বাংলা

‘গ্রামীণ ক্যাফে’তে পুনরুজ্জীবিত গ্রাম

CMGPublished: 2024-07-12 10:00:03
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের বেইজিংয়ের হুয়াই রুও গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদক ওয়াং স্যুয়ে ইয়োংয়ের স্মৃতিতে এ গ্রামে কয়েক দশক ধরে এখনকার মতো এত গাড়ি নেই।

বেইজিংয়ের উপকণ্ঠে একটি ছোট গ্রাম হুয়াই রুওতে তিনটি গ্রামীণ ক্যাফে খোলা হয়েছে। এ গ্রামে স্থায়ী বাসিন্দা ১০০ জনের বেশি নয়। কিন্তু প্রতি সপ্তাহান্তে, হ্য ইন ক্যাফেতে একাই দিনে ৫০০ জনের বেশি গ্রাহক আসেন।

এই গ্রামীণ ক্যাফে ছিং শাং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, যা বেইজিংয়ের প্রধান শহর এলাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। এটির তিন দিকে পাহাড় এবং একপাশে জল রয়েছে। হ্রদ এবং পাহাড়ের মুখোমুখি হয়ে গাছের ছায়ায় কাঠের চেয়ারে বসে, লেক থেকে বয়ে যাওয়া বাতাসে নিঃশব্দে কফির সুবাস উপভোগ করা যায় এ ক্যাফেতে। লোকেরা এই মুহুর্তের জন্য শহর থেকে ছোট পাহাড়ি গ্রামে এক ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে আসেন।

হ্য ইন ক্যাফে’র ম্যানেজার ওয়েই মিং বলেন, তিনি তিন বছর আগে প্রথম এই গ্রামে এসেছিলেন। এর অনন্য ভৌগলিক অবস্থান এবং পরিবেশের কারণে একটি গ্রামীণ ক্যাফে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। “ক্যাফেতে বসে আমার সামনে লেকের দিকে তাকানো যেন একটি চিত্রকর্মের মতো। এটি সত্যিই আমার মনকে মুক্ত করতে পারে। আমি যখনই শহর থেকে আসি, তখনই আমি আকস্মিক মুক্তি পাওয়ার অনুভূতি পাই।”

ওয়েই মিংয়ের অভিজ্ঞতা এখন অনেক গ্রাহকের সাথে অনুরণিত হয়। ৩২ বছর বয়সী ইং ইয়ান এই বছর তৃতীয়বারের মতো এই গ্রামের ক্যাফেতে এসেছেন। তিনি বলেন, “শহরের ক্যাফেগুলোর বিপরীতে, এখানে একটি বিস্তৃত জলাধার রয়েছে। লেকের ধারে বসে বাতাস উপভোগ করলে, দিনের কাজের ক্লান্তি দূর হবে।”

চীনের কফি বাজার ক্রমাগত প্রসারিত হওয়ায় মানুষের কফি খাওয়ার চাহিদা ধীরে ধীরে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে। আজ আরও বেশি সংখ্যক মানুষ কেবল দ্রুত-গতির শহুরে জীবনে ক্যাফেইনের সতেজতায় সন্তুষ্ট নয়, বরং গ্রামাঞ্চলে আরও অবসর এবং আরামদায়ক কফির অভিজ্ঞতার আকাঙ্ক্ষা করেন তারা।

সামাজিক মাধ্যমে হ্য ইন কফি পরিদর্শনকারী একজন গ্রাহক একটি বার্তায় রেখে বলেছেন, “লেকের ধারে ক্যাফেতে এক বিকেলের জন্য বসে প্রকৃতির আরামে নিজেকে ফাঁকা করে রাখলে, মনে হয় সব দুশ্চিন্তা ও বিভ্রান্তি দূর হয়ে যায়।” কিছু নেটিজেনরা মন্তব্য করেন, সবুজ হ্রদ এবং সবুজ পাহাড়ের সাথে মিলিত নীল আকাশ মানুষকে ইতালির মিলানের উপকণ্ঠে ‘লেক কোমো’ রিসার্টে থাকার মতো অনুভূতি দেয়।

শাং ওয়াং ইয়ু গ্রামে, হ্য ইন ক্যাফে থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে একটি মেই লুও ক্যাফে আছে। পাহাড়ের অনুসরণে এই ক্যাফেতে পাহাড়ের বিভিন্ন উচ্চতায় শতাধিক আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। মেই লুও ক্যাফে’র ব্যবস্থাপক ওয়াং ছুন লি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ব্যবসা শুরু করতে নিজের শহরে ফিরে আসেন এবং এই গ্রামীণ ক্যাফে খোলেন।

যে আঙ্গিনায় ক্যাফেটি অবস্থিত সেটি মূলত ওয়াং ছুন লি’র বাবার দ্বারা পরিচালিত একটি হোমস্টে হোটেল ছিল। কিন্তু ২৬ বছর বয়সী তরুণের দৃষ্টিতে তার বাবার ব্যবসায়িক ধারণাগুলো ‘খুব পুরানো’ ধরনের। কফি তৈরির প্রক্রিয়া শেখার পর এবং সারা দেশে ক্যাফে পরিদর্শন করার পর, ওয়াং ছুন লি ৩০০০ বর্গমিটারেরও বেশি প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী চীনা বৈশিষ্ট্যময় একটি গ্রামীণ ক্যাফে খোলেন। তিনি স্থানীয় উদ্ভাবনী উপাদান যোগ করেছেন এবং কিছু নতুন চীনা চা পানীয় যোগ করেছেন।

ওয়াং সুয়ে ইয়োং বলেন, “তরুণরা, যারা গ্রামে তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে এসেছিল, তাদের আছে একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি এবং উন্নত ধারণা, যা পুরো গ্রামের উন্নয়নকে বেগবান করেছে। আগে গ্রামে কোনো শিল্প ছিল না। এখন গ্রামীণ ক্যাফেগুলোর কারণে গ্রাম প্রাণবন্ত হয়েছে। লোকেরা বাড়িতে ফিরে কিছু পার্সিমন, আখরোট এবং অন্যান্য স্থানীয় বিশেষ পণ্য কিনবে, যা গ্রামে কৃষি ও পার্শ্ববর্তী পণ্যের বিক্রয়কে বাড়িয়েছে। তাছাড়া গ্রামে আরও বেশি হোমস্টে হোটেল এবং ফার্মহাউস রেস্তোরাঁ তৈরি করা হয়েছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn