একটি বুকমার্কের গল্প
আজকের গল্প বলতে গেলে একটি পুরানো বুকমার্ক থেকে বলতে হয়। এ বুকমার্ক কত পুরানো হতে পারে? এটি ১৯৫৭ সালের এবং এ পর্যন্ত ৬৭ বছর অতিক্রম করেছে। চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী চাও ওয়েন খাই এটির সন্ধান পেয়েছেন। যখন চাও লাইব্রেরি থেকে একটি ইংরেজি ভার্সনের বই ধার করেন। ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত সে বইয়ের মধ্যে এ বুকমার্ক খুঁজে পান তিনি।
চাও এ বুকমার্ক দেখে অবাক হয়ে যান। কারণ বুকমার্কটিতে শুধু সুন্দর ছবিই নয়, বরং হাতের লেখা রয়েছে ‘ভালো বন্ধু চৌ চিং ছিউকে উপহার’, এবং সময় লেখা হয়েছে ১৯৫৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। এ বুকমার্ক স্পর্শ করে চাও খুব উত্তেজিত হন। তাঁর জানার খুব ইচ্ছা হয় যে, বুকমার্কের মালিক চৌ চিং ছিউ কে? বুকমার্কের পিছনে রয়েছে কেমন গল্প?
তাই চাও এ বুকমার্কের গল্প অনলাইনে পোস্ট করেন। তিনি নিজের উইচ্যাটেও এটি পোস্ট করে তার কৌতুহল প্রকাশ করেন। ধীরে ধীরে নেটিজেনদের দেয়া নানা সুত্র থেকে চৌ চিং ছিউ’র সংশ্লিষ্ট অনেক সূত্র পাওয়া গেলো।
চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাংবাদিক সদস্য ওইয়াংইয়ুসুয়ান বলেন, একদিন তারা একটি ছবি পান। এ ছবি হলো চৌ চিং ছিউ স্মরণে একটি প্রবন্ধ। তারা প্রবন্ধে কিছু তথ্য অনুসারে সার্চ করার পর, চৌ চিং ছিউ যে মাধ্যমিক স্কুলে পড়ছিলেন, সে স্কুল খুঁজে পান। তারপর বেশ কয়েকটি সুত্র অনুসারে চৌ চিং ছিউ’র মেয়ে চৌ ইয়ানকে খুঁজে পান।
চৌ ইয়ান বলেন, তার বাবা চৌ চিন ছিউ বিংশ শতাব্দির ৬০-এর দশকে হাং চৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক করেছেন। পরে তিনি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হন। ১৯৯৮ সালে তিনি অবসর নেন। তবে দুঃখজনক যে, চৌ চিং ছিউ ২০১৪ সালে মারা গেছেন।
অনেক শিক্ষার্থী ও নেটিজেনের সাহায্যে অবশেষে এ বুকমার্কের মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়।
চৌ চিং ছিউ’র মেয়ে চৌ ইয়ান তার বাবার গল্প আমাদের শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত চৌ চিং ছিউ সিয়াও শান অঞ্চলের তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। গ্রামবাসীরা সব সময় তার বাবাকে ছোট যন্ত্রপাতি মেরামত করতে পাঠায়। সে সব যন্ত্রপাতি ঠিক করার পর তার বাবা সবাইকে যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে ধারনা দেন।
মেয়ে চৌ ইয়ান’র চোখে তার বাবা চৌ চিং ছিউ’র আছে নিজের আধ্যাত্মিক জগত। চৌ চিং ছিউ’র একজন ভালো বন্ধু রয়েছে। যার নাম তোং সিয়াও ছাং। তোং সিয়াও ছাং বলেন, এ বুকমার্ক মাধ্যমিক স্কুলে সহপাঠিদের মধ্যে উপহার হিসেবে নববর্ষের কার্ড হতে পারে। তিনি বলেন, এ বুকমার্কে যে সময় লেখা হয়েছে, সেটি তাদের এ স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সময়।
নববর্ষের কার্ড পরস্পরকে উপহার দেওয়া সে যুগে সহপাঠীদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি মাধ্যম ছিল। তিনি এবং চৌ চিং ছিউ প্রায়ই কবিতা এবং প্রবন্ধ লেখার মাধ্যমে তাদের আবেগ ও চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতেন। তারা দুজনেই সহপাঠী এবং কলম-বন্ধু ছিলেন।
এ বুকমার্ক হলো ১৯৫৭ সালে জুনিয়র স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পরে চৌ চিং ছিউকে একটি সাহিত্যি গোষ্ঠীর সহপাঠী হান ছোং মেই’র লেখা একটি চিঠি। সেই সময় ছাত্ররা লেখাপড়ার ফাঁকে ভ্রমণ করতো এবং সাহিত্যের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করতো, যা তাদের জীবনে অবিস্মরণীয় আনন্দ যোগ করতো। পুরানো সহপাঠীদের এই স্মৃতিগুলো চৌ ইয়ানকে তার বাবার আধ্যাত্মিক জগতে পুনরায় নিয়ে যায়।
এই পুরানো বুকমার্কের মাধ্যমে চাও ওয়েন খাই ৬০ বছর আগের তার সিনিয়রদের গল্প জানার পর ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করেছেন।