মালয়েশিয়ার জ্বালানি ক্ষেত্রের সবুজ রূপান্তরে চীনা প্রতিষ্ঠান
মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলীয় কুয়ালা কেটিলে শতাধিক হেক্টরের একটি ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন দাঁড়িয়ে আছে। হাজার হাজার ফটোভোলটাইক প্যানেল রোদে চিকচিক করছে। অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে একে দূর থেকে দেখলে উঁচু-নিচু ঢেউয়ের মতো, খুবই জাঁকালো দেখায়।
এটি হলো চায়না জেনারেল নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশনের (সিজিএন) অধীনে এদ্রা পাওয়ার হোল্ডিংস পরিচালিত বিদ্যুত্ কেন্দ্র। চায়না এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোং, লিমিটেডের থিয়ানচিন পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোং, লিমিটেড এটি নির্মাণ করে। বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট এবং ২০১৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়, যা স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনের জন্য দূষণমুক্ত জ্বালানি সরবরাহ করে।
বিশ্বের নিম্ন-কার্বন নির্গমন ও টেকসই উন্নয়ন প্রবণতা মেনে চলার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়া জীবাশ্ন জ্বালানির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হয়ে, বিদ্যুত্ কাঠামোয় নবায়নযোগ্য জ্বালানির হার উন্নীত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ফটোভোলটাইক শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে নেতৃত্বাধীন অবস্থান দিয়ে চীন, মালয়েশিয়ার সবুজ রূপান্তরের জন্য সরঞ্জাম দেওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিও সরবরাহ করে।
পাওয়ার স্টেশনে প্রশাসনিক বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নুর আজি সিয়ামরা জানান, পাওয়ার স্টেশনের ব্যবহৃত ফটোভোলটাইক প্যানেল, বৈদ্যুতিন সংকেতের মেরু বদল ও ট্রান্সফরমার সবই চীনা পণ্য। স্টেশন নির্মাণের সময় চীনা বিশেষজ্ঞরা নির্দেশনা দিতে এসেছিলেন।
আরো ভালোভাবে স্টেশনটি অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এদ্রা কোম্পানি তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য চীনে পাঠিয়েছে। ভিকি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, চীনে তারা ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অপারেশন পদ্ধতি শিখেছেন এবং ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন পরিদর্শন করেছেন। ফিরে যাবার পর তার কাজ আরো দক্ষতাপূর্ণ এবং প্রত্যয়ও আরো বেশি হয়েছে।
কুয়ালা কেটিল ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন চীন-মালয়েশিয়া সবুজ জ্বালানি সহযোগিতার একটি নজির। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ করা ফটোভোলটাইক প্রকল্প বাড়ছে। নির্মাণ ক্ষেত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানও দেশটির ফটোভোলটাইক খাত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। ত্রিনা সোলার কোং লিমিটেডের মতো বেশ কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় বহু বছর বিনিয়োগ করছে এবং স্থানীয় ফটোভোলটাইক সম্পূর্ণ শিল্প চেইনের উন্নয়ন শক্তিশালী করছে।
ফটোভোলটাইক খাত ছাড়া মালয়েশিয়া হাইড্রোজেন শক্তি, জৈব-শক্তি ও কার্বনডাই-অক্সাইডের ক্যাপচার, ব্যবহার ও স্টোরেজ গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। চীনা প্রতিষ্ঠান এসব ক্ষেত্রের প্রযুক্তি দিয়ে দেশটির সঙ্গে এনার্জি স্টোরেজ পাওয়ার স্টেশন, হাইড্রোজেন উৎপাদন ও স্টোরেজ ইন্টিগ্রেশন এবং হাইড্রোজেন শক্তির স্মার্ট ট্রামসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করেছে।
সবুজ পরিবহন মালয়েশিয়ার সবুজ রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। নিট শূন্য নির্গমন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে দেশটির সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্প উন্নয়নে উত্সাহ দেয়। দ্য গ্রেট ওয়াল ও বিওয়াইডি’র মতো চীনা গাড়ি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় এসে নতুন জ্বালানি গাড়ি মডেল ব্যবস্থাপনা করে বা স্থানীয় উত্পাদন ও সমন্বিত বন্টন করে। স্থানীয় জনগণকে বুদ্ধিমান যাত্রার অভিজ্ঞতা দেয়ার পাশাপাশি আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
অ্যাসোসিয়েটেড চাইনিজ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অফ মালয়েশিয়ার উচ্চতর জেনারেল লু ছেংছুয়ান বলেন, বর্তমানে আরো বেশি ব্র্যান্ডের চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি আসিয়ান দেশগুলোর বাজারে প্রবেশ করছে। চীনের নতুন জ্বালানি গাড়ি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট নীতি কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়ায় উত্পাদন ঘাঁটি ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে, দেশটির বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের উন্নয়ন বেগবান করতে পারবে।
মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক উপমন্ত্রী লিউ জেনতোং চীনা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা দেশটির প্রযুক্তিগত উন্নতি ও সবুজ রূপান্তরে আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন।