এপেকে সি চিন পিং-এর অংশগ্রহণ এবং পেরু সফর
পেরুর প্রেসিডেন্ট বোরুয়ার্তের আমন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এপেকের ৩১তম অনানুষ্ঠানিক শীর্ষসম্মেলনে যোগ দিতে লিমা যাবেন এবং পেরুতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার আমন্ত্রণে তিনি ১৯তম জি-২০ নেতাদের শীর্ষসম্মেলনে যোগ দিতে রিও ডি জেনিরো যাবেন এবং ব্রাজিলে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর লাতিন আমেরিকার মুখোমুখি হতে এবং এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক প্রশাসনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এটি চীনের একটি বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ। বর্তমানে, সারা বিশ্ব বিরাট পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থা গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব আবার কোন দিকে যাবে- তা একটি মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সফর এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতার সঠিক দিকনির্দেশনা রক্ষায়, বিশ্ব উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রচার এবং চীন-পেরু এবং চীন-ব্রাজিল ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে একটি নতুন স্তরে ঠেলে দিতে আস্থা ও প্রেরণা যোগাবে।
এপেকের অনানুষ্ঠানিক শীর্ষসম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উপস্থিতি কেবল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেয়না, বরং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতাকে উন্নত করার জন্য তার দায়িত্বও প্রদর্শন করে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, বিশ্বের অর্থনৈতিক উৎপাদনের ৬০ শতাংশের বেশি, এবং এর মোট বাণিজ্য আয়তনের প্রায় অর্ধেক। এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে গতিশীল প্রবৃদ্ধির এলাকা, বিশ্বে "এশিয়া-প্যাসিফিক মিরাকল" সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ৬০ শতাংশ অবদান রাখে।
এপেক হল প্রথম আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা যা চীন তার সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণের পর থেকে চীনের যোগ দেওয়া প্রথম সংস্থা। ২০১৩ সাল থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সব এপেক নেতাদের অনানুষ্ঠানিক শীর্ষসম্মেলনে যোগদান করেছেন বা সভাপতিত্ব করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি প্রকৃত বহুপাক্ষিকতার পক্ষে, উন্মুক্ত আঞ্চলিকতা মেনে চলেছেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অভিন্ন কল্যাণের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করেছেন।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি অভিন্ন কল্যাণের ভবিষ্যত সম্পর্কে সচেতনতা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব থেকে, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহনশীলতা, সহযোগিতা এবং জয়-জয় সহযোগিতার বিষয় নিয়ে একটি এশিয়া-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের যৌথ নির্মাণের পক্ষে; একটি অভিন্ন কল্যাণের সমাজ যা উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদ্ভাবনী এবং ক্রমবর্ধমান, আন্তঃসংযুক্ত এবং জয়-জয়, নতুন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য এশিয়া-প্যাসিফিক অবাধ বাণিজ্যিক এলাকা প্রক্রিয়ার প্রচার থেকে শুরু করে বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা এবং মসৃণতা বজায় রাখা পর্যন্ত, চীনের উত্থাপিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতার নেতৃত্ব দিয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এপেক শীর্ষসম্মেলনে বলেছিলেন যে, ‘চীন সর্বদা দৃঢ়ভাবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের প্রক্রিয়া উন্নীত করে, চীনের প্রস্তাবগুলো সময়ের প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যাতে আরও বেশি লোক বুঝতে পারে যে, এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতা একটি প্রধান পারস্পরিক উপকারী এবং বিজয়ী উদ্যোগ। চীন সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাকে মেনে চলে এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করে। এশিয়া-প্যাসিফিক অবাধ বাণিজ্য এলাকার প্রক্রিয়া উন্নীত করতে সাহায্য করে। এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায়, চীন সবসময় একটি 'চালিকাশক্তির' ভূমিকা পালন করে, যা অঞ্চলের টেকসই সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সহায়ক। সব পক্ষই এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতায় চীনের ভূমিকার ইতিবাচক মূল্যায়ন করে।
"মিষ্টি আলুর লতা সব দিকে প্রসারিত হয়, কিন্তু এর কন্দ সবসময় মূলের দিকে বৃদ্ধি পায়। একইভাবে, এটি যতই বিকশিত হোক না কেন, চীন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শিকড় প্রথিত হবে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলবে এবং এশিয়া-প্যাসিফিকের উপকার হবে।" ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে, পেরুর এপেকের শিল্প ও বাণিজ্য শীর্ষসম্মেলনে অংশ নিয়ে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একটি রূপক হিসেবে মিষ্টি আলুর বিষয়টি ব্যবহার করেছিলেন, যাতে চীন এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প এবং আন্তরিকতা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
ইন্দোনেশিয়ায়, জাকার্তা-বান্দুং হাই-স্পিড রেলপথটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে এবং লক্ষ লক্ষ যাত্রী পরিবহন করেছে, যা ইন্দোনেশিয়া জনগণের জন্য গর্বের মত ব্যাপার। পাপুয়া নিউ গিনিতে চীনের জুনছাও প্রযুক্তি স্থানীয় কৃষকদের দারিদ্র্য থেকে বাঁচার আশা নিয়ে এসেছে। চিলিতে, চীনা কোম্পানিগুলো নির্মাণ করেছে সবচেয়ে বড় একক ফটোভোলটাইক প্রকল্প। মেক্সিকোতে, ইউকাটান উপদ্বীপে জিলাম ম্যানগ্রোভ রিজার্ভ প্রকল্পটি চালু হয়েছে। চীন ও পেরুর অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আপগ্রেড আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। চীন এবং আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য এলাকার ৩.০ সংস্করণ আপগ্রেড করার জন্য আলোচনার যথেষ্ট সমাপ্তি ঘোষণা করেছে; চীন এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সব পক্ষ পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতা আরও গভীর করে চলেছে।
পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে, প্রায় ২.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেকওয়াটার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে একটি রূপালি চাঁদ আঁকা, সেখানেই চানকাই বন্দর অবস্থিত।
চানকাই বন্দরটি "বেল্ট অ্যান্ড রোড" নির্মাণে চীন-পেরু সহযোগিতার একটি যুগান্তকারী প্রকল্প, এটি পেরুর শিপিংয়ের কার্যকারিতা কার্যকরভাবে উন্নত করবে, পেরু থেকে এশিয়ার সরাসরি যাতায়াতের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে। পেরু এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে সংযোগ ও বাণিজ্য সুবিধার ব্যবস্থা উন্নীত করবে।
গত জুন মাসে, চীন সফররত পেরুর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সময় সি চিন পিং বলেছিলেন: "'চানকাই থেকে শাংহাই' একটি জনপ্রিয় উক্তি হয়ে উঠেছে, যা দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার বিস্তৃত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। আমি বিশ্বাস করি এটি দুই দেশের জনগণের জন্য আরও সুস্পষ্ট লাভ ও আনন্দ বয়ে আনবে। "
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আট বছর পর পেরুতে তার দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা করবেন। অর্ধ বছরে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সফর বিনিময় চীন-পেরু সম্পর্কের উচ্চ স্তরের উন্নয়ন প্রতিফলিত করে।
পেরু ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রথম পর্যায়ের লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে একটি। দেশটি চীনের সঙ্গে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকারী প্রথম ল্যাটিন আমেরিকান দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, রাষ্ট্রপ্রধানদের কূটনৈতিক কৌশলের নির্দেশনায়, চীন ও পেরুর মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাস ক্রমাগত গভীর হয়েছে, ব্যবহারিক সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও সমৃদ্ধ হয়েছে; যেখানে চীন ও পেরু তাদের নিজ নিজ দেশের উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের প্রচার এবং দুই দেশের জনগণের কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করে।
একটি ল্যাটিন আমেরিকান প্রবাদ আছে, "একজন সত্যিকারের বন্ধু পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে আপনার হৃদয় স্পর্শ করতে পারে।" চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আবারও লাতিন আমেরিকা সফর করছেন এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে বাস্তব সহযোগিতার প্রসার ঘটাবেন, একটি সমান ও সুশৃঙ্খল বিশ্ব বহুমুখীতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের পক্ষে সমর্থন যোগাবেন।