বাংলা

যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা কীভাবে কাজে লাগায় – তা দেখছে বিশ্ব: সিএমজি’র সম্পাদকীয়

CMGPublished: 2023-08-31 13:27:09
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

অক্টোবর ৩১: মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো গতকাল (বুধবার) বেইজিংয়ে তার চার দিনের সফর শেষ করেছেন। এ বছরের জুন মাস থেকে চীন সফরকারী চতুর্থ মার্কিন রাজনীতিক তিনি। এবারের সফরকালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘নতুন যোগাযোগের চ্যানেল গড়ে তোলার’ যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ কমানোর জন্য সহায়ক বলে মনে করে আন্তর্জাতিক জনমত।

রাইমন্ডো নিজেই বহুবার স্পষ্টভাবে ‘চীনের সঙ্গে যেসব সম্ভাবনা এখনও কাজে লাগানো হয়নি সেগুলো কাজে লাগানো’ এবং চীনে মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুঁজি বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন। এ সম্পর্কিত একজন বিশেষজ্ঞ সিএমজি’র সম্পাদকীয়তে বলেছেন, ‘নতুন যোগাযোগ চ্যানেল’ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরও যোগাযোগ ও বিনিময়ের জন্য সহায়ক হবে, তবে এটা সত্যিকারভাবে ভূমিকা পালন করবে কি না তা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তব পদক্ষেপের ওপর।

এর আগে তিনজন মার্কিন রাজনীতিকের চীন সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান অবলম্বন করে, তার দিকে তাকালে দেখা যায় আন্তর্জাতিক জনমতের এমন ধরনের সন্দেহ পোষণ খুবই স্বাভাবিক। যেমন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত জুন মাসে চীন সফরের সময় স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র বালি দ্বীপে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের চিহ্নিত কার্যক্রম পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং বাইডেন প্রশাসন চীনের সঙ্গে ‘নতুন শীতল যুদ্ধ’ চায় না, চীনের ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চায় না, চীনের বিরুদ্ধে জোট শক্তিশালী করতে চায় না, ‘তাইওয়ান স্বাধীনতা’ সমর্থন করে না এবং চীনের সাথে সংঘাত ও সংঘর্ষের কোনো ইচ্ছা নেই - এমন ‘চারটি না এবং একটি অনিচ্ছা’ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত দুই মাসে চীনের তাইওয়ান অঞ্চলের উপ-প্রধান লাই ছিং তে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রানজিট করেছে এবং সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানে কাছে সামরিক অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে এবং চীনে মার্কিন পুঁজি বিনিয়োগের নিয়ন্ত্রণ করেছে। এসব আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং, রাইমন্ডোর মনোভাব কতটুকু কাজে লাগবে, তা এখনো দেখার বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘চীনের সঙ্গে যেসব সম্ভাবনা এখনও কাজে লাগানো হয়নি’, সেগুলো কাজে লাগানো হবে বলে আশা করে মানুষ। এটি কেবল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রকৃতির সঙ্গে জড়িত তা নয়; বরং দু’দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মহলের বাস্তব চাহিদা পূরণের সঙ্গেও সম্পর্কিত। এটি চীনা ও মার্কিন অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কল্যাণকর হবে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কী কী করা উচিত?

ওয়াশিংটনের সঠিক চূড়ান্ত নীতি নির্ধারণ করতে হবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রকৃতি হচ্ছে পারস্পরিক কল্যাণ। এতে কারোর ক্ষতি বা অসুবিধার সুযোগ নেই।

২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আসছে, তবে ২০২২ সালে দুদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা এক নতুন রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য পরিষদ-প্রকাশিত ‘চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি রিপোর্ট-২০২৩’-এ বলা হয়, চীনে মার্কিন রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এতে আরও বলা হয়, ৭০ হাজারেরও বেশি মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চীনে বিনিয়োগ করেছে, যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই লাভ করেছে। সিএনএনের নিউজ ওয়েবসাইটে বলা হয়, চীনে বিশাল উত্পাদন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং এটি বেশি নির্ভর করে চীনা ভোক্তাদের ওপর।

এটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পখাতের গভীর সম্পর্কোন্নয়ন এবং পারস্পরিক আর্থ-বাণিজ্যিক কল্যাণের স্বাক্ষর। এছাড়া এটি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও বাণিজ্য মহলে চীনের সঙ্গে ‘কাজে না লাগানো সম্ভাবনা’ কাজে লাগাতে রাজি না হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়, চীন সফর আগে রাইমন্ডো বাণিজ্য মহলের ১৫০জন নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগে আগ্রহী তাঁরা। চীনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের এক জরিপের ফলাফলে বলা হয়, আগামী দুই বছরে ৬৬ শতাংশ মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে বিনিয়োগ বজায় রাখবে বা পুঁজি বাড়াবে। মার্কিন শিল্প ও বাণিজ্য মহলের কণ্ঠ মার্কিন নির্ধারকদের মনোযোগ দিয়ে শোনা দরকার।

আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষাকারী ব্যালাস্ট পাথর। ‘নতুন যোগাযোগ চ্যানেল’ গড়ে তোলার এই নতুন সূচনায় যুক্তরাষ্ট্র সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা দেখাবে, দুদেশ একে অপরের দিকে থাকবে, যাতে তাদের সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনকে এগিয়ে নেওয়া যায়। রাইমন্ডোর চীন সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে, তার ওপর নজর রাখছে গোটা বিশ্ব।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn