বাংলা

সিন চুয়াং গ্রামের হাসি

CMGPublished: 2024-08-09 10:00:03
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

৮৭ বছর বয়সী চাও ছুং হ্য’র অবয়ব স্পষ্ট, স্লিম ফিগার, সাদা চুল এবং ধূসর মুখ পাতলা; কিন্তু তার মুখে ফুটে উঠে কেবল হাসি। বলেন, “গ্রামে যে পরিবর্তন এসেছে, তা অল্প কথায় বর্ণনা করা যাবে না। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে রাস্তার দু’পাশে সবজি ও ফলমূলের আবাদ করা হয়েছে এবং পরিবেশও ভালো হয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চলে বসবাস মানে একটি ভাল জীবন যাপন।” গ্রামের পরিবর্তনের কথা স্মরণ করে কথার শেষ নেই চাও ছুং হ্য’র। প্রতি ত্রৈমাসিকে, গ্রামে একটি ‘হুয়াই তে বার্থডে পার্টি’ হয়। এ সময় ছিন অপেরা পরিবেশনের জন্য একটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং বৃদ্ধদের কেক খাওয়ানো হয়। তাতে চাও ছুং হ্য মুগ্ধ হন।

যেখানে চাও চুং হ্য বাস করেন, সে গ্রামের নাম সিন চুয়াং গ্রাম। এটি শায়ানসি প্রদেশের ফু পিং জেলার উপকণ্ঠে একটি গ্রাম। গ্রামটিতে আছে ২ হাজার ১৮০ জন অধিবাসী। এখানকার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে পানির অভাব রয়েছে। তাই দীর্ঘকাল ধরে পানি এখানকার মানুষদের একটি বড় সমস্যা।

চাও ছুং হ্য বলেন, অতীতে লোকেরা জল তোলার জন্য গভীর কূপ খননের উপর নির্ভর করত। লোকেরা জলের জন্য লাইন ধরতো। তবে, পিছনে যারা থাকতো, তাদের কূপ থেকে আনা পানি একদন অপরিষ্কার হতো। ভাল জল পাওয়ার জন্য, কিছু লোক ভোর চার বা পাঁচটায় লাইনে দাঁড়াতেন।

২০১৩ সালে, চিং হুই খাল প্রকল্পটি উন্নয়ন এবং সংস্কার করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের বাড়িতে জলের পাইপ সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু জল সরবরাহ অস্থিতিশীল ছিল। ২০২২ সালের মে মাসে, কালো নদীর উচ্চমানের জল আনুষ্ঠানিকভাবে ফু পিং-এ আনা হয়। এ কাউন্টি এবং আশেপাশের অঞ্চলে একমাত্র ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে পাল্টে যায়।

জলের সমস্যা সমাধান এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের জন্য নীতি সহায়তার মাধ্যমে, সিন চুয়াং গ্রাম দ্রুত বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। গ্রামবাসীরা এখন আর শুধু গম এবং মিষ্টি আলু চাষ করে না; আঙ্গুর, স্ট্রবেরি এবং চেরিও চাষ করছে এবং গাছগুলোতে প্রচুর ফল ধরে।

দৃশ্যমান এবং বাস্তব পরিবর্তনগুলো শুধু জলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ২০২২ সালে, সিন চুয়াং গ্রাম একটি গ্রামের রাস্তা উন্নয়ন এবং পুনর্গঠন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। যার ফলে ৩.৫ মিটার প্রশস্ত গ্রামীণ পথটি ৫ মিটার চওড়া সিমেন্ট সড়কে প্রসারিত হয়েছে। জটলা পাকানো এবং অগোছালো তারগুলো অদৃশ্য হয়েছে, এবং পয়ঃপ্রবাহের সমস্যা সমাধান হয়েছে। সিন চুয়াং গ্রাম একটি সুন্দর নতুন পল্লীতে পরিণত হয়েছে এবং বহুদূরে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

একই বছরে, সিন চুয়াং গ্রামে একটি পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়, যাতে গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকার ১২০ জনেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সুয়ে ইয়ান ছিং বাইরে কাজ করছিলেন। যখন তিনি শুনেছেন যে গ্রামে চাকরির সুযোগ রয়েছে, তিনি বাড়িতে গিয়ে চাকরি খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তাহলে তিনি তার বাচ্চাদের এবং বয়স্কদের যত্ন নিতে পারবেন, এবং প্রতি মাসে তিন হাজার ইউয়ানেরও বেশি উপার্জন করতে পারবেন।

শুধু সুয়ে ইয়ান ছিং নয়, ৩৬ বছর বয়সী কুয়ান ছুয়ান এর আগে সি’আন শহরের একটি বারবিকিউ রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। যখন তিনি শুনেছেন, গ্রামে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, তখন তিনি গ্রামে ফিরে এসে একটি বারবিকিউ দোকান চালু করেছেন।

৫৪ বছর বয়সী হু সিন পেং ২০২১ সালে আপেল চাষের সুযোগ কাজে লাগান। এখন তিনি ১০ হেক্টর জমি চুক্তি করে রুই সিয়ে আপেল চাষ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “আমার আপেল মুলত অন-লাইনে বিক্রি হয়। এক মাসে ৫০ হাজার কেজি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছি। কখনো কল্পনা করতে পারি নি যে, মোবাইলের মাধ্যমে এতো বেশি আপেল বিক্রি করতে পারবো।”

জানা গেছে, ২০২৩ সালে সিন চুয়াং গ্রামে আসা পর্যটকের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ২৩ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়েছে। গ্রামের সামস্টিক অর্থনৈতিক আয় ২০২১ সালের ১.৬ লাখ ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০২৩ সালের ৮.৯ লাখ ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে। এ বছরে এ অংক ১০ লাখ ইউয়ান ছাড়াবে বলে আশা করা যায়। সিন চুয়াং গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদক ফেং চাও বলেন, “আমরা গ্রামের কলেজ ছাত্রদের পুরষ্কার দেওয়ার জন্য আয়ের একটি অংশ ব্যবহার করা এবং গ্রামবাসীদের জন্য আরও ব্যবহারিক কাজ করার পরিকল্পনা করছি।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn