিডিয়াতে কাজ করার সময় থাং ইয়ুন চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের ওয়েনচৌ শহরে এক ডজনেরও বেশি শো তৈরি করেন এবং তা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। ২০১৭ সালে থাং ইয়ুন ওয়েনচৌ বিজনেস স্কুল অফ মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশনে শিক্ষক হিসেবে পড়তে আসেন। ওয়েনচৌ একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর। ওয়েনচৌতে তার কাজ করার সময়, তিনি তার ‘আবিষ্কার ওয়েনচৌ’ বই লেখার কারণে ‘ওয়েনচৌয়ের সম্মানিত নাগরিক’ উপাধিতে ভূষিত হন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে থাংইয়ুন ওয়েনচৌন শহরের রুই আন জেলায় আসেন। তিনি চীন-ইতালি মানবসম্পদ শিল্প পার্কের সাংস্কৃতিক পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ পান। এইভাবে তার রুই আন যাত্রা শুরু হয়। তিনি বলেন, “রুই আন একটি সাংস্কৃতিক ও খুব প্রাচীন শহর। ইয়ংজিয়া স্কুলের ছেন ফুলিয়াং এবং ইয়ে শি রুই আন শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। এখানে ইয়ু হাই লৌ লাইব্রেরি, লিজি হাসপাতাল, সিনলান সোসাইটি ইত্যাদি রয়েছে। তখন সেখানে একদল অত্যন্ত জ্ঞানী, অত্যন্ত উন্নত শিক্ষাবিদ ও উদ্যোক্তাও ছিলেন।”

রুই আন শহরে থাং ইয়ুন অনেক কথা বলতে চান। কারণ তিনি চীনে অনেক বছর ধরে বাস করছেন এবং প্রতিবার চীনে একটি নতুন জায়গায় যান, তিনি সেখানকার সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান। রুই আনে থাকার সময়, তিনি সাইকেল চালাতেন এবং রাস্তায় বিভিন্ন লোকশিল্পী এবং অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি বলেন, রুই আন সত্যিই ‘শত কর্মীর হোমটাউন’। তিনি বলেন,

“আমি তুংশান রাস্তায় বসবাস করি এবং এখানে একজন অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারী আছেন। তিনি লগ তৈরি করেন। সারা বিশ্বে অবৈষয়িক সংস্কৃতি আছে, যেগুলো সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত। আমি মনে করি আরও বেশি সংখ্যক মানুষ আবার ঐতিহ্যের প্রেমে পড়বে।”

রুই আন শহরের চুংই রাস্তায়, থাং ইয়ুন বিশেষভাবে সাংবাদিকদের কাছে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় শিল্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। লান চিয়াসিয়ে, চীনের ঐতিহ্যবাহী মুদ্রণ ও রঞ্জক কৌশল। এটি ২০১১ সালে জাতীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রকল্প হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। তিনি বলেন,

“লানচিয়াসিয়ে অতি প্রাচীন চীনা ঐতিহ্যবাহী কারুকাজ। এর উত্পাদন প্রক্রিয়া খুবই জটিল, খোদাই করার জন্য একটি টেমপ্লেট প্রয়োজন এবং এর কাজটি খুবই জটিল।”

রুই আন শহর থাং ইয়ুনকে আকর্ষণ করে। তাই তিনি এখানে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তিনি এখানকার অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও গভীরভাবে জানতে চান। ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত, রুই আন শহরের অবৈষয়িক সংস্কৃতি রক্ষা কেন্দ্রের সাথে থাং ইয়ুন সহযোগিতা করে, ইতালি ভাষায় ‘রুই আনের অবৈষয়িক সংস্কৃতি আবিষ্কার’ বইটি লিখেছেন। বইয়ে এক লাখেরও বেশি শব্দ রয়েছে। তিনি রুই আন শহরের ৬৪টি অবৈষয়িক সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি, ইতালির পেদ্রিনি পাবলিশিং হাউস ‘রুই আনের অবৈষয়িক সংস্কৃতি আবিষ্কার’ বইটি প্রকাশ করেছে, এবং ইতালীয় শহরগুলির জাতীয় গ্রন্থাগারগুলিতে দান করেছেন, এবং প্রচারের জন্য ই-বুক ইস্যু করেছেন। থাং ইয়ুন বলেন, তিনি এই বিস্ময়কর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ইতালীয়দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা বলতে থাং ইয়ুন বলেন, তিনি ওয়েনচৌতে বাস করতে চান। কারণ সামুদ্রিক রেশমপথ তার পরবর্তী গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,

“আমি আমার জীবনের অর্ধেকেরও বেশী সময় চীনে বাস করেছি। আমি চীনকে আমার বাড়ি বলে মনে করি। এখন আমি সামুদ্রিক রেশমপথ অধ্যয়ন করছি এবং আমি ইতালিতে ‘সামুদ্রিক রেশমপথ আবিষ্কার’ বইটি প্রকাশ করতে যাচ্ছি।”

অবিরাম লেখালেখি, পথচলা থাং ইয়ুন এবং ওয়েনচৌ ও অবৈষয়কি সংস্কৃতির সাথে সম্পর্ক এবং তাঁর ও চীনের গল্প, এখনও চলছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn