বাংলা

একটি চা পাতার পিছনে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের গল্প

CMGPublished: 2024-07-05 10:00:03
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

পাহাড়, জঙ্গল এবং মেঘ ও কুয়াশায় ঢাকা সি চাং (তিব্বত) স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মো থুও জেলা সর্বদা ‘মালভূমির গোপন ভূমি’ হিসাবে পরিচিত। এখন এটি ‘চায়ের শহর’ হিসাবে একটি নতুন নাম অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।

ভারত মহাসাগরের উষ্ণ এবং আর্দ্র বায়ুপ্রবাহের সুবিধাভোগী হিসাবে, মো থুও বনভূমির আওতার হার ৭৮ শতাংশ। কিন্তু, জেলাটির জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি কৃষি উৎপাদনে নিয়োজিত। ২০ বছরেরও বেশি আগে, এখানকার লোকেরা মূলত শিকার এবং ভুট্টা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কীভাবে দারিদ্র্যমুক্ত এবং ধনী হওয়া যায় তা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষদের ভাবনার বিষয় ছিল। ২০১৩ সালে সালে, পো-মো মহাসড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। মো থুওতে রাস্তা বন্ধ হওয়ার ইতিহাসের অবসান ঘটেছে এবং নতুন উন্নয়নের পথ সৃষ্টি করেছে, যার ফলে চা শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি হয়।

মো থুও জেলার কৃষি ও কৃষক ব্যুরোর উপমহাপরিচালক ইয়ু চিয়া ছুন জানিয়েছেন, “২০১১ সালে কুয়াং তোং ও ফু চিয়ান থেকে সি চাংয়ে সাহায্য দিতে আসা কর্মীরা উপলব্ধি করেছেন যে এখানকার আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযোগী। তাঁরা চায়ের চারা এখানে নিয়ে আসেন।”

মো থুও জেলায় প্রবেশ করলে আপনি রাস্তার দুপাশে, পাহাড়ের অর্ধেক উপরে মেঘ এবং কুয়াশার মধ্যে দেখতে ছোট-বড় চা বাগান দেখতে পাবেন। ক্য লিন গ্রামের চা বাগান পাহাড়ের মধ্যে স্তরে স্তরে বিস্তৃত। গ্রামবাসীরা কুয়াশার মধ্যে চা তুলছেন।

এখানে একটি প্রবাদ খুব প্রচলিত: “একদিন চা ছাড়া থাকার চেয়ে তিন দিন না খেয়ে থাকা সহনীয়।” প্রবাদটি থেকে বোঝা যায় যে, চা মালভূমির মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঐতিহাসিকভাবে, সি ছুয়ান, ইউননান এবং অন্যান্য স্থান থেকে চা প্রাচীন চা হর্স রোড দিয়ে সি চাংয়ে প্রবেশ করতে থাকে। সি চাং এবং অন্যান্য অঞ্চলে চা খাওয়ার সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, এখানকার প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দারা বছরে প্রায় ৮.৪৫ কেজি চা পান করেন, যা জাতীয় গড় পরিমানের চেয়ে বেশি।

আজ, তিব্বতের লোকেরা মালভূমিতে চাষ করা চা পান করতে পারছেন। ২০১১ সালে প্রথম চা ক্ষেতে পরীক্ষামূলক রোপণ থেকে শুরু করে ২০১৩ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ পর্যন্ত, মো থুও জেলা সরকার পুরো চেইন জুড়ে চা চাষে কৃষকদেরকে নির্দেশনা ও সহায়তা দিয়েছে।

আমাদের সাংবাদিক ক্য লিন গ্রামে চা ক্রয় পয়েন্টে এসে দেখেছেন যে, চা চাষীরা চা তুলে বাড়ি ফিরছিলেন। গ্রামবাসী তা ওয়া লা জেন বলেন, “আজ আমি যা তুলেছি, তা হল ‘একটি কুঁড়ি এবং দুটি পাতা’। আমি মোট ২৩.৮ কিলোগ্রাম বাছাই করেছি। আজকের দাম প্রতি কিলোগ্রাম ২৫ ইউয়ান, এবং আমার আয় প্রায় ৬০০ ইউয়ান।” জানা গেছে, এই বছর ছিং মিং উত্সবের আগে চা তোলার সময়কালে, গ্রামবাসীদের সর্বোচ্চ আয় একদিনে ২ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

চা বিক্রির পাশাপাশি, ক্য লিন গ্রামের লোকেরা চা শিল্পকে ক্রমাগত প্রসারিত করছে। চা দেখা, চা পান করা, চা ভাত খাওয়া এবং চা বানানোর অভিজ্ঞতাসহ চা ও চা বাগানকে কেন্দ্র করে সরকারের সহায়তায় ক্য লিন গ্রামের নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি হয়েছে। গ্রামে একটি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানাও তৈরি করা হয়েছে। ২০২৩ সালে চা পাতা কারখানা আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর পর থেকে বিক্রির পরিমাণ ১ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।

একটি চা পাতা মো থুও গ্রামের গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের জন্য উন্নয়ন শক্তি হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে আরও বেশি মানুষ মো থুওতে বেড়াতে যান। তাঁরা ঘুরে বেড়ান এবং ছবি তোলেন। অনেকে সুন্দর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন।

পর্যটক চৌ সিন ইয়ু চীনের চিয়াং সু প্রদেশের খুন শান শহর থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, “আমি এখানে দুই দিন ছিলাম এবং এখানকার দৃশ্য অনেক সুন্দর বলে মনে করি।” চা বাগানের ভিত্তিতে ক্য লিন গ্রাম ক্রমাগতভাবে ‘চা-পর্যটন সমন্বিত’ উন্নয়ন করেছে। বর্তমানে গ্রামটিতে ৬টি হোমস্টে হোটেল এবং ২টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। ২০২৩ সালে গ্রামের ক্যাটারিং এবং বাসস্থানের আয় ১০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়েছে।

চা শিল্পের মাধ্যমে কৃষকরা সমৃদ্ধ হয়েছেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, এটি মো থুও’র জনগণের জন্য পরিবেশগতভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য একটি উন্নয়ন দিক খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে।

২০২৩ সালে মো থুও জেলা রোপণ এবং ফসল তোলার চাহিদা মেটাতে পাঁচটি নতুন চা কোম্পানি চালু করেছে।

মো থুও জেলার উপপ্রশাসক লি ওয়েই জানিয়েছেন, “বর্তমানে, জেলাটিতে রয়েছে ১০৩টি আলপাইন জৈব চা বাগান, যার মোট আয়তন ১২৬৬ হেক্টর। এই বছরে পিকিং এরিয়ার আয়তন দাড়িয়েছে ১০৬৬ হেক্টর। এখন পর্যন্ত, এই বছর মো থুও জেলায় যে পরিমাণ গ্রিন টি কেনা হয়েছে, তার পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ৮শ কেজি ছাড়িয়েছে। চা পাতা থেকে জনগণের আয় ৮৩ লাখ ৭৩ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়েছে। চা শিল্পের সংযোজন মূল্য ৪ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn