বাংলা

সৌদি আরবের আবিদ শরীফ: ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর সাংস্কৃতিক দূত হতে চাই

CMGPublished: 2022-07-19 15:15:34
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া হলো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এটি ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সাংস্কৃতিক ও মানবিক ভিত্তি। আমাদের উচিত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর বরাবর দেশগুলির ইতিহাস, সংস্কৃতি, রীতিনীতিকে সমর্থন করা, এই উদ্যোগ বরাবর দেশগুলির জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় জোরদার করা এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণের জন্য একটি ব্যাপক সামাজিক ভিত্তি স্থাপন করা।

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ মানুষের মনে আরও গভীরভাবে উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, চীন ও প্রাসঙ্গিক দেশগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ আমরা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বরাবর দেশগুলির একজন সাংস্কৃতিক দূতের গল্প বলব। শুনুন সৌদি আরবের আবদুল আজিজ রাজা পাবলিক লাইব্রেরির পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-পরিচালক আবিদ শরীফের গল্প।

যখন সংবাদদাতা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আবিদ শরীফের সাথে দেখা করেন, তখন তিনি প্যাকিং করছেন, কিছুদিনের পর তিনি চীনে ফিরে আসবেন। অনেক বছর হয়ে গেছে। প্রথমবার চীনে আসার সব স্মৃতি তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। ২০০৭ সালে, সৌদি আরব প্রথমবারের মতো চীনে বড় একদল শিক্ষার্থী পাঠায়। আবিদ ছিলেন তাদের মধ্যে। যদিও সেই সময়ে তার অধ্যয়নের বিষয় ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। আবিদ চীনে অধ্যয়ন করার সময় চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শক্তিশালী আগ্রহ অনুভব করেন। সেই কারণে তিনি পরবর্তীতে তার পেশা হিসেবে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে বেছে নেন। তিনি বলেন,

“সাংস্কৃতিক বিনিময় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে অনেক দূরের বলে মনে হয়। তবে, এটি আসলে যোগাযোগ বা একটি যোগাযোগের প্রক্রিয়া। এর পার্থক্য হলো ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং মানব-কম্পিউটার মিথস্ক্রিয়া। বিশেষ করে যখন আমি চীনে অধ্যয়ন করতাম, আমি উহানে পড়াশোনা করতাম। আমি বেইজিংয়ে একজন স্নাতকোত্তর ছাত্র ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উত্সব আয়োজন করে, যা বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে বিনিময়ের একটি প্রক্রিয়া। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক উত্সবে তাদের নিজের বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি প্রদর্শন করে, একই সঙ্গে অন্য দেশ ও দেশের সংস্কৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। এই ধরনের কার্যক্রম সাংস্কৃতিক বিনিময়ে আমাদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ উদ্দীপিত করে চলেছে।”

অনেক বছর কঠোর পরিশ্রমের পর আবিদ শরীফ অবশেষে চীনে তার পড়াশোনা শেষ করেন। ঠিক সেই সময় সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ পাবলিক লাইব্রেরি এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা প্রকল্পের অগ্রগতি হয়। এই খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে আবিদ আবেদন করেন এবং সেই প্রকল্পের সৌদি আরবের ম্যানেজার হওয়ার পর, প্রকল্পের অগ্রগতির সাথে সাথে, আবিদ অবশেষে সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ পাবলিক লাইব্রেরির পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সৌদি আরব পক্ষের উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পান।

সেই পাবলিক লাইব্রেরির পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা হলো চীন-সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সহযোগিতার একটি প্রকল্প। এটি সৌদি আরবের লাইব্রেরির আরব অঞ্চলের বাইরে স্থাপিত প্রথম শাখা। এটি চীন ও সৌদি আরবের নতুন যুগের মৈত্রীর নতুন প্রতীক। বর্তমানে এই লাইব্রেরির মোট আয়তন ১৩ হাজার বর্গমিটার, এর সংগ্রহ করা বই প্রায় ২৫ হাজার এবং এর মধ্যে ২২৮১৮ হলো আরবি ভাষার মৌলিক বই। আবিদ বলেন, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নির্মাণের প্রস্তাব থেকে, বর্তমানে সমৃদ্ধ উন্নয়ন পর্যন্ত, দশ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। যা সৌদি আরব ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত করে।

আবিদ বলেন, “আমাদের শাখার বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইভেন্ট হলো সৌদি আরব-চীন ধারাবাহিক যুব সংলাপ। ঐতিহ্যগত বিনিময় ফর্মের পাশাপাশি, আমরা বিশেষভাবে দু’দেশের যুবকদের পারস্পরিক সফরে আমন্ত্রণ জানাবো। বিশেষ করে, যারা চীনা ভাষা ও আরবি ভাষা ও সংস্কৃতিতে আগ্রহী, তারা পরস্পর সফর করতে পারে, সামাজিক তত্পরতায় অংশ নিতে পারে, সাংস্কৃতিক বিখ্যাত ব্যক্তি, পণ্ডিতদের সাথে বিশেষ বিনিময় ইভেন্টে যুক্ত হতে পারে।”

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমাগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে- ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ শুরুর পর থেকে, আবিদ দু’দেশের আরও বেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। যেমন ২০১৮ সালে চীন ও সৌদি আরবের সহযোগিতায় পোর্ট অফ সেলেন সাইটের যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্পে অংশ নেন তিনি। এতে প্রায় হাজার বছর ধরে সামুদ্রিক রেশমপথের মাধ্যমে সৌদি আরবে পরিবহন করা চীনের বিভিন্ন রাজবংশের চীনামাটি রয়েছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী, শিল্প উত্সব এবং শিক্ষা প্রকল্পেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।

আবিদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী চীন-বিদেশি সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বাধা দিতে পারে না। মহামারী-পরবর্তী যুগে, চীন ও সৌদি আরবসহ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’-এর প্রাসঙ্গিক দেশগুলির মধ্যে বেসরকারি বিনিময় ও সাংস্কৃতিক বিনিময় অবশ্যই আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন,

“এমনকি কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে, আমাদের লাইব্রেরি চীনের সঙ্গে অনেক অনলাইন কার্যক্রমে অংশ নেয়। যদিও আমরা সময়ের পার্থক্য এবং অন্যান্য কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। তবে অংশগ্রহণকারীরা আমাদের খুব ভাল প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। মহামারী-পরবর্তী যুগে, যখন সবাই সহজেই অফলাইনে যোগাযোগ করেছে, একে-অপরের সঙ্গে দেখা করেছে, তখন মহামারীর সময় জমে থাকা অনেক কিছু আরও গতিবেগ ও আরও ভাল ফলাফল লাভ করবে।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn