বাংলা

সি চিন পিংয়ের ‘জন-কেন্দ্রিক’ ধারণা বাস্তবে কিভাবে বাস্তবায়িত হয়

CMGPublished: 2024-06-21 10:20:57
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের বড় দেশের নেতা হিসেবে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সর্বদা "জন-কেন্দ্রিক" দর্শন অনুসরণ করেছেন, দেশ শাসনে তার মূল আকাঙ্ক্ষা বজায় রেখেছেন এবং জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নের কোনো প্রচেষ্টায় ছাড় দেননি।

সি চিন পিং বলেন, ‘জাতীয় নেতা হিসেবে, আমরা আমাদের দেশের সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছি। আমরা আমাদের কর্তব্যের প্রতি আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে পরিশ্রমী ও সতর্ক থাকার চেষ্টা করি। আমি আমার নিজের জন্য যে লক্ষ্যগুলো স্থির করেছি, তা অর্জনের জন্য এই নীতিগুলি সারাজীবন ধরে রাখতে চাই। বিশেষ করে, আমি মানুষের জন্য আরও কিছু করতে চাই।"

সি চিন পিং সর্বদা তার হৃদয়ে জনগণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।

১৯৬৯ সালে ১৫ বছর বয়সী সি চিন পিং উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের ইয়ানছুয়ান জেলায় অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম লিয়াংচিয়াহ্যতে পৌঁছান, যেখানে তিনি গুহায় বাস করতেন। লিয়াংচিয়াহ্য সিপিসি শাখা সম্পাদক হওয়ার পর, সি স্থানীয়দের সাথে গভীর বন্ধন গড়ে তোলেন। তিনি কূপ খনন, সোপান ক্ষেত্র এবং বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার নির্মাণে গ্রামবাসীদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে তাদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করেন।

সি চিন পিং লিয়াংচিয়াহ্যতে কাজ করার কথা স্মরণ করে বলেন, "সাধারণ মানুষকে বোঝা এবং সমাজের চেতনা উপলব্ধি করা মৌলিক বিষয়। আমার অনেক বাস্তববাদী ধারণা সেই সময়ে শিকড় গেড়েছিল এবং প্রস্ফুটিত হয়েছিল।"

তত্কালীন হ্য পেই প্রদেশের চেংতিং জেলার সরকারি কর্মী লি ইয়া পিং বলেন, "১৯৮৩ সালের অগাস্টের এক রবিবারে যখন সি চিন পিং চেংতিংয়ে যাওয়া সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, আমাদের দেশে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়ার অপেক্ষায় ছিল, এজন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।"

চেংতিং জেলায় এক হাজারেরও বেশি দিন ও রাত কাজ করার সময়, সি একটি পুরানো ২৮ ইঞ্চি সাইকেল চালিয়ে জেলার প্রতিটি কর্ণার পরিদর্শন করেছেন।

সিকে প্রায়শই তার ভারী সাইকেলটি কাঁধে বহন করতে হয়েছিল, অন্য পাশের গ্রামে তার সামাজিক জরিপ শেষ করার জন্য শুকনো নদীর তীরে হাঁটতে হয়েছিল।

সি অনেক অনুষ্ঠানে জোর দিয়ে বলেন যে, তার কাজের শীর্ষ অগ্রাধিকার হল মানুষের অসুবিধা মোকাবিলা করা এবং ক্রমাগত মানুষের জীবনযাত্রার উন্নত করা।

২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর, সি চিন পিং চীনের দারিদ্র্যমোচন বিষয়ক উচ্চপদস্থ ফোরামে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন, "২৫ বছর আগে, আমি ফুজিয়ান প্রদেশের নিংদ্য এলাকায় কাজ করেছিলাম, যেখানে আমার একটি প্রাচীন কথা মনে পড়েছিল। তা হলো 'যারা দেশের সেবা করে তারা মানুষের সাথে এমন আচরণ করে, যেমন স্নেহময় পিতামাতা তাদের সন্তানদের সাথে আচরণ করে এবং যত্নশীল ভাইরা তাদের ছোট ভাইবোনদের সাথে আচরণ করে। তারা তাদের ক্ষুধা ও ঠান্ডার কষ্টের জন্য বিলাপ করে, তাদের পরিশ্রম ও কষ্টের জন্য মর্মাহত হয় 'এই কথাটি আজও আমার হৃদয়ের গভীরে অনুরণিত হয়।"

সেদিন তিনি সাংবাদিকদের কথা বলার সময় "জনগণের বিষয়ে" জোর দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, "আমাদের লোকেরা জীবনকে ভালবাসে এবং উন্নত শিক্ষা, আরও স্থিতিশীল চাকরি, সন্তোষজনক আয়, নির্ভরযোগ্য সামাজিক নিরাপত্তা, উচ্চ মানের স্বাস্থ্যসেবা, আরও আরামদায়ক জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং আরও সুন্দর পরিবেশের আশা করে। তারা তাদের সন্তানদের ভালোভাবে বেড়ে উঠার জন্য আকাঙ্ক্ষা করে, তাদের কাজ উন্নত করার জন্য, এবং তাদের জীবনকে আরও ভালো করার জন্য চীনা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেষ্টা আমরা করছি।"

তার কথা পূরণ করতে, সি নিজে চীনের দরিদ্র এলাকা পরিদর্শন করে মাঠের জরিপ পরিচালনা করেন এবং দারিদ্র্যের নিচে থাকা মানুষের কাছ থেকে সরাসরি বিভিন্ন তথ্য জেনে নেন।

২০১৩ সালের নববর্ষের প্রাক্কালে উত্তর চীনের হ্যবেই প্রদেশের ফুপিং জেলার দরিদ্র গ্রাম পরিদর্শন করার সময়, সি স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং স্থানীয়দের পুরানো কাপড়ে একটি ছিদ্র দেখতে পান। তিনি তাকে একটি নতুন সুতির কোট উপহার দেন।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর যখন তিনি মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের শিবাডং গ্রাম পরিদর্শন করেন, তখন সি বলেছিলেন যে, তাকে "জনগণের সেবক" বলা যেতে পারে।

সি চিন পিং বলেন, "সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করার জন্য, তাদের সুখ-দুঃখ এবং তাদের কষ্ট ও বিপদগুলো বোঝার জন্য আমাদের চীনের গ্রামীণ এলাকা এবং কারখানা পরিদর্শন করতে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে।"

২০১২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, সি তৃণমূল পর্যায়ে শতাধিক পরিদর্শন ও গবেষণা সফর পরিচালনা করেছেন। গত ১২ বছরে এনপিসি এবং সিপিপিসিসি’র জাতীয় কমিটির অধিবেশন চলাকালীন, তিনি জনগণের কষ্ট ও উদ্বেগকে স্বীকার করার উপায় হিসাবে কয়েকশ ডেপুটি এবং প্রতিনিধিদের বক্তৃতা শুনেছেন।

২০১৭ সালের ২৩ জুন, সি চিন পিং চরম দরিদ্র এলাকার দারিদ্র্যমোচন আলোচনা সভায় বলেন, "আমরা এখন উন্নয়নের জন্য জন-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছি। আমাদের অবশ্যই জনগণের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমাদের প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনগণের আস্থা আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা এবং ভারী দায়িত্ব আমি আমার কাঁধে বহন করছি।”

"মানুষের সেবা করা নির্বিকারভাবে এবং তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বেঁচে থাকা আমার আজীবন প্রতিশ্রুতি। "

এটি সর্বদা সি’র জীবনের নীতিবাক্য হিসেবে কাজ করে আসছে এবং তিনি তার কাজ নিয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করছেন।

তিনি ক্ষণস্থায়ী সময়ের জন্য বিলাপের অনুভূতি উল্লেখ করার সময়, "সময় কোথায় গেল" নামের একটি গানের কথা উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, "সময় কোথায় গেল?' শিরোনামের একটি গান আছে। মনে হচ্ছে আমার সময় অন্যত্র চলে গেছে, স্পষ্টতই আমাদের মহান মিশনটি সম্পন্ন করার জন্য, আমাদের অবশ্যই আমাদের মূল আকাঙ্ক্ষার প্রতি দৃঢ় থাকতে হবে। কেবলমাত্র আমরা ইতিহাসের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে নিজেদেরকে সময়ের যোগ্য প্রমাণ করতে পারি।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn