বাংলা

শখকে পেশা হিসেবে নেবার সুযোগ

CMGPublished: 2022-02-28 14:14:30
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনাদের জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। ফলে তাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে ও ঘটছে। এর সঙ্গে সঙ্গে যুবকদের নতুন চাহিদা ও প্রযুক্তিগত কাঠামোর পরিবর্তনে অনেক নতুন পেশাও সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অনেকে তাদের শখকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগও পাচ্ছেন। সম্প্রতি চীনের প্রায় ২৭০০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মধ্যে জরিপ করা হয়। এ থেকে জানা যায় যে, যদি জীবনযাপনের খরচের চাপ না-থাকে, তাহলে প্রায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের শখকে পেশা হিসেবে নেবেন। তার মানে, তাদের প্রিয় কাজকে পেশা হিসেবে নেওয়া তাদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় ব্যাপার। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা যুবকদের শখ ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করবো।

চীনের মিনহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জু আও ইয়ু বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছোট ভিডিও তৈরি করা তাঁর জন্য বেশ মজার ব্যাপার। শুরুর দিকে তিনি ওয়েবসাইট থেকে ভিডিও নিয়ে নিজের মতো করে ভিডিও তৈরি করতেন। পরে ভিডিও এডিট ও বানানোর কিছু পদ্ধতি শিখে ফেলেন। তখন থেকেই তিনি আধুনিক জীবনের আকর্ষণীয় বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি ভিডিও কনটেন্ট তেরি করে আসছেন। পোস্ট ভিডিওগুলো অনলাইনে কয়েক কোটির বেশি ভিউ পেয়েছে।

শাংহাই বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ইয়াং ছেন সিনের পোশাক ডিজাইনের ওপর ব্যাপক আগ্রহ। ছুটির দিনে তিনি বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে গবেষণা করেন এবং নতুন নতুন স্টাইলের পোশাক বানিয়ে পরেন। স্নাতক হওয়ার পর তিনি পোশাক ম্যাচিংসংশ্লিষ্ট চাকরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরও অনেক যুব-শিক্ষার্থী পড়াশোনা করার পাশাপাশি অনলাইনে নিজেদের প্রিয় কাজ করে থাকেন। যেমন, চিলিনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে নিজের পড়াশোনা শেষ করে অনলাইনে ব্লগার হিসেবে সুপরিচিত হন। তিনি কার্টুন চলচ্চিত্রের চরিত্র মিকি মাউসের চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। অনলাইনে তার ডাকনাম ‘স্পুন’-এর মানে চামচ এবং সেই নাম তার ও তার বান্ধবীর নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে গঠিত। তারা নিয়মিত জীবনের ক্ষুদ্র অথচ মজার ঘটনা নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন। এ পর্যন্ত অনলাইনে ২ কোটিরও বেশি লাইক পেয়েছেন তিনি। তার কার্টুন চলচ্চিত্রের চরিত্রে অভিনয় এবং মজার মজার কথা শুনে অনেকে আনন্দ পান। কিছু কিছু ভিডিওর ডিজাইন ভিডিও-টেমপ্লেটে পরিণত হয়েছে, যার ফলে কিছু অর্থও আয় হচ্ছে তার। এ সম্পর্কে সে বলল, ভিডিও-টেমপ্লেট তৈরি করার মাধ্যমে কিছু আয় হচ্ছে যা আনন্দের ব্যাপার। তার কাজ বেশ নমনীয়। তিনি তার এ কাজকে পেশা হিসেবে নেওয়ার চিন্তা করছেন।

চেচিয়াং প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াং নান অনলাইনে উপন্যাস রচনা করেন। পিতামাতার পরামর্শে সে অ্যাকাউন্টিং বিভাগে ভর্তি হয়। তবে এ মেজরের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই তার। ছুটির দিনে অনলাইনে উপন্যাস রচনা করা তার জন্য বেশ আকর্ষণীয় ব্যাপার। তার রচিত উপন্যাস অনলাইনে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরে সে বন্ধুদের সাথে অনলাইনে একটি ব্লগ চালু করে। সে প্রতিদিন কিছু লেখার চেষ্টা করে এবং নিয়মিত পাঠকদের সাথে মতবিনিময় করে। অনলাইন লেখকের চাকরি সম্পর্কে সে বলল, ‘পাঠকদের সাথে কথাবার্তা বলতে আমার অনেক ভালো লাগে। যদি অনলাইনে উপন্যাস লেখা আমার চাকরি হয়, তা আমার জন্য বেশ খুশির ব্যাপার হবে।”

এবারের জরিপ থেকে জানা গেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, তাদের প্রিয় শখ যদি তাদের পেশা হয়, তবে সেটা হবে চমত্কার। এমন কাজ করার মাধ্যমে তারা কাজের আনন্দ পাবে। ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী নতুন পেশার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে, ৫৫.৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আরও নমনীয় ও স্বাধীন সময়সূচির কাজ করতে আগ্রহী।

কার্টুন চলচ্চিত্র নতুন প্রজন্মের যুবকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিভিন্ন দেশের কার্টুন চলচ্চিত্রের জন্য ডাবিং-কাজও অনলাইনে প্রচলিত। মেয়ে লিউ ইং ইংয়ের কন্ঠ বেশ মিষ্টি। সে ভিন্ন কন্ঠ ও স্বর দিয়ে কার্টুন চলচ্চিত্রের চরিত্রে অভিনয় করে। তার কণ্ঠ নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা পেয়েছে। ডাবিংয়ের কাজ করার পর তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রদর্শনীতেও নিয়মিত তার কণ্ঠ শোনা যায়।

মেয়ে ও ইয়াং ছেন সিনের মুখ অনেক মিষ্টি। যদিও পেশাদার ডিজাইনার সে নয়, তবে অনলাইনে ব্লগার হিসেবে সে ছবি তোলে ও পোশাক ড্রেসিংসহ অনেক কৌশলগত বিদ্যা আয়ত্ব করেছে। বর্তমানে তার ব্লগারের ফলোয়ারের সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি। অনেক দর্শক তার ড্রেসিং পদ্ধতি থেকে নিজকে আরো সুন্দর করার পদ্ধতি শিখতে পেরেছে এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছে।

ছেলে জু আও ইয়ু এ পর্যন্ত ৪০০টিরও বেশি ছোট ভিডিও শুটিং করেছে এবং অনলাইনে মোট ১০ কোটিরও বেশি লাইক পেয়েছে। এখন তার ভিডিও বানানোর দক্ষতা অনেক উন্নত হয়েছে। ভিডিও বানানোর অভিজ্ঞতা সারাংশ করে ছেলে জু বলে, দর্শকরা বাস্তব ও হাল্কা জীবনসংশ্লিষ্ট ভিডিও বেশ পছন্দ করেন। তাই তার ভিডিও প্রধানত এমন বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করে। সাথে সাথে পিএস আর পিআরসহ বিভিন্ন স্ফটওয়ায়ের ব্যবহার করে ভিডিওতে অক্ষর ও সংগীত যুক্ত করে থাকে। নিউমিডিয়া ও প্ল্যাটফর্ম যুবকদের জন্য অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করেছে। ছেলে জু’র দৃষ্টিতে নিউমিডিয়ার ছোট ভিডিও নতুন বিষয়। যুবকরা নিউমিডিয়ায় কাজ করার পর ভিডিও এডিটিং বা প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে পারে, সেটি বেশ ভালো একটি ব্যাপার।

ব্লগার ‘স্পুন ওয়াং’-য়ের দৃষ্টিতে নিউমিডিয়া ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে অপেশাদার কর্মী হলেও ভিডিও তৈরির কাজে অংশ নিতে পারে। বর্তমানে মোবাইল ফোনের এপিপি সহজভাবে ব্যবহার করা যায়, যা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হবে সৃজনশীলতা। এ সম্পর্কে সে বলল, নিউমিডিয়ায় কাজ করতে চাইলে সবসময় নতুন জিনিস শিখতে হবে। অন্যান্য অভিজ্ঞ ব্লগারদের কাছ থেকে সেরা অভিজ্ঞতা শিখা তার নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে।

শখকে পেশায় পরিণত করার পথে বড় বাধা মাসিক বেতন। ৬৮.৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, কেবল আগ্রহ থাকলেই নিজেদের শখকে পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, জীবনযাপনের বাস্তব চ্যালেঞ্জ ও মাসিক বেতনসহ বিভিন্ন উপাদান বিবেচনা করতে হবে। তা ছাড়া, নিউমিডিয়ায় কাজ করতে চাইলে সবসময় একই রকমের ভিডিও বা অনুষ্ঠান পোস্ট করে চলবে না। দর্শকরা কম সময়ের মধ্যে তাদের দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই এ কয়েকজন ব্লগার প্রায় একই ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। কিভাবে নিয়মিত মজার ও আকর্ষণীয় ভিডিও বানানো যায়—এটা একটি কমন চ্যালেঞ্জ।

সামাজিক ব্লগার হিসেবে তাদের মধ্যে অনেকে জনপ্রিয় হওয়ার পর ভিডিও এপিপি’র সাথে সহযোগিতা করে বিভিন্ন সহকারী তত্পরতায় অংশ নেন। এভাবে আরো বেশি যুবকদের জন্য তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিশেষ করে যারা শখকে পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী তাদের জন্য এ কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্ল্যাটফর্মের সহায়তা পেতে চায়। ৭৯.৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে চায়। ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এ শখের পেশায় বেতন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছে।

এ সম্পর্কে ছেলে জু বলে, “আমার প্রিয় কাজকে নিজের পেশা হিসেবে নিতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।” অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। ধারণাটি হচ্ছে: লেখাপড়া না করেও কম সময়ের মধ্যে অনলাইনে সেলিব্রিটি হওয়া যায়। এ সম্পর্কে জু বলে, সেটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। কারণ, কেউ জ্ঞান ছাড়া স্থায়ীভাবে সুবিখ্যাত বা জনপ্রিয় হতে পারে না। যুবক-যুবতীদের অব্যাহতভাবে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন কতে হবে এবং সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে যেতে হবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn