বাংলা

চীনে এশীয় হাতি সংরক্ষণের অবস্থা

CMGPublished: 2024-08-23 15:28:28
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

২০২১ সালে এক দল হাতি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশে সাত মাস ধরে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রা করে। যা সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সম্প্রতি বিশ্ব হাতি দিবস পালিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে, তাদের সুখী জীবন এবং বর্ধিত পরিবার আবারও সবার দৃষ্টিতে পড়েছে।

তিন বছর আগে, "ছোট নাক" নামে পরিচিত এসব বন্য এশীয় হাতির দল তাদের অভূতপূর্ব অভিবাসনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের সি সুয়াং বান নাতে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল থেকে শুরু করে, তারা উত্তরে প্রায় প্রাদেশিক রাজধানী শহর কুনমিং পর্যন্ত পায়ের ছাপ রেখে গেছে।

২০২১ সালের অগাস্টে ফিরে আসার পর থেকে তারা সি সুয়াং বান না’র প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকার ঘন জঙ্গলে বসবাস করছে এবং পরিবারটি বছরের পর বছর ধরে বেড়েই চলেছে।

সাম্প্রতিক ফুটেজে দেখা যাচ্ছে পরিবারের বেশ কয়েকটি সদস্যের বাচ্চা হয়েছে এবং কেউ কেউ এখন অন্য হাতি দলের সাথে একসাথে বসবাস করছে।

পেং জিনফু একজন হাতি মনিটর, তিনি আশেপাশের গ্রামবাসীদের জন্য প্রাথমিক সতর্কতা প্রদানের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে হাতিদের গতিবিধি ট্র্যাক করেন।

পেং বলেন, "আজ আমরা যে হাতিগুলো দেখেছি সেগুলো 'ছোট নাকের' এবং ‘রান রান’ নামে পরিবারের। সাধারণত, তারা জঙ্গল থেকে বিকাল পাঁচ বা ছয়টার দিকে চারণ করতে বের হয় এবং প্রায় পরদিন ভোর ছয় বা সাতটার দিকে ফিরে আসে। গ্রীষ্ম ও শরতের মাসগুলোতে, তারা প্রায়ই কাছাকাছি গ্রামে ঘুরে বেড়ায়।

পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনে সাহায্য করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। সংরক্ষণ এলাকার একটি উদ্ধার কেন্দ্র এখন পর্যন্ত ২০টিরও বেশি হাতিকে বন থেকে বাঁচিয়েছে।

কেন্দ্র দু'বছরের প্রশিক্ষণের পর, এই বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো তাদের মধ্যে একটি হাতিকে বনে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা সংরক্ষণ প্রচেষ্টার অগ্রগতি হিসাবে দেখা হয়।

সি সুয়াং বান না এশীয় হাতি উদ্ধার এবং ব্রিডিং কেন্দ্রের পরিচালক ওয়াং বিন বলেন, "হাতিকে দুই বছর প্রশিক্ষণের পর বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা এটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ড্রোন এবং ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করছি এবং তখন পর্যন্ত আ বাও নামের সেই হাতির শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল" ।

চীনে বন্য এশীয় হাতির সংখ্যা বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণের প্রচেষ্টার পর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রাসঙ্গিক অঞ্চলে বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষা জোরদার করার জন্য সক্রিয়ভাবে উচ্চ-প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম এবং উপায় ব্যবহার করেছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশে বন্য এশীয় হাতির বর্তমান জনসংখ্যা তিনশতাধিক হয়েছে, ইয়ুন নান প্রাদেশিক বনায়ন ও তৃণভূমি ব্যুরো প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এই বছরের প্রজনন মৌসুমে বাচ্চা হাতির জন্মের শীর্ষে দেখা গেছে বলে সংখ্যাটি এখনও প্রসারিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ইয়ুন নান এশীয় হাতি তিনটি সুস্পষ্ট পরিবর্তন দেখিয়েছে: সংখ্যা বৃদ্ধি, গোষ্ঠীর বৃদ্ধি এবং অভ্যাসের পরিবর্তন। একদিকে, পরিবর্তন এশীয় হাতিদের রক্ষা করার প্রচেষ্টার ফলকে প্রতিফলিত করে, কিন্তু অন্যদিকে এটি একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি দেখা দেয়। তা হলো, মানুষ ও হাতির কার্যকলাপের স্থান অত্যন্ত কাছাকাছি।

ইয়ুন নান বন ও তৃণভূমি ব্যুরোর অধীনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক লি পেং বলেন যে, বন্য হাতিদের মুখোমুখি হলে লোকেরা তাদের মনোযোগ বিভ্রান্ত করে পালিয়ে যেতে পারে। তবে, এ অবস্থা এড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, ‘এশীয় হাতিরা গোলক, সিলিন্ডার এবং ফিতা আকৃতির বস্তুর প্রতি খুব আগ্রহী। তারা এসব জিনিস দিয়ে খেলতে পছন্দ করে। আপনি এসব জিনিস দিয়ে হাতিদের মনোযোগ বিভ্রান্ত করতে পারেন। তারা ক্ষণিকের জন্য বিভ্রান্ত হলে আপনার পালানোর সুযোগ থাকবে। কিন্তু সাধারণভাবে বলতে গেলে, মানুষ এবং বন্য প্রাণীদের জন্য সবচেয়ে মৌলিক নীতি হল যে মানুষ এবং বন্য প্রাণীরা তাদের নিজস্ব স্থানে থাকে। "

এই সমস্যা মোকাবিলা করে, ঘন ঘন হাতির কার্যকলাপ সহ অঞ্চলগুলোতে একটি ব্যাপক এশীয় হাতি পর্যবেক্ষণ এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ম্যানুয়াল মনিটরিং ছাড়াও, আকাশে ড্রোন এবং মাটিতে ইনফ্রারেড ক্যামেরা রয়েছে যা বন্য অঞ্চলে হাতি গণনা এবং রক্ষা করতে সহায়তা করে।

সি সুয়াং বান না জাতীয় প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা গবেষণাগারের এশীয় হাতি মনিটরিং কেন্দ্রের পরিচালক থান সুই জি বলেন, "হাতিদের মনিটরিং এবং শনাক্ত করা থেকে শুরু করে আগাম সতর্কবার্তা জারি করতে মাত্র ১২ সেকেন্ড সময় লাগে। প্লাটফর্মটি তৈরি হওয়ার পর থেকে এর কভারেজ এলাকায় কোনো মানুষ-হাতি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।" তিনি জানান, যেখানে এশীয় হাতিরা প্রায়শই ঘুরে বেড়ায়, কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা বন্য হাতির গতিবিধি নিরীক্ষণের জন্য একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।

হাতির কার্যকলাপের সন্দেহজনক লক্ষণ পাওয়া গেলে, ইনফ্রারেড ক্যামেরা অবিলম্বে তা ক্যাপচার করে, এবং তারপরে মনিটরিং রুমের কর্মীরা নিশ্চিত করার জন্য অন-ডিউটি ব্যবস্থাপনা কর্মীদের অবহিত করে। যদি এটি বন্য হাতির কার্যকলাপ বলে নিশ্চিত করা হয়, তবে সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি আগাম সতর্কবার্তা জারি করে এবং রেডিওর মাধ্যমে কাছাকাছি বাসিন্দাদের অবহিত করে।

এই প্রকল্পে রয়েছে: নেটওয়ার্ক তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি ব্যাকএন্ড ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম স্থাপন, কাছাকাছি বাসিন্দাদের যাতায়াতের নিরাপত্তার দিকে মনোযোগ দিতে এবং হাতি পাওয়া যায় এমন এলাকা থেকে দূরে থাকার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ১৭৭টি স্মার্ট রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন ইত্যাদি। চালু হওয়ার পর থেকে, প্ল্যাটফর্মটি ১ লাখেরও বেশি আগাম সতর্কতা জারি করেছে, কার্যকরভাবে "মানব-হাতি সংঘর্ষ" এড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বিশ্ব এখনও একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং প্রাণীদের মঙ্গলের জন্য কাজ করা উচিত।

জাতীয় বন ও তৃণভূমি ব্যুরোর এশীয় হাতি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছেন ফেই বলেন, "আমরা ভবিষ্যতে আরও আন্তর্জাতিক বিনিময় এবং সহযোগিতা আশা করি। আমি মনে করি হাতি পর্যবেক্ষণ, সংরক্ষণ এবং গবেষণায় চীনের অভিজ্ঞতা এবং অনুশীলন আরও দেশের সাথে ভাগ করে নেওয়ার যোগ্য। আমরা এই তথ্য এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে এই প্রজাতি রক্ষা করার জন্য আরও সহযোগিতার আশা করি।

ইউন নানে, এশীয় হাতিদের জন্য মনোনীত একটি জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ পুরোদমে চলছে। এই সুবিধাটি অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য একটি বৃহত্তর এবং আরও সম্পূর্ণ আবাসস্থল প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn