বাংলা

হাই লান নদীর তীরে ধানের সুগন্ধ

CMGPublished: 2024-11-08 10:38:33
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘বিগত কয়েক বছরে আমাদের গ্রামে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পরিষ্কার টয়লেট এবং ওয়াটার হিটারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা হোমস্টে হোটেল বা গ্রামীণ বিনোদনমূলক ব্যবস্থা চালু করি। পর্যটকরা বলছেন, এখানকার খাবার সুস্বাদু, সুন্দর গান এবং নাচ পরিবেশন করা হয়। গ্রামটি প্রচুর অর্থ উপার্জন করে এবং আমাদের প্রচুর লভ্যাংশ দিয়েছে।” এই আন্তরিক চিঠিটি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে লিখেছেন চি লিন প্রদেশের ইয়ান বিয়ান অঞ্চলের কুয়াং তোং গ্রামের গ্রামবাসীরা। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ গ্রাম পরিদর্শনের নয় বছর পর হাই লান নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র নির্দেশনা অনুসরণ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, কুয়াং তোং গ্রাম স্থানীয় পরিস্থিতি অনুসারে তার অনন্য সম্পদের সুবিধাগুলো পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে এবং একটি ছোট, দরিদ্র সীমান্ত গ্রাম থেকে সমৃদ্ধ শিল্পের এবং সেলিব্রিটির প্রিয় পর্যটন গন্তব্যে রূপান্তরিত হয়েছে।

বর্তমানে ইয়ান বিয়ান ধানের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে, লোক সংস্কৃতি প্রচার করা হয়েছে, লোকেরা শান্তি ও তৃপ্তিতে বাস করছেন এবং গ্রামের চেহারা সম্পূর্ণরূপে নতুন রূপ নিয়েছে এবং এটি গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের নিজস্ব পথে যাত্রা শুরু করেছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কুয়াং তোং গ্রাম পরিদর্শনের সময় গ্রামবাসীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলাপচারিতা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গ্রামীণ কাজের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হল কৃষকদের ‘মানি ব্যাগ’ ফুলে উঠছে কিনা। বিভিন্ন মাধ্যমে কৃষকদের টেকসই এবং দ্রুত আয় বৃদ্ধির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত।

২০১১ সালের আগে, কুয়াং তোং গ্রাম একটি ‘ফাঁকা গ্রাম’ ছিল, যেখানে কোন তরুণ চোখে পড়েনি। তবে ১৯৮৫ সালে জন্মানো তরুণ উদ্যোক্তা ইয়াং লি না মনে করেন, এই গ্রামটি একটি ‘গুপ্তধন জমি’। এখানে রয়েছে অন্তহীন ধানের ক্ষেত, গান গাইতে এবং নৃত্য করতে দক্ষ কোরিয়ান আন্টি এবং কোরিয়ান খাবার যেমন আঠালো চালের চিকেন, ঠান্ডা নুডলস এবং আঠালো চালের কেক।

তিনি দেখতে পান যে, ছাং পাই পর্বতে আসা পর্যটকরা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিকে মনোনিবেশ করেন, কিন্তু জাতিগত সংখ্যালঘুদের রীতিনীতি সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ পাননি, যা খুব দুঃখজনক।

ইয়াং লি না বলেন, “এটি যাজকীয় দৃশ্য বা জাতিগত প্রথা হোক, কুয়াং তোং গ্রামটি আরও বেশি লোকের দেখার যোগ্য।”

ইয়াং লি না কোরিয়ান সংখ্যালঘু জাতির হোমস্টে হোটেল চালুর ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে তখন গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেনি যে, ২০ বছর বয়সী একটি মেয়ে অসাধারণ কিছু করতে পারেন। এখন কুয়াং তোং গ্রামে ৬০টিরও বেশি হোমস্টে রয়েছে, যা হলো ইয়াং লি না’র ডোর-টু-ডোর ভিজিটের ফল।

তিন বছর ধরে চেষ্টার ফলে গ্রামের পতিত স্কুল ভবন এবং ব্যক্তিগত বাড়িগুলো সাদা দেয়াল এবং নীল টাইলসসহ কোরিয়ান সংখ্যালঘু জাতির স্টাইলে রেস্তোরাঁ এবং হোমস্টে হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে।

রেস্তোরাঁ এবং হোমস্টেসহ, কীভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করবেন? এটি চিন্তার বিষয়। ইয়াং লি না এক দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করতে যান, অন্য দিকে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করে উন্নয়নের চেষ্টা চালান। তিনি কুয়াং তোং গ্রামে হাজার হাজার একর পরিবেশগত ধানের সম্পদকে একীভূত করে ধানের ক্ষেত্র সাংস্কৃতিক পর্যটন অভিজ্ঞতা প্রকল্পের একটি সিরিজ তৈরি করেছেন। এখানে তিনি পর্যবেক্ষণ ডেক তৈরি করেছেন, বিশাল ধানের ক্ষেতে পেইন্টিংয়ের মতো ধান রোপণ করেছেন এবং ধান ক্ষেতে ছোট ট্রেন চালু করেছেন।

তার ব্যবসা শুরুর এক বছর পর, ইয়াং লি না প্রায় ৫০টিরও বেশি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা থেকে ৬ লাখ ইউয়ান মুনাফা হয়েছে। ব্যস্ততম দিনে গ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটনের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। ইয়াং লি না’র এখনও মনে আছে, গ্রামের সিপিসি’র সাবেক সম্পাদক গ্রামের প্রবেশাদ্বারে দাঁড়িয়ে, আসা-যাওয়া পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে তাকে থাম্বস আপ দেয়ার ঘটনাটি।

কুয়াং তোং গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদক চিন সিয়ানের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামটি আধুনিক গ্রামীণ যাজকীয় পর্যটনের দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং একটি ‘গ্রাম যোগ প্রতিষ্ঠান যোগ গ্রামবাসীর পদ্ধতিতে ‘পর্যটন যোগ সংস্কৃতি’, পর্যটন যোগ ভ্রমণে ক্লাস এবং ‘পর্যটন যোগ হোমস্টে’সহ সার্বিক অপারেশন মডেল গড়ে তুলেছে। অন্যান্য স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, কুয়াং তোং গ্রাম মোট ২৮ লাখ পর্যটক আপ্যায়ন করেছে, যা থেকে উপার্জন হয়েছে ৩ কোটি ইউয়ান।

বছরের পর বছর ধরে, সমস্ত স্তরে সরকারের সহায়তায়, কুয়াং তোং গ্রাম জৈব ধান রোপণের জন্য একটি জাতীয় জনপ্রিয় বিজ্ঞান প্রদর্শনের ভিত্তি এবং জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা প্রশংসাপত্র পাওয়া একটি জৈব চালের ভিত্তি হয়ে উঠেছে। চালের দাম অতীতে প্রতি কিলোগ্রাম ৮ ইউয়ান থেকে বেড়ে এখন ১৫ ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে। যা থেকে ৩০০ জনেও বেশি গ্রামবাসী একসাথে ধনী হয়েছেন।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn