বাংলা

নির্বিচারে শুল্ক বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের ‘ব্যথা’ হবে: সিএমজি সম্পাদকীয়

CMGPublished: 2024-05-16 16:17:59
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মে ১৬: ‘শুল্ক বৃদ্ধির কোন ভিত্তি নেই’ এবং ‘এর প্রতীকী তাত্পর্য প্রকৃত প্রভাবের চেয়ে বেশি’... মার্কিন সরকার ১৪ মে চীনা পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করার পর, আন্তর্জাতিক জনমত সন্দেহ ও সমালোচনা প্রকাশ করেছে। অনেক সংবাদমাধ্যম বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর্থ-বাণিজ্যিক বিষয় নিয়ে রাজনীতিকরণ অব্যাহত রেখেছে; যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের বিনিময় ক্ষুণ্ণ করছে এবং তা সংশ্লিষ্ট শিল্প বিকাশের প্রতিকূল হবে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বেদনা অনুভব করবে।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন ট্রাম্প প্রশাসন তথাকথিত "৩০১ তদন্ত" এর ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের প্ররোচনা দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা প্রায় ৩৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চীনা পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে। ২০২২ সালের মে মাসে, চীনে বিরুদ্ধে চার বছরের শুল্ক বৃদ্ধির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, বাইডেন প্রশাসন প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা পদ্ধতি চালু করার ঘোষণা করেছিল। স্থানীয় সময় ১৪ মে, মার্কিন সরকার পর্যালোচনার ফলাফল প্রকাশ করে এবং চীনের পণ্যগুলির মধ্যে আরও শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। যার মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক যানবাহন, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং ফটোভোলটাইক পণ্য। তা ছাড়া প্রধান খনিজ, অর্ধপরিবাহী, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং বন্দর ক্রেইন, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ইত্যাদি।

তার মধ্যে, চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর আরোপিত আমদানি শুল্ক আশ্চর্যজনক- ২৭.৫% থেকে ১০২.৫% বেড়েছে। সৌর কোষ আমদানি কর ২৫% থেকে ৫০% হয়েছে এবং লিথিয়াম ব্যাটারির উপর শুল্কের হার ৭.৫ থেকে ২৫% হয়েছে। বোঝা যায়, মার্কিন সরকারের এবারের ফোকাস চীনের নতুন জ্বালানি-সম্পর্কিত শিল্প। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অনেক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা সম্প্রতি চীনের নতুন জ্বালানি শিল্পের তথাকথিত "অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা" নিবিড়ভাবে প্রচার করছেন। যা অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের একটি অজুহাত মাত্র।

যুক্তরাষ্ট্র আবারও শুল্কের লাঠি বাড়িয়েছে, তাতে কি কোনো প্রভাব পড়বে? জাপানের "নিহোন কেইজাই শিম্বুন" উল্লেখ করেন যে চীনের প্রাসঙ্গিক শিল্পগুলি মার্কিন বাজারের উপর নির্ভর করে না। তাই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলেও চীনের ওপরে আসল প্রভাব পড়ে না। ব্লুমবার্গ আরও বিশ্লেষণ করেছেন যে, মার্কিন সরকার চীনের সবুজ প্রযুক্তি খাতকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যা হিংসাত্মক বলে মনে হচ্ছে। আসলে এটি শুধুই প্রতীকী বিষয়।

তাহলে মার্কিন সরকার কেন এমনটা করছে? বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে একদিকে, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র নতুন শক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না, আমেরিকান রাজনীতিবিদরা চীনের সুবিধাজনক শিল্পের বিকাশ দমন করতে বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। যাতে দেশীয় উদ্যোগের জন্য আরও অনুকূল প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় এবং বিশ্বব্যাপী শিল্প চেইনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বজায় থাকে।

অন্যদিকে, এটি অনেকটা ‘রাজনৈতিক শো’-এর মতো। এই বছরটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর। বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, বাইডেন প্রশাসন এ সময়ে চীনের বিরুদ্ধে "শুল্ক যুদ্ধ" শুরু করেছে। তা মূলত দেশীয় রাজনৈতিক প্রয়োজনে।

সুতরাং, উচ্চ শুল্ক কি আমেরিকান রাজনীতিবিদদের ইচ্ছাপূরণে সাহায্য করতে পারে? অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাটারিচালিত গাড়ির ধীর বিকাশের নিজস্ব কারণ রয়েছে। যার মধ্যে উচ্চ উত্পাদন খরচ এবং চার্জিং পাইলসের মতো অপর্যাপ্ত অবকাঠামো রয়েছে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া মার্কিন অটো শিল্পের শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রতিফলিত করে যে, মার্কিন সরকারের ব্যাটারিচালিত গাড়ির বিকাশ ঐতিহ্যবাহী অটো শিল্পের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করেছে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করা যাবে না।

আমেরিকান রাজনীতিবিদরা ভোট জিততে অতিরিক্ত শুল্ক ব্যবহার করতে চান, তারা তা করতে সক্ষম হবেন না। কারণ প্রচুর তথ্য প্রমাণ করেছে যে, ২০১৮ সালে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার কর্তৃক শুরু করা বাণিজ্য যুদ্ধ আমেরিকান কোম্পানি এবং জনগণকে ভারী মূল্য দিতে হয়েছে। মুডি'স-এর অনুমান অনুসারে, মার্কিন ভোক্তারা চীনের উপর চাপানো অতিরিক্ত শুল্কের ৯২% খরচ বহন করবে, যেখানে মার্কিন পরিবারগুলি বছরে অতিরিক্ত ১৩০০ মার্কিন ডলার খরচ করে। অন্যান্য গবেষণা দেখায় যে, চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে মার্কিন কোম্পানিগুলি ১.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারমূল্য এবং প্রায় ২.৫ লাখ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে, মার্কিন "ক্যাপিটল হিল" একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে স্বীকার করেছে যে, চীনের সাথে শুল্ক যুদ্ধে "সবকিছু হারিয়ে গেছে"।

অতীতের শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা চোখের সামনে, কিন্তু মার্কিন সরকার বারবার ভুল করছে। পরিসংখ্যান দেখা যায় যে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে গাড়ি উত্পাদনের সাজসরঞ্জামগুলো ৩০% থেকে ৫১% অংশ চীন থেকে আসে। ইউএস অটোমেকারদের অভিন্ন চিন্তা হলো চীনের উপর অতিরিক্ত শুল্ক বৈদ্যুতিক গাড়ির উত্পাদন ব্যয় বাড়াবে, গার্হস্থ্য গ্রাহকদের উপর বোঝা বাড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন অটো শিল্প রূপান্তর ও আপগ্রেডিংকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করবে।

তথ্য প্রমাণ করেছে যে, চীনের নতুন জ্বালানি শিল্প উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় বিকশিত একটি বাস্তব দক্ষতা। এটি কেবল বিশ্বব্যাপী সরবরাহ সমৃদ্ধ করেনি, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমিয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজ রূপান্তরের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়াতেও দারুণ অবদান রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে দমন করার জন্য সব উপায় ব্যবহার করে, কিন্তু এটি চীনের উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনকে থামাতে পারে না, বরং "আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গকারী" হিসাবে তার অবস্থান নিশ্চিত করবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র শুল্কের লাঠি তুলে নেয়, তবে তা তার নিজের গায়ে পড়বে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn