নতুন অগ্রযাত্রায় চীন, নতুন সুযোগের মুখে বিশ্ব: সিএমজি সম্পাদকীয়
অক্টোবর ২৪: গতকাল (রোববার) দুপুরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বিংশতম কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর স্থায়ী সদস্যগণ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছেন। এসময় সিপিসির সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর ভাষণে নতুন যুগে নতুন অগ্রযাত্রায় সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কর্তব্য তুলে ধরেছেন। মানুষের সুন্দরতম জীবনের প্রত্যাশা পূরণ এবং নিজের উন্নয়নে বিশ্বের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন সি চিন পিং।
তিনি বলেন, আজকের চীনকে বুঝতে গেলে সিপিসিকে বুঝতে হবে। সদ্য সমাপ্ত সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস নতুন যুগে নতুন অগ্রযাত্রায় দ্বিতীয় শতবার্ষিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সমাজকে সিপিসি’র রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে জানার সুযোগও প্রদান করেছে। আজ (সোমবার) চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) এক সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের মধ্যে ‘চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজর কেড়েছে। কংগ্রেসে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের বৈশিষ্ট্য ও মূল বিষয় জোরালো হয়েছে এবং সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গঠন এবং চীনা জাতির সার্বিক পুনরুত্থানের বিষয়ে কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সি চিন পিং বলেন, চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন সিপিসি ও চীনা জনগণের দীর্ঘকালীন অনুশীলন ও অনুসন্ধানের সাফল্য। এটি একটি মহান ও বলিষ্ঠ কাজ। মহান ও বলিষ্ঠ শব্দ দুটি বলতে গেলে ১৪০ কোটি চীনা জনগণের আধুনিকায়নে প্রবেশের পাশাপাশি সকলের অভিন্ন সমৃদ্ধি, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক সভ্যতা বাস্তবায়নকে বুঝায়। সেসঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সম্প্রীতিময় সহাবস্থান এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে। পশ্চিমা দেশগুলোর আধুনিকায়নে পুঁজি কেন্দ্রে দুটি পোলারাইজেশন এবং বাইরে বিস্তারের লক্ষণ দেখা দেয়। চীনের এ আধুনিকায়নের পথ মানব জাতির বহুল সমস্যা সমাধান করা হয়েছে, যা আধুনিকায়ন বাস্তবায়নে মানব জাতির জন্য নতুন বিকল্প প্রদান করেছে।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, অনেক বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিক লক্ষ্য করেছেন যে, সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচিত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন নভোচারী, চালক, বিজ্ঞান কর্মী, ডেলিভারি পারসন ও গ্রামীণ শিক্ষক। প্রতিনিধিরা নিজেদের গল্পের মাধ্যমে ‘সব কিছু জনগণের জন্য এবং সবকিছু জনগণের ওপর নির্ভর করে” চেতনা তুলে ধরেছেন।
ভবিষ্যতমুখী হয়ে সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন, নতুন ঐতিহাসিক মহান কর্ম সৃষ্টি করতে অব্যাহতভাবে জনগণকে নির্ভর করতে হবে। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা শুমাইটি এ সম্পর্কে বলেন, চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন মানে চীনা পদ্ধতিতে এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে জগগণকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন করা।
সিপিসি একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পার্টি। কেবল চীনা জনগণ নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের জনগণের সুখী জীবন চায় সিপিসি। গতকাল (রোববার) দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সি চিন পিং বলেন, চীন বরাবরই মানব জাতির অভিন্ন মূল্যবোধ সম্প্রসারণ করে মানব জাতির অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিস্ট গঠন করে যাবে। চীনের উন্মুক্তকরণ আরও জোরদার হবে এবং নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।
চীনের উন্নয়ন বিশ্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য এবং বিশ্ব উন্নয়ন চীনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। অর্থনীতি দিয়ে উদাহরণ যদি দেয়া হয়, তাহলে বলতে হয়, চীনে বিশাল বাজার রয়েছে এবং সম্পূর্ণ শিল্প ব্যবস্থা, শিল্প চেইন এবং আধুনিকতর কাঠামোগত ব্যবস্থা রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চীনে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮৯,২৭৪ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.৪ শতাংশ।
সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসে বলা হয়েছে, দেশে বড় বৃত্ত গঠন দ্রুততর করার বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি দ্বৈত বৃত্তের পারস্পরিক সহায়ক নতুন উন্নয়নের কাঠামো গঠন করতে হবে এবং উচ্চ মানের সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আরও বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।
ব্রাজিলের চীন-বিষয়ক গবেষণালয়ের মহাপরিচালক রনি লিনস বলেন, সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস একটি মাইলফলক সম্মেলন, যা চীনা জনগণকে নিয়ে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের কাজ, অগ্রযাত্রায় নতুন উন্নয়ন এবং বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।