বাংলা

২০ বছর ধরে বাঘ লালনের গল্প

CMGPublished: 2024-08-15 17:19:47
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

দক্ষিণ চীনের বাঘ একটি বাঘের উপ-প্রজাতি, যা চীনের জন্য অনন্য এবং সবচেয়ে বিপন্ন বাঘের উপপ্রজাতি। বর্তমানে দেশে মাত্র ২০০টির কিছু বেশি অবশিষ্ট রয়েছে।

ফুচিয়ান প্রদেশের লুং ইয়ান শহরের শাংহাং উপজেলার মেইহুয়া পর্বতে, রয়েছে চীন দেশের সবচেয়ে বড় দক্ষিণ চীন বাঘের প্রজনন এবং প্রশিক্ষণ বেস। এখানে ‘বাঘের পিতা এবং বাঘের মাতা’ দক্ষিণ চীনের বাঘকে রক্ষা করার জন্য পাহাড়ে শিকড় গেড়েছেন এবং তাদের কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য সহাকারে এবং ভালোবাসার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ চীনের বাঘগুলো রক্ষা করার গল্প লিখছেন। এদের একজন লুও হোং সিং আর অন্যজন হলেন ছেন থেং থেং।

১৯৯৮ সালে লুং ইয়ান শহর সর্বপ্রথমে চীনজুড়ে দক্ষিণ চীন বাঘ সুরক্ষার প্রকল্প চালু করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। মেই হুয়া পর্বতে দক্ষিণ চীন বাঘ প্রজনন গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রথমে মাত্র চারজন কর্মচারী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং লুও হোং সিং তাদের একজন। অনভিজ্ঞতার কারণে, লুও হোং সিং বাঘের সংস্পর্শে এসে অনেক আঘাত পেয়েছিলেন।

বসন্ত চলে যাওয়া এবং শরতের আগমনের সাথে সাথে, বাঘের সাথে খেলার সময় যে ক্ষতগুলো থেকে যায়, তা স্থায়ী দাগে পরিণত হয়। ইনস্টিটিউটের কর্মীরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে দক্ষিণ চীনের বাঘ সম্পর্কে তাদের বোঝার উন্নতি করেছেন এবং প্রজনন ও সুরক্ষার কাজ ধীরে ধীরে উন্নত করেছেন।

ফু চিয়ান প্রদেশের মেই হুয়া পবর্তে দক্ষিণ চীন বাঘ প্রজনন গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক লুও হোং সিং বলেন, “আমি বাঘের আচরণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য সারাদিন বাঘের কাছাকাছি বসে থেকেছি এবং দেখতে পেয়েছি যে পুরুষ এবং মহিলা বাঘ উভয়েরই বাছাই থাকে। তারপর আমরা দু’বাঘের প্রায়শই খাঁচা বিনিময় করতাম, যাতে একে অপরের গন্ধের সাথে পরিচিত হতে পারে। তারপর আমরা তাদের খাবারে যথাযথ পুষ্টি যোগ করার চেষ্টা করেছি এবং অবশেষে ২০০৩ সালে তারা সফলভাবে প্রজনন করেছে।”

গত ২০ বছরে ইনস্টিটিউটে মোট ৭৪টি দক্ষিণ চীন বাঘের জন্ম হয়েছে, যার বেঁচে থাকার হার ৭০ শতাংশ। প্রথম তিনটি প্রজননকারী বাঘ থেকে শুরু করে আজকের বড় পরিবার পর্যন্ত, লুও হোং সিং’র মতো বাঘের প্রজননকারীরা শিশুদের মতো দক্ষিণ চীনের বাঘের ভালো যত্ন নেন এবং এদের সুরক্ষার পথে এগিয়ে চলেন।

প্রজনন মাত্র সূচনা। কীভাবে বাঘের শাবককে বেড়ে উঠতে দেওয়া যায় এবং সত্যিকারের ‘বনের রাজা’ করে তোলা যায়, সেটি গুরুত্বর্পর্ণ বিষয়। এটি ‘বাঘের পিতা এবং বাঘের মাতা’র জন্য একটি নতুন বিষয় দাঁড়িয়েছে।

ছেন থেং থেং, যিনি ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ফুচিয়ান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটিতে ক্লিনিকাল ভেটেরিনারি মেডিসিনে মাস্টার্সের ছাত্র এবং ৯ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। তিনি আমাদের সাংবাদিককে বলেন, সমস্ত দক্ষিণ চীনের বাঘ তাদের নিজের মা-বাঘ দ্বারা লালিত হয় না। কিছু মাদি বাঘ তাদের নবজাতককে উপেক্ষা করে। এই ঘটনাটিকে ‘শাবক পরিত্যাগ’ বলা হয়। অতএব, এই পরিত্যক্ত বাঘের শাবকদের কৃত্রিমভাবে খাওয়ানো প্রয়োজন। যদি এই বাঘের বাচ্চাগুলো মা বাঘের বুকের দুধ পান করতে না পারে, তাহলে তাদের কী ধরনের দুধ খাওয়ানো উচিত? এটি প্রশিক্ষণ বেসে "বাঘের পিতা এবং বাঘের মাতা’র সামনে আরেকটি সমস্যা হয়ে উঠেছে।

ছেন থেং থেং বলেন, আমরা আগে অনলাইনে বিড়ালের দুধের গুঁড়া, কুকুরের দুধের গুঁড়া এবং পোষা প্রাণীর দুধের গুঁড়া কিনতাম এবং আমরা ছাগলের দুধের গুঁড়াও খাওয়াতাম। আমরা দেখতে পেলাম যে, খাওয়ানোর এক সপ্তাহ পর বাঘের বাচ্চার খুব গুরুতর লোম পড়ার পরিস্থিতি দেখা দেয়। পরে আমরা ভাবলাম যে, শাবকগুলোকে খাওয়ানোর জন্য বাঘের দুধের গুঁড়া তৈরি করা যায় কি না? আমরা বাঘের দুধ সংগ্রহ করে পেশাদার পরীক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাই। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা বাঘের দুধের গুঁড়া তৈরির ব্যবস্থা করি।”

যারা কৃত্রিমভাবে বাঘের বাচ্চাদের খাওয়ান, তারা এই বিস্ময়কর সংযোগের মাধ্যমে বাঘের বাচ্চাদের আসল ‘আয়া’ হয়ে ওঠেন। মানুষ এবং বাঘের মধ্যে বিশুদ্ধ নির্ভরতা এবং বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয়।

খাওয়ানোর পর্যায় পার হওয়ার পর, বাঘের বাচ্চা বড় হলে দুধ ছাড়ানো দরকার। দুধ ছাড়ানো সাথে সাথে ধাপে ধাপে রিওয়াইল্ডিং প্রশিক্ষণ দিতে হয়। ছেন থেং থেং বলেন, “যে কিছু বাঘ যাদের খাঁচায় রাখা হয়েছে, সে বাঘগুলো এমনকি ঘাস দেখেও ভয় পায় এবং ঘাসের মাঠে ঢোকার সাহস করে না। এই লক্ষ্যে, ‘বাঘের পিতা এবং বাঘের মাতা’র বিভিন্ন বয়সের বাঘকে তাদের শিকারের দক্ষতা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন জীবন্ত প্রাণী শিকারের প্রশিক্ষণ প্রদান করে।”

আজ, মেইহুয়া পবর্তে ৩৬টি দক্ষিণ চীনের বাঘ মুক্ত-পরিসীমা এলাকায় বাস করে এবং বাঘগুলোর মধ্যে ২০টি মুক্ত-পরিসীমা এলাকায় বন্য বড় জীবজন্তু শিকার করতে এবং বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ‘বাঘের পিতা এবং বাঘের মাতা’র প্রচেষ্টার পর মেই হুয়া পর্বতের দক্ষিণ চীনের বাঘগুলো কেবল বেঁচেই থাকছে তা নয়, বরং বন্য পরিবেশে বসবাসও করছে। যা দক্ষিণ চীনের বাঘগুলোর আরও বৃহত্তর পরিসরে বিস্তারের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn