বাংলা

একজন অ্যাঙ্গোলান লোক চীনা খাবারের প্রেমে পড়েছে

CMGPublished: 2022-06-21 16:24:56
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে একজন অ্যাঙ্গোলান যুবক চীনে ৭ বছর বসবাস করেছে, এখন সে একজন ব্লগার, সে তার চ্যানেলে সুস্বাদু চীনা খাবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সুস্বাদু চীনা খাবারের স্বাদ নেওয়ার পর সে ধীরে ধীরে চীনের খাদ্য সংস্কৃতি বুঝতে পেরেছে।

“এসব খাবার এত সুস্বাদু কেন! আমি আগে কখনও খাইনি।”

একজন সুদর্শন বিদেশি যুবক খুব সাবলীল চীনা ভাষায় এসব কথা বলছে এবং সে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে একের পর এক চীনা খাবারের ছবি পোস্ট করেছে। তার প্রায় ৪০ লাখ ভক্ত রয়েছে।

তার নাম লুও উয়েন, সে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অ্যাঙ্গোলা থেকে এসেছে। সেখানে প্রচুর রোদ স্থানীয় ফলের স্বাদ অনেক বাড়িয়েছে। ২০১৫ সালে লুওউয়েন চীনে অধ্যয়নের জন্য অ্যাঙ্গোলা থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে চীনে আসে। এই সিদ্ধান্ত তার জন্য একটি নতুন দরজা খুলে দেয়। সে বলে, “আমি চীনে ৭ বছর আছি। প্রথমে আমি পড়াশোনা করতে চীনে আসি। আমি সিয়ামেন শহরে পড়াশোনা করেছি এবং আমার মেজর হলো যোগাযোগ প্রকৌশল।”

অনেক বিদেশির মতো যারা চীন সম্পর্কে খুব কম জানে, চীনে আসার আগে লুও উয়েন চীন সম্পর্কে শুধুমাত্র আফ্রিকার কিছু জনপ্রিয় টিভি নাটক দেখে শিখেছে। সে বলে, “আমি সেই সময় ‘প্রিন্সেস পার্ল’ দেখতাম। এই টিভি নাটক আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। অনেকেই এটি দেখতে পছন্দ করে। প্রতিদিন রাত ৮টায় এই টিভি নাটক দেখতাম। সেই সময় আমি ভাবতাম যে চীনারা কুংফু জানে এবং সেই সময় থেকে আমি চীনা সংস্কৃতি পছন্দ করতে শুরু করি।”

সিয়ামেনে অধ্যয়নের ধীর জীবন লুও উয়েনকে সর্বত্র শহরের সৌন্দর্য অনুভব করিয়েছিল। স্নাতক শেষ করার পর, সে তার জীবনধারা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে শেনচেনে আসে, সেখানে জীবনের গতি দ্রুততর হয়।

চীনা খাবারের প্রতি তার ভালবাসার কারণে, সে একজন ফুড ব্লগারের পথ বেছে নেয়। চীনের খাদ্য সংস্কৃতি বিস্তৃত এবং গভীর। লুও উয়েন বলে, চীনা জনগণের খাদ্য সম্পর্কে ক্রমাগত অধ্যয়নের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা তাদের অনন্য স্বাদের খাবার তৈরি করেছে। লুও বলেছে, লিউচৌতে সে বিখ্যাত লুওসি চাল-নুডলসের অনন্য স্বাদের স্বাদ পেয়েছে; ল্যানচৌতে সে সুগন্ধি গরুর মাংসের নুডলসের স্বাদ উপভোগ করেছে; সিছুয়ানে ভারী তেল ও মশলাদার নুডলস তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। চীনা খাবার সম্পর্কে আরও বেশী লোককে জানাতে সে চেষ্টা করছে। একের পর এক চীনা খাবার অন্বেষণ করার প্রক্রিয়ায়, লুও উয়েনও অনেক উষ্ণ মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছে। যখন সে ভক্তদের সাথে আনন্দের ছবি তুলেছে, তখন একটি অজানা ছোট দোকানের মালিক লুও উয়েনের বিল মওকুফ করে দেয়। এই সবকিছু তাকে মুগ্ধ করেছে। সে বলে, বাইরের দেশেও এমন ‘বাড়ি’ আছে যেখানে মানুষ যত্ন করে। সে বলে,

“একদিন একই দোকানে ভিডিও করার পর, আমি বিল দিতে যাচ্ছিলাম। বস বলে যে- আমার বিল মওকুফ করা হয়েছে। আমি প্রথম বিদেশি যে তার দোকানে খেতে গিয়েছিলাম, তাই সে আমাকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানায়। আমি সেদিন খুবই মুগ্ধ হই।”

লুও উয়েন বলে, চীনা খাবারের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা চীনের ইতিহাসের পরিবর্তন এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার পরিবর্তন দেখতে পাই। লুও বলেন,

“খাবারের পিছনে রয়েছে শ্রমিকদের প্রজ্ঞা ও উত্সর্গ। এটি চীনের ইতিহাসের পরিবর্তন প্রতিফলিত করে। যেমন ইনারমঙ্গোলিয়ানরা স্থানীয় জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য খাবারকে প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতি- ইতিহাস ও সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত করে।”

চীনের সাত বছরের জীবনের কথা স্মরণ করে লুও উয়েন বলেন, সে যখন চীনে পা রাখে, তখন সে আবিষ্কার করে যে চীন তার কল্পনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। চীনে সাত বছর থেকে, লুও উয়েন বলেছে যে সে ‘অর্ধেক চীনা’ হয়ে গেছে। চীনের দ্রুত মোবাইল পেমেন্ট এবং নিখুঁত লজিস্টিক ব্যবস্থা লুও উয়েনকে অনলাইন কেনাকাটার অভ্যস্ত করেছে। সে প্রায়শই অনলাইনে জিনিস কিনে এবং ‘চীনা গতি’ পছন্দ করে। সে বলে-

“চীনে জীবন সহজ ও দ্রুত। মোবাইল পেমেন্ট এখন খুব সুবিধাজনক এবং একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আপনি ক্রেডিট কার্ড বা নগদ টাকা নেওয়ার চিন্তা ছাড়াও, যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন। আমি বাড়িতে খাবার কিনেছি বা টেকঅ্যাওয়ে অর্ডার করেছি। মাঝে মাঝে কিছু জিনিস অনলাইনে কিনি, যা খুবই সুবিধাজনক। তা ছাড়া পরিবহনও অনেক ভালো, উচ্চ-গতির রেল এবং পাতাল রেল খুব আরামদায়ক, গতিও খুব দ্রুত।”

যখন ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা আসে, লুও উয়েন আশা করেন এবং সে তার স্বপ্নের চীনর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে পারবে। সে বলে, “আমার তিনটি স্বপ্ন আছে: প্রথমটি হলো ব্যবসা করা। দ্বিতীয়টি হলো, চীনা গ্রিন কার্ড পাওয়া এবং তৃতীয়টি হলো- চীনে স্থায়ী হাওয়া। আমি এখন থেকে কঠোর পরিশ্রম করব, ধীরে ধীরে চেষ্টা করব, আশা করি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn