বাংলা

একটি নীরব রেস্টুরেন্টে ভালোবাসার আওয়াজ

CMGPublished: 2024-07-04 16:48:47
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের ছেং তু শহরের উ হৌ অঞ্চলে একটি নীরব রেস্টুরেন্ট আছে। সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে এবং শাকসবজি পরিষ্কার করা, খাবার প্যাকেজিং করা, ডেলিভারি দেওয়াসহ সব প্রক্রিয়া নীরবে হয় এখানে। কারণ এ রেস্টুরেন্টের অধিকাংশ কর্মী মূক ও বধির। তাদের অনেকে এ চাকরির কারণে ছেং তু শহরকে বেছে নিয়েছেন। কেউ এখানে নিজের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন। এ রেস্টুরেন্টের মালিকের নাম তেং রু বিন । আজ আমরা এ রেস্টুরেন্টের গল্প শুনাবো আপনাদেরকে।

রেস্টুরেন্টে বর্তমানে ১৮ জন কর্মী কর্মরত। এদের মধ্যে ১৩ জনই মূক ও বধির। অন্য কমিউনিটিতেও বেশ কয়েকজন মূক ও বধির কর্মী রয়েছেন। তেং রু বিন তার প্রতিষ্ঠানে মোট ৩২ জন মূক ও বধির কর্মী নিয়োগ করেছেন, যা মোট কর্মীসংখ্যার ৭০ শতাংশ।

অনেকের ভাবনার বাইরে এটা যে, কীভাবে কথা না বলে রেস্টুরেন্টে সেবা দেওয়া যায়? তেং রু বিন জানান, এ সমস্যা এড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। তার রেস্টুরেন্ট মুলত টেকঅফ ফুড সরবরাহ করে থাকে। কারণ রেস্টুরেন্টে খাওয়া হলে অতিথিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, যা কর্মীদের জন্য অসুবিধাজনক হবে। তাই রেস্টুরেন্ট বর্তমানে টেকঅফ ফুডের পরিষেবা দেয়। ধোয়ামোছা, শাকসবজি পরিষ্কার করা, খাবার প্যাকেটিং, বিতরণ করাসহ অনেক কাজ করছেন মূক ও বধির কর্মীরা।

তেং রু বিন বলেন, চাকরি না পাওয়াই মূক ও বধির কর্মীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা নয়। ভাবের আদানপ্রদানে অসুবিধা এবং চাকরির অনিশ্চিয়তা হলো তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাই তিনি একটি চাকরি দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদেরকে কেবল উপার্জনে সাহায্য করেননি, বরং তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পেশাদার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ছেং তু শহরের বাজারে অধিকাংশ খাবার ডেলিভারিম্যান তার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

তেং রু বিন সব সময় তার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের উত্সাহিত করেন। তার কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ ক্রীড়া পছন্দ করেন। তাই তিনি বাস্কেটবল এবং টেবিল টেনিস খেলার আয়োজন করেন। কেউ কারিগরী বিদ্যা শিখতে চান। তিনি শেফদেরকে অনুরোধ জানান তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে। তাছাড়া তিনি মূক ও বধির কর্মীদের নিয়ে নার্সিং হোম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে যান, যাতে তারা অন্যদের যত্ন নিতে পারেন এবং নিজেদেরকে এমন সাহায্যকারী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

মূক ও বধির কর্মীদের দিয়ে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা খুব চ্যালেঞ্জিং— একথা উল্লেখ করেন তেং রু বিন বলেন, সাহায্যকারী একজন প্রবীণ তাদেরকে বলেছিলেন, “মূক ও বধির মানুষদের সাহায্য করতে গেলে কেবল ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়; আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, সহনশীলতা ও ধৈর্য্য থাকতে হবে। একজন সুস্থ মানুষকে দুবার দেখালে যে কাজ শিখতে পারেন, একজন মূক ও বধিরকে সেটা শেখাতে হয়তো ১০ বার দেখানো লাগে। তাই ধৈর্য্য না থাকলে শিখানো যায় না।”

গোটা চীনে বর্তমানে নিবন্ধিত মূক ও বধির মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৭৮ লাখের বেশি। শুধু সি ছুয়ান প্রদেশে রয়েছে ১৭ লাখ মূক ও বধির মানুষ। তাদের মধ্যে ভালো চাকরি করেন, এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। কমপক্ষে ৩০ শতাংশ মানুষের চাকরি অস্থিতিশীল। এ প্রসঙ্গে তেং রু বিন বলেন, এ সব মানুষের জীবিকা উন্নত করতে হলে তাদের প্রতি সমাজের আরও নজর দিতে হবে। তাদের সাহায্য করা মানে ৫ বা ৫০ ইউয়ান উপার্জন বাড়ানো নয়; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের মূল্য উপলব্ধি করা।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn