বাংলা

থাই ফলবাগান থেকে চীনের বাজার, ডুরিয়ানের ‘উত্তরযাত্রার গল্প’

CMGPublished: 2024-05-20 11:02:21
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

পূর্ব থাইল্যান্ডে ডুরিয়ান বাজারে আসার মওসুম চলছে। ফল চাষী স্যাসিথন শ্রমিকদের ফল তোলা তদারকি করছেন। ১০-১২ মিটার উঁচু ডুরিয়ান গাছে, এক শ্রমিক কাঁচি দিয়ে ডুরিয়ানের বোঁটা কাটছে, আর গাছের নিচে তার সঙ্গী বস্তা মেলে গাছ থেকে পড়া ডুরিয়ান ধরছে।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ‘ফলের রাজা’ বলে ডুরিয়ানের সুনাম আছে। স্যাসিথনের জন্মস্থান থাইল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চাঁন্থাবুড়ি প্রদেশ গুরুত্বপূর্ণ ডুরিয়ান উত্পাদন স্থান। রাজধানী ব্যাংকক থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে এলাকাটি অবস্থিত। গাড়িতে করে ব্যাংকক থেকে চাঁন্থাবুড়ি প্রদেশে যাবার পথে সাংবাদিকরা মাঝেমাঝে ডুরিয়ান ভরা ট্রাক দেখতে পান। রাস্তার দু’পাশে ফলের স্টলে বিভিন্ন রকমের ডুরিয়ান থরে থরে সাজানো দেখা যায়।

স্যাসিথন দশ-বার বছর ধরে ডুরিয়ান ব্যবসা করছেন। তার বাগানে ২ হাজারের বেশি ডুরিয়ান গাছ লাগানো হয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছর অনাবৃষ্টির কারণে, ডুরিয়ানের উত্পাদনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবু বাজারে চাহিদা বেশি। ব্যবসা খারাপ নয়। তিনি বলেন, আমরা বেশ কয়েক ধরনের ডুরিয়ান সরবরাহ করি। আগে পাঁকা জালুন ডুরিয়ানের পাশাপাশি চীনা ভোক্তাদের প্রিয় গোল্ডেন বালিশ ডুরিয়ানও আছে।

স্যাসিথনের বাগানে ডুরিয়ান তোলার পর খুব শিগগিরই কাছাকাছি একটি প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় পাঠানো হবে। সেখানে শ্রমিকরা তাজা ডুরিয়ানের শ্রেণীবিভাজন, ওজন করা, প্যাকেজিং ও ট্রাক লোড নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

সেখানকার দায়িত্বশীল ব্যক্তি ভিরাচাট জানান, চীন; থাই ডুরিয়ানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। তাদের কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা সব ডুরিয়ান চীনে রপ্তানি হবে। চলতি বছর তারা চীনে ২৩ কন্টেইনার রপ্তানি করেছেন। এর মধ্যে বিমানে ২০ শতাংশ, নৌপথে ৪০ শতাংশ এবং স্থলপথে ৪০ শতাংশ ডুরিয়ান পরিবহন করা হয়েছে।

থাইল্যান্ড বিশ্বের প্রধান ডুরিয়ান উত্পাদন ও রপ্তানিকারক দেশগুলোর অন্যতম। প্রতি বছর প্রচুর ডুরিয়ান রপ্তানির মাধ্যমে চীনে আসে। চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে চীনের তাজা ডুরিয়ানের আমদানির পরিমাণ ১৪.২৬ লাখ টন ছিল। এর মধ্যে থাই তাজা ডুরিয়ান ছিল ৯.২৯ লাখ টন, যা চীনের আমদানীকৃত তাজা ডুরিয়ান মোট পরিমাণের ৬৫.১৫ শতাংশ।

পরিবহন ও সংরক্ষণাগারসহ বিভিন্ন শর্তাবলীর কারণে আগে আসিয়ানের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল বড় মাত্রায় চীনা বাজারে প্রবেশ করতে সমস্যা ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে আরসিইপি সার্বিকভাবে কার্যকর হয়। এ ছাড়া নতুন আন্তর্জাতিক স্থল-সমুদ্র বাণিজ্য করিডোরসহ বেশ কিছু আন্তঃযোগাযোগ প্রকল্পের দ্রুত নির্মাণ এবং আন্তঃসীমান্ত কোল্ড চেইন লজিস্টিক সিস্টেম ও ই-কর্মাস প্ল্যাটফর্মের দ্রুত উন্নয়ন, বিভিন্ন কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সুবিধাজনক শর্ত ও ব্যবস্থা চালু করার ফলে ডুরিয়ানের মতো আসিয়ানের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল চীনা বাজারে খুব সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে প্রবেশ করতে পারছে।

চীন-ভিয়েতনাম সীমান্তে অবস্থিত কুয়াংসি পিংসিয়াং মৈত্রী বন্দর হলো আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ফল চীনে প্রবেশ করার গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর। থাই ডুরিয়ান পরিবহন করা এক একটি ট্রাক এ বন্দরের চেকিং প্ল্যাটফর্মে থেমে, শুল্ক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চীনের ফল বাজারে প্রবেশ করবে।

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উন্নতমানের শুল্ক ছাড়পত্র ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হয়। শুল্ক বিভাগ অব্যাহতভাবে বুদ্ধিমান লজিস্টিক নিয়ন্ত্রণ প্ল্যাটফর্ম, বুদ্ধিমান পরিদর্শন সহকারী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, বুদ্ধিমান কোয়ারেন্টাইন চিকিৎসা ব্যবস্থার মতো বুদ্ধিমান তত্ত্বাবধান স্থাপনা ও সরঞ্জাম আপগ্রেড ও সুবিন্যস্ত করার পাশাপাশি আমদানিকৃত ডুরিয়ানের বিশেষ চ্যানেল নির্মাণ গভীরতর করে, আমদানিকৃত ফলের সবুজ চ্যানেল ও পরীক্ষাগার দ্রুত সনাক্তকরণসহ বেশ কিছু শুল্ক ছাড়পত্রের সুবিধাজনক ব্যবস্থা কার্যকর করে, আমদানিকৃত ফলের নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত পরিবহন নিশ্চিত করে।

কুয়াংসির বৃহত্তম পাইকারী ফলবাজার থাইল্যান্ড থেকে আসা এক এক গাড়ি ডুরিয়ান আনলোড করা হয়। ইয়োসিয়ানইউয়ান কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লিমিটেড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মো চিয়ামিং বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ টন থাই ডুরিয়ান বাজারে আসছে। বিভিন্ন রকমের ডুরিয়ান স্টলে রাখার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্রেতা আকর্ষণ করে। তিনি জানান, চলতি বছর তারা প্রায় ১ হাজার ৮০০ টন ডুরিয়ান আমদানি করেছেন। থাই ফল বাগান থেকে তোলা তাজা ডুরিয়ান স্থল পরিবহনের মাধ্যমে সবচেয়ে দ্রুত ৩ থেকে ৫ দিন চীনে পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, চীনের ‘ফলের থালা’ যথেষ্ঠ বড় এবং তিনি বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে ডুরিয়ানের মতো আসিয়ানের আরো ফল চীনে বড় বাজার পাবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn