বাংলা

‘থুসিডাইডস ফাঁদ’এড়ানো সম্ভব: মার্কিন প্রতিনিধি

CMGPublished: 2024-03-29 14:36:03
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মার্চ ২৯: চীন সফররত মার্কিন বাণিজ্য ও শিল্পমহলের প্রতিনিধি ও কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা গতপরশু (বুধবার) বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। এ বৈঠকের প্রতি নজর ছিল গোটা বিশ্বের। গত নভেম্বরে চীনা-মার্কিন নেতাদের সানফ্রান্সিসকো বৈঠকের পর এটি প্রেসিডেন্ট সি ও মার্কিন প্রতিনিধিদের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।

বৈঠককালে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, সানফ্রান্সিসকো বৈঠকের মতৈক্য হলো চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়ন। এ সম্পর্কে মার্কিন প্রতিনিধি গ্রাহাম আলিসন মনে করেন, ‘থুসিডাইডস ফাঁদ’এড়ানো সম্ভব। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের প্রধান গ্রাহাম আলিসন ২০১২ সালে ‘থুসিডাইডস ফাঁদ’ ধারণা তুলে ধরেন। ‘থুসিডাইডস ফাঁদ’র অর্থ হলো উদীয়মান কোনও শক্তির উত্থান যখন অন্য বিদ্যমান শক্তির আধিপত্যের জন্য হুমকি হয়, তখন দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনকে প্রধান ‘প্রতিযোগিতা শত্রু’ হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই অনেক বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ‘থুসিডাইডস ফাঁদে’ পড়তে যাচ্ছে।

তবে এবারের বৈঠকে এ ধারণার প্রবক্তা আলিসন নিজেই ‘থুসিডাইডস ফাঁদ’র সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের সাফল্যের সুযোগ করে দিতে সক্ষম। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩ সালে তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। এছাড়া এ পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চীনে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে, যাদের বার্ষিক মুনাফার পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২৬ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

এবারের বৈঠকে চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট সি। চীনের অর্থনীতির সুস্থ ও টেকসই উন্নয়ন মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনে পুঁজি বিনিয়োগে উত্সাহ ও আশা যুগিয়েছে। বর্তমানে চীন নতুন মানের উত্পাদনশক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের রূপান্তর কিংবা নতুন শিল্পের উন্নয়ন মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন সুযোগ বয়ে আনবে।

গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট সি ঘোষণা করেন, পরবর্তী ৫ বছরে ৫০ হাজার মার্কিন ছাত্রছাত্রীকে চীনে আমন্ত্রণ জানানো হবে। দুপক্ষের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ও ব্যক্তি পর্যায়ের আদান-প্রদানও পুনঃস্থাপিত হয়েছে এবং দুদেশের মধ্যে চলাচলকারী উড়োজাহাজের ফ্লাইট দ্রুতগতিতে বেড়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন শিল্প ও বাণিজ্য মহলের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘থুসিডাইডস ফাঁদ’ এড়ানো সম্ভব। তবে গত কয়েক বছরে চীনা-মার্কিন সম্পর্কের মধ্যে অনেক অস্থিতিশীলতা দেখা গেছে। দুদেশের নেতাদের বৈঠকের পর কিছুটা অগ্রগতি অর্জিত হলেও চীনের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের একতরফার নিষেধাজ্ঞার তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে।

চলতি বছর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪৫তম বার্ষিকী। এবারের বৈঠকে সি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উচিত একে অপরকে সহযোগিতা করা এবং তাদের সঠিক পথ খুঁজে বের করা।‘থুসিডাইডস ফাঁদ’ এড়ানো সম্ভব - এটি দুদেশের প্রতিনিধিদের মতৈক্য। এ মতৈক্যকে মার্কিন সরকারেরও বিবেচনায় নিতে হবে। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক হয়তো আর কখনও অতীতে ফিরতে পারবে না, তবে তাদের পক্ষে যৌথভাবে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn