চীন ও আজারবাইজানের মধ্যে সবুজ সহযোগিতার বিশাল ভবিষ্যত্
‘জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনের কাঠামোগত কনভেনশন’-এর কপ-২৯, ১১ নভেম্বর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবুজ জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন ও আজারবাইজানের সহযোগিতার ভিত্তি ভালো, সুপ্তশক্তি বেশি। সবুজ উন্নয়ন দু’পক্ষের বাস্তব সহযোগিতার আকর্ষণীয় পটভূমিতে পরিণত হয়েছে।
গোবুস্তান ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন দেশটির রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিম ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ৫৫০ হেক্টরের পাওয়ার স্টেশনটি দেশটির প্রথম বৃহত্ নতুন জ্বালানি প্রকল্প এবং চীন-আজারবাইজান যৌথভাবে সবুজ ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নির্মাণের প্রতিকী প্রকল্প। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বার্ষিক বিদ্যুত্ উত্পাদন পরিমাণ ৫০ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা এবং ১.১ লাখ পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারে তা। বছরে ২ লাখ টনের বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমাবে কেন্দ্রটি এবং দেশটির জ্বালানির কাঠামোগত সমন্বয়ের জন্য এর গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম হায়দার ওগ্লু আলিয়েভ চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মিত গোবুস্তান ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশনের গ্রিড-সংযুক্ত প্রজন্মের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় প্রকল্পটির ‘অসাধারণ সাফল্যে’র প্রশংসা করেছেন।
দু’দেশ ধারাবাহিকভাবে সবুজ উন্নয়ন কৌশলগত সংযুক্তি ও নীতিগত সমন্বয়ন বেগবান করে, সবুজ উন্নয়ন অভিজ্ঞা বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষণ দ্রুততর করে। চলতি বছরের জুলাই মাসে আজারবাইজান সরকার চীনের নতুন জ্বালানি গাড়ি প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি’র সঙ্গে কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আজারবাইজান সরকার ১৬০টি বৈদ্যুতিক বাস কেনা ছাড়াও ভবিষ্যতে দু’পক্ষ স্থানীয় উত্পাদনসহ এবং আরো গভীর পর্যায়ের সহযোগিতা চালাবে।
চলতি বছরের অক্টোবরে আজারবাইজানের জ্বালানি মন্ত্রী পারভিজ শাখবাজভ চীনের ছিংতাও শহরে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ জ্বালানি মন্ত্রী সম্মেলনে চীন-আজারবাইজান সবুজ জ্বালানি সহযোগিতার উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। আজারবাইজানের প্রতিনিধিদল মনে করে, সবুজ অবকাঠামো, সবুজ জ্বালানি ও সবুজ পরিবহন গভীরতর করার ক্ষেত্রে দু’পক্ষের অনেক কিছু করার আছে। প্রতিনিধিদল চীনের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত কোম্পানির সাথে ফটোভোলটাইক, বায়ু বিদ্যুত্, সঞ্চিত শক্তি ও সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্প সহযোগিতার ভবিষ্যত্ নিয়ে আলোচনা করেছে।
আজারবাইজানের বিরাট সবুজ জ্বালানি সুপ্তশক্তি বিশেষ করে, সৌরশক্তি ও বায়ু শক্তির উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির ২০৩০ সাল পর্যন্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত্ উত্পাদন পরিমাণ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। দেশটির বার্ষিক সূর্যালোকের সময়কাল ২.৪ হাজার থেকে ৩.২ হাজার ঘন্টা। বায়ু সম্পদ সমৃদ্ধি, স্থল ও নৌ শর্ত উভয়ই টেকসই বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেয়। দেশটির সরকার আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথে সহযোগিতা করে, ২০৪০ সালের আগে ৭ গিগাওয়াট সামুদ্রিক বায়ু বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতায় পৌঁছার পরিকল্পনা করেছে।
স্থানীয় তথ্য মাধ্যম মনে করে, কপ-২৯ আয়োজনের অধিকার অর্জন করা অধিকতরভাবে দেশটির সবুজ জ্বালানি রূপান্তর বাড়ানোর প্রত্যয় ও আস্থার প্রতিফলন। এবারের সম্মেলন চলাকালে দেশটি কপ-২৯ জলবায়ু অর্থায়ন উদ্যোগ, বাকু বিশ্ব জলবায়ু স্বচ্ছতা প্ল্যাটফম, সবুজ জ্বালানি অঞ্চল ও করিডোর নির্মাণসহ বিভিন্ন আলোচ্যবিষয় উত্থাপন করেছে।
সম্প্রতি আরো বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান আজারবাইজানে শক্তি সঞ্চয় ও সামুদ্রিক বায়ু বিদ্যুত্সহ বিভিন্ন নতুন জ্বালানি প্রকল্প সহযোগিতার ভবিষ্যৎ অন্বেষণ করতে যাচ্ছে। এটি শুধু দেশটির জন্য অগ্রণী প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম নিয়ে আসবে, তা নয়, বরং স্থানীয় কর্মসংস্থান এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়ন বেগবান করার পাশাপাশি দেশটি সংশ্লিষ্ট সবুজ জ্বালানি কৌশল লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে।