বাংলা

ছোট উলফবেরি উত্তর-পশ্চিম চীনের মরুভূমিকে সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে

CMGPublished: 2024-07-19 15:56:25
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

৪৯ বছর বয়সী হু ইয়ু চু কখনও ভাবেননি যে, তার শহরের নির্জন বালুকাময় মরুভূমি, যেটি ১০ বছর আগেও অনুর্বর তৃণভূমি ছিল এবং লোকজন এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচতো, তা এখন লাল ফল দিয়ে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন তার এবং গ্রামবাসীদের জীবিকা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তাদের জীবন উন্নত হয়েছে।

এমন ইতিবাচক পরিবর্তনটি মূলত ছোট লাল ফল – উলফবেরি চাষাবাদের মাধ্যমে হয়েছে। উলফবেরি একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা ঔষধি ও ভেষজ উদ্ভিদ যার ইতিহাস তিন হাজার বছরেরও বেশি। চীনের মূল উলফবেরি উত্পাদন এলাকা হিসেবে, নিং সিয়া উলফবেরি খুব মূল্যবান, এটি একমাত্র উলফবেরি যা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ফার্মাকোপিয়ায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

হু ইয়ু চু বাস করেন নিং সিয়া অঞ্চলের উতাও ছু গ্রামে। তার নিজ শহর ছোং নিং জেলা হল ‘চীনা উলফবেরির আদি শহর’। এখন নিং সিয়াতে উলফবেরি বাছাইয়ের মৌসুম। তার এবং তার সহকর্মীদের জন্য প্রতিদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মিংশা উপজেলার সি জান ইকোলজিক্যাল উলফবেরি বাগানে এই তাজা উলফবেরি সংগ্রহ করা। পরে এ সব তাজা উলফবেরি বিভিন্ন ধরনের শুকনো উলফবেরি ও উলফবেরি পিউরি তৈরি করে বিক্রি করা হবে।

হু ইয়ু চু বলেন, “আপনি এক কেজি তাজা উলফবেরি ফল সংগ্রহ করে ৫ ইউয়ান উপার্জন করতে পারেন। আমি দিনে কমপক্ষে ৩০-৩৫ কেজি তুলতে পারি এবং যারা দ্রুত হাতে কাজ করতে পারেন, তাঁরা ৫০ কেজির বেশি সংগ্রহ করতে পারেন।” কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে হু ইয়ু চু ইতিমধ্যেই লাল ফলটি দিয়ে তার ঝুড়ি ভরিয়ে ফেলেছেন। তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আগে এই জায়গায় বালি উড়ে যেত, এবং আকাশ এতটাই ঘোলাটে ছিল যে, খাওয়ার বাটির নীচে বালি থাকত। এখন উলফবেরি গাছগুলো সবুজ, ফলগুলো লাল, আবহাওয়া ভালো, এবং আয় ভাল হয়েছে।”

মিংশা উপজেলা মধ্য নিং সিয়া’র শুষ্ক অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে একসময় বাতাস এবং বালি-ঝড়ের কারণে অনেক বালুকাময় এবং লবণাক্ত-ক্ষারীয় জমি রয়েছে। ফলে এখানে ফসল ফলানো কঠিন। একই সময়ে স্থানীয় সূর্যালোকের সময় দীর্ঘ, দিন এবং রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি এবং শিল্প-দূষণ নেই। ২০১৩ সাল থেকে, সি জান মিংশা উপজেলায় ৬৬৬ হেক্টর একটি পরিবেশগত উলফবেরি রোপণের ভিত্তি তৈরি করেছে এবং আশেপাশের অনুর্বর সৈকত এবং লবণাক্ত-ক্ষারীয় জমিগুলোকে ব্যাপকভাবে রূপান্তরিত ও ব্যবহার করেছে।

সি জান উলফবেরি বাগানের উপমহাপরিচালক চু সিয়াও পিং স্মরণ করে বলেন, কখনও কখনও এক রাতে বাতাস এবং বালি প্রবাহিত হওয়ার পর ২০ সেন্টিমিটার লম্বা উলফবেরি চারাগুলো ঢাকা পড়ে যায়। শ্রমিকরা যখন সকালে উঠে, তখন তাদের তাঁবুগুলো বালির নীচে আটকে পড়া সাধারণ ব্যাপার। তা সত্ত্বেও আগামী এপ্রিলে গাছ লাগানোর প্রস্তুতি নিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন সবাই। ২০১৪ সালের বসন্তে, অনুর্বর জমিতে ৪.৫ লাখ উলফবেরি চারা রোপণ করা হয়েছে এবং সবগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশ বেঁচে ছিল।

নিং সিয়া অঞ্চলের উলফবেরি চাষাবাদ করা ১৯টি জেলার মধ্যে বেশিরভাগই অনুর্বর জমি এবং জলের অভাব রয়েছে। উলফবেরি খরা এবং লবণ-ক্ষার প্রতিরোধী। যার রোপণ এলাকা সম্প্রসারণের সাথে, এটি শুধুমাত্র মরু সৈকতকে সবুজ করে না, এটি মানুষকে সমৃদ্ধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় শিল্পে পরিণত হয়েছে।

উ ছোং শহরের হোং সি পাও অঞ্চল দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য চীনের বৃহত্তম অভিবাসীদের কেন্দ্রীভূত পুনর্বাসন এলাকা। উলফবেরি রোপণ-শিল্প উন্নয়ন করা স্থানীয় পরিবেশ উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চেষ্টার ফলে প্রতিটি উলফবেরি বাগান ধীরে ধীরে আকারে বেড়েছে।

হোং সি পাও জেলার পাই রুই ইউয়ান ইকোলজিক্যাল উলফবেরি চাষ ঘাঁটিতে, প্রায় এক হাজার ফল সংগ্রহকারী উলফবেরি ক্ষেতে ব্যস্ত রয়েছেন। এই মরূদ্যানটি ১০ বছরেরও বেশি আগে উড়ন্ত বালি ও পাথরের একটি মরুভূমি ছিল, এমনকি কোনো ঘাসও ছিলো না।

আজ, আরও বেশি গ্রামবাসী উলফবেরি বাগানে কাজ করে ধনী হচ্ছে এবং ফসল তোলার মৌসুমে তাদের আয় অনেক বাড়ছে।

পাই রুই ইউয়ান ইকোলজিক্যাল উলফবেরি চাষ ঘাঁটির মহাব্যবস্থাপক মা থাও বলেন, ঘাঁটিতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ হাজার লোক নিয়োগ করা হয়, যার মধ্যে শুধুমাত্র হোং সি পাও’র স্থানীয় লোকেরাই নয়, আশেপাশের অঞ্চল এবং জেলায় অভিবাসী শ্রমিকরাও প্রতি বছর শ্রম দিতে আসেন। তাদের জন্য প্রতি বছরে ৭০ লাখ ইউয়ানেরও বেশি ফি দেওয়া হয়।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn