বিআরআই বিশ্বে কি কি পরিবর্তন এনেছে? সিএমজি সম্পাদকীয়
অক্টোবর ১৬: কিরগিজস্তানে চীন-কিরগিজস্তান রেলওয়ে নির্মাণকারী দলের তৈরি কূপের কারণে স্থানীয়দের পানীয় জলের সমস্যা সমাধান হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেশটির সঙ্গে চীনের যৌথ নির্মাণকাজ হলো মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দূষণমুক্ত কয়লা বিদ্যুত্ স্টেশন, যা দুবাইয়ের জন্য ২০ শতাংশ বিদ্যুত্ জ্বালানি সরবরাহ করতে পারছে। চিলিতে স্থানীয় ফলচাষী ৫নম্বর রাস্তার মাধ্যমে চেরিফল বেশ দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে। দশ বছরে বেল্ট অ্যান্ড রোড বা বিআরআই বিশ্বের জন্য এমন কি কি দিয়েছে? আগামী ১৭ ও ১৮ অক্টোবর ‘বিআরআইয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামে’ এ বিষয়ে সারসংকলনের সুযোগ হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ ও ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এবারের ফোরামে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা সহযোগিতা ও অভিন্ন উন্নয়ন বেগবানের জন্য ফোরামে আসছেন। ফোরামের প্রচলনের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো গত দশ বছরে এ উদ্যোগ বিশ্বে বাস্তব পরিবর্তন সৃষ্টি করেছে।
বৈশ্বিক উন্নয়নের সমস্যা সমাধানের জন্য জন্ম নেয় বিআরআই। এটি বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে, যা সবার নজর কেড়েছে। গত দশ বছরে বিআরআইয়ের আওতায় ৩ হাজারেরও বেশি সহযোগিতামূলক প্রকল্পে ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাস নাগাদ চীন ১৫০টিরও বেশি দেশ, ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ২০০টিরও বেশি ‘বিআরআইয়ের’ সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষর করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা থেকে জানা গেছে, বিআরআইয়ের সার্বিক বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৪.১ শতাংশ বেড়েছে। আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর এ উদ্যোগ বিশ্বে ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্বার্থ সৃষ্টি করতে পারে; যার ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ৭৬ লাখ মানুষের চরম দারিদ্র্য বিমোচন করা যায়।
জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গণ্যপণ্য এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিআরআই শুধু অর্থনৈতিক স্বার্থ নয়, বরং নতুন প্রশাসন গঠন করেছে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভারসাম্যহীন এবং প্রশাসনের ব্যবস্থা খুঁত রয়েছে। ব্যাপক উন্নয়নশীল দেশগুলো আর্থিক সংকটসহ নানা বাধার মুখে পড়েছে। চীন অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রেশমপথ তহবিল স্থাপন করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থ সংগ্রহের পথ সম্প্রসারণ করেছে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রশাসনের ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত করেছে। কেনিয়ার মোম্বাসা-নাইরোবি রেলওয়েতে ট্রেন ভায়াডাক্টে পার হয়। ভায়াডাক্টের নিচে জিরাফ আরামে ঘুরে বেড়ায়। এ রেলওয়ের কারণে জিরাফ সন্তুষ্ট বলে প্রশংসা করেছে বিদেশি গণমাধ্যম। এটি বিআরআইয়ের যৌথ নির্মাণে সবুজায়নের দারুণ উদাহরণ। সবুজায়নের চেতনা নানা নকশা ও প্রক্রিয়ায় মেশানো হয়েছে। ‘বিআরআই জাতিসংঘ এজেন্ডা ২০৩০’র টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ, যা বিশ্বের জলবায়ু প্রশাসনে নতুন চালিকাশক্তি যোগায়।
এ সবকিছু আসলে একটি স্বাধীন নীতিতে পরিচালিত হয়। তা হলো যৌথ আলোচনা, যৌথ প্রতিষ্ঠা এবং যৌথ কল্যাণ লাভ করা। এ চেতনার ভিত্তিতে বিআরআই প্রকৃত সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন কল্যাণ লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এ উদ্যোগ জাতিসংঘ ও চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দলিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে; যা বিশ্ব প্রশাসনকে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে।
দৃষ্টি প্রসারণ করে দেখা যায়, বিআরআই মানবজাতির আধুনিকায়নের নতুন পথ উন্মোচন করেছে। উন্নত অর্থনৈতিক সত্তার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শ্রম ব্যবস্থা বিভাজনের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো খুব কম অর্থ লাভ করেছে। এমনকি স্বাধীনভাবে উন্নয়নের ক্ষমতা হারিয়েছে। বিআরআই যৌথভাবে আধুনিকায়ন বাস্তবায়নকে লক্ষ্য করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সক্ষমতা উন্নয়নে সাহায্য করেছে। চীন নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং মানবজাতির আধুনিকায়নের যাত্রায় নতুন পথের সুযোগ দিয়েছে। থাইহ্য ইন্সিটিটিউটের ঊর্ধ্বতন মার্কিন শীর্ষ গবেষক এইনার টাংগ্যান বলেন, চীনের সঙ্গে বিআরআইয়ের সহযোগিতার মাধ্যমে কিছু দেশ নিজের ভাগ্য ও ভবিষ্যত পরিবর্তন করেছে।