‘কিউআর কোড’ পণ্যভোগ সুবিধায়, চীনে বিদেশীদের মোবাইল পেমেন্ট লেনদেন দ্বিগুণ
বর্তমানে চীনের মোবাইল পেমেন্টের জনপ্রিয় করার হার ৮৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে বিদেশী বন্ধুদের আরো ভালোভাবে মোবাইল পেমেন্টের সুবিধা সম্পর্কে ধারনা দেয়া যায়? সম্প্রতি পেমেন্ট শিল্পে বিভিন্ন পক্ষ ইতিবাচকভাবে ‘আউটসোর্সিং ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার’ (একটি অর্থপ্রদানের পদ্ধতি যেখানে ওয়াংলিয়ান ক্লিয়ারিং কোম্পানি প্রধান অনলাইন পেমেন্ট চ্যানেলের ভূমিকা পালন করে এবং বিদেশী বাসিন্দাদের দেশীয় ব্যবসায়ীদের অর্থ প্রদানের জন্য সরাসরি বিদেশী ওয়ালেট ব্যবহার করতে সহায়তা করে।) এবং ‘বিদেশী কার্ডের অভ্যন্তরীণ বাইন্ডিং’ (ওয়াংলিয়ান ক্লিয়ারিং কোম্পানির দ্বারা চালু করা একটি ব্যবসায়িক মডেল, যা বিদেশী বাসিন্দাদের ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মতো বিদেশী ব্যাঙ্ক কার্ডগুলোকে দেশীয় ওয়ালেটে আবদ্ধ করতে সহায়তা করে, বিদেশী ব্যাঙ্ক কার্ড এবং দেশীয় বারকোড পেমেন্টের মধ্যে বিরামহীন সংযোগ উপলব্ধি করে, এটি সহজ করে তোলে। চীনে আসা মানুষরা দেশের মধ্যে সহজেই অর্থ প্রদান করতে পারে।) এটি তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে চীনে আসা বিদেশি মানুষের পেমেন্ট লেনদেন দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া চীনের ডিজিটাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ফলাফলের প্রতি আরো গভীর অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের।
অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা দম্পতি জেমি ও লিয়ানা ছেংদু শহরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে গভীর ও বৈশিষ্ট্যময় বাশু সংস্কৃতির ‘খুয়ান জাই গলি’ বা বিস্তৃত-সংকীর্ণ গলি দর্শনীয় স্থানে রাস্তার ধোঁয়া অনুভব করতে আসেন। এবারের ভ্রমণ তাদের মনে যেটা গভীর ছাপ ফেলে, সেটি হলো প্রায়ই প্রত্যেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাউন্টারের সামনে পেমেন্ট কিউআর কোড আছে।
চীনা বন্ধুর সাহায্যে লিয়ানা একটি কফি শপে প্রথমবারের মতো আলিপে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা পান। ‘খুব দ্রুত, খুব সুবিধাজনক’। লিয়ানা বললেন, ভ্রমনের অধিকাংশ সময় তিনি নগদ বা ক্রেডিট কার্ডে পে করেন। চীনের মোবাইল পে’র অভিজ্ঞতা তার জন্য ‘খুবই বৈশিষ্ট্যময়’ অনুভুতি দেয়।
চীনের ট্রানজিট ভিসা-মুক্ত নীতি অনেক বিদেশী পর্যটককে চীনে ভ্রমন করতে আকর্ষণ করছে। তাদের মধ্যে অনেকের জন্য কিউআর কোড পে অভিজ্ঞতাগুলোর অন্যতম।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে মোবাইল পে’র দ্রুত উন্নয়ন হয় এবং এটি বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। পুরোপুরিভাবে চীনে আসা বিদেশীদের চাহিদা বিবেচনা করে, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘অধিকতরভাবে পেমেন্ট পরিষেবা সুবিন্যস্ত করে, পেমেন্ট সুবিধাকরণ সংক্রান্ত মতামত’-এ অধিকতরভাবে মোবাইল পেমেন্টের সুবিধাকরণ উন্নীত করার কথা উল্লেখ করা হয়।
এ প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেশে-বিদেশে পেমেন্ট সুষ্ঠু করার চেষ্টা চালিয়ে, এক দিকে বিদেশী ব্যাংক কার্ড আলিপে’র মতো চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক পণ্যভোগের সঙ্গে সংযুক্ত করে, অন্য দিকে আরো বেশি বিদেশি ই-ওয়ালেট চীনে ব্যবহার সমর্থন দেয়।
নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ‘বিদেশী কার্ডের অভ্যন্তরীণ বাইন্ডিং’ পরিষেবা লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৩.৭ কোটির বেশি এবং মূল্য ছিল ৫৪১.৭ কোটি ইউয়ান, যা যথাক্রমে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৬৫ ও ৮.০৩ গুণ বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থার বেগবান হওয়ায় চীনে আসা বিদেশীদের অনলাইন ও অফলাইন পণ্য ও পরিষেবা কেনার পেমেন্ট অভিজ্ঞতাও ধারাবাহিকভাবে সুবিন্যস্ত হয়। ই-কর্মাস প্ল্যাটফর্মের বিক্রয় প্রচারে ‘বিদেশী কার্ডের অভ্যন্তরীণ বাইন্ডিং’ পরিষেবার লেনদেন স্পষ্টভাবে বেড়েছে। জানা গেছে, গত ১৫ জুন ‘বিদেশী কার্ডের অভ্যন্তরীণ বাইন্ডিং’ পরিষেবার মাত্রা ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছিল। সেদিন সাফল্যের সঙ্গে লেন-দেনের সংখ্যা ৩.২ লাখ এবং মূল্য ছিল ৪৭৮.৫ লাখ ইউয়ান।
অবশ্যই এসবই পিপলস ব্যাংক অফ চায়না’র সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থার সমর্থন ছাড়া হয়নি। একটি মোবাইল ফোন দিয়ে চীনে ভ্রমন করা আরো বেশি বিদেশীদের দারুণ অভিজ্ঞতায় পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি ১০৩টি দেশের ৭১৪ জন বিদেশী পর্যটকের উপর সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, চীনে ভ্রমণকারী ৮৬ শতাংশ বিদেশি পর্যটক মনে করেন, চীনে পেমেন্ট আরো সুবিধাজনক হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ চীনের মোবাইল পেমেন্টের বিষয়টি অনুধাবন করেছেন।
ছোংছিংয়ের জনগণের মুক্তি স্মৃতিস্তম্ভ থেকে ছেংদুয়ের ছুনসি রোড পর্যন্ত, দুধ চা থেকে হটপট পর্যন্ত, সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আইজ্যাক কয়েক দিনের মধ্যে দু’টো শহরের অনেক দর্শনীয় স্থানে বেড়িয়েছেন। বেড়ানোর পথে খাওয়া, খেলা, কেনাকাটা বা থাকা ইত্যাদি সবই মোবাইলের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হয়। দ্রুতগতির ট্রেন বা পাতাল রেলে করে সিঙ্গাপুরের স্থানীয় ই-ওয়ালেট ব্যবহার করা যায়, যা খুবই সুবিধাজনক।
চাজি সিছুয়ান শাখা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ছেন শিয়াওমিং জানান, চলতি বছর থেকে দোকানে পানীয় কেনার বিদেশি ক্রেতার সংখ্যা স্পষ্টভাবে বেড়েছে। কোন কোন বিদেশি ক্রেতা নিজেদের দেশের ই-ওয়ালেট দিয়ে পেমেন্ট করতে পেরে খুব খুশি।
বর্তমানে ‘আউটসোর্সিং ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার’ অন্তর্ভুক্তির মাত্রা অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে আলিপে সমর্থনকারী ‘আউটসোর্সিং ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার’ বিদেশি ওয়ালেটের সংখ্যা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও কাজাখস্তানসহ ৯টি দেশ ও অঞ্চলের ১২টিতে পৌঁছেছে।
দেশি-বিদেশি সংস্থা ‘পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট’ সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আর্থিক অবকাঠামোর মধ্যে সহযোগিতামূলক সংযুক্তিও জোরদার করা হচ্ছে।
নেটওয়ার্ক ইউনিয়ন ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানান, চলতি বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটি মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে আর্থিক অবকাঠামো পেনেট কোম্পানির সঙ্গে সযহোগিতার মাধ্যমে একবারই তার ৮টি সদস্য সংস্থার ই-ওয়ালেট অ্যাক্সেস করেছে। ‘নেটওয়ার্ক থেকে নেটওয়ার্ক’ সহযোগিতার পেমেন্ট পরিসেবা ‘প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত’ সুবিন্যস্তভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, যা ব্যাপকভাবে অ্যাক্সেস কার্যকারিতা ও সহযোগিতার মান উন্নীত করেছে।