বাংলা

‘আফ্রিকার ছাদে’ চলছে চীনা বৈদ্যুতিক মিনিবাস

CMGPublished: 2024-03-25 14:17:06
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

পূর্ব আফ্রিকার তৃণভূমিজুড়ে ছড়িয়ে আছে সূর্যালোক। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার সড়কে গাড়ি-চালক আদামুকে দেখা গেল নতুন এক বিদ্যুৎচালিত মিনিবাসে চড়ার জন্য যাত্রীদের ডেকে চলেছেন।

চীনের সিয়ামেন গোল্ডেন ড্রাগন ওয়াগন বাস কোম্পানি থেকে বাসটি এসেছিল নানা যন্ত্রাংশে ভাগ হয়ে। সিকেডি প্রক্রিয়ায় ইথিওপিয়ায় রপ্তানি

হয় বাসটি। বেলানের স্থানীয় কিন্দি মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি গাড়িটি অ্যাসেম্বলিং করে বাজারজাত করে। বর্তমানে আদ্দিসাবাবার প্রায় ২০ জন গাড়িচালক আদামুর মতো পুরনো গাড়ি বদলে নিয়ে এসেছেন চীনের বিদ্যুৎচালিত মিনিবাস।

আদামুর মতে, সাধারণ জীবাশ্ম জ্বালানির মিনিবাসের চেয়ে বৈদ্যুতিক বাসে শব্দ হয় কম। এতে তুলনামূলক খরচও কম হয়। ব্যবহারও সুবিধাজনক। দুপুরের খাবারের সময় ৪০ মিনিটের জন্য চার্জ দিলেই হয়। আগের মতো তেলের খরচও লাগে না। ফিলিং স্টেশনেও তেলের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় না। এতে করে প্রতিদিন তাদের আয়ও কিছুটা করে বাড়ছে।

তিনি আরও জানান, এর আগে তিনি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালালেও নতুন বৈদ্যুতিক বাসটি বেশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এটি আরামদায়ক তো বটেই, সেই সঙ্গে বায়ুদূষণও কমাবে।

এসব বলতে না বলতেই ১৫ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দেন আদামু। ওই যাত্রীদের অধিকাংশই প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে চড়ার অভিজ্ঞতা পেলেন।

ইথিওপিয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার মিটার উঁচুতে। তাই দেশটিকে বলা হয় ‘আফ্রিকার ছাদ’। রাজধানী আদ্দিস আবাবা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার মিটার উঁচুতে। স্থানীয় ভাষায় ‘আদ্দিস আবাবা’ মানে ‘তাজা ফুল’। কিন্তু স্থানীয় অটোমোবাইলগুলো থেকে যে দূষণ নির্গত হচ্ছে তাতে শহরটির সঙ্গে ‘তাজা ফুলের শহর’ নামটি মেলানো কঠিন।

বেসরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশটিতে প্রায় ১২ লাখ গাড়ি আছে। এর মধ্যে অধিকাংশই উপসাগরীয় দেশ থেকে আমদানি করা পুরনো গাড়ি। এগুলোর বয়স ২০ বছরেরও বেশি। যা দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইথিওপিয়ার পরিবহন ও লজিস্টিক মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে জ্বালানি আমদানি করতে দেশটি প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। ওই জ্বালানির অর্ধেকেরও বেশি ব্যবহৃত হয়েছিল গাড়িতে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বে বাড়তে থাকা জ্বালানির দাম মোকাবিলা করতে দেশটির মন্ত্রণালয় থেকে ডিজেল ও তেলচালিত গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগে ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে দেশটির সরকার দশ বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে ৪৮০০টি বৈদ্যুতিক পাবলিক বাস এবং ১ লাখ ৪৮ হাজার অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানির ঘোষণা করে। যাতে ফসিল-জ্বালানিচালিত গাড়ির ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা কমানো যায়।

জানা গেছে, বৈদ্যুতিক মিনিবাস অ্যাসেম্বলিং করা ছাড়া বেলানে কিন্দি মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি চীন থেকে আমদানিকৃত ১২ মিটার লম্বা বাসও জোড়া দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা দেশটিতে বাড়তে থাকা বিদ্যুৎচালিত বাহনের চাহিদা পূরণ করছে।

প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক শেভালিয়ার মনে করেন, ইথিওপিয়ায় বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহারিক ভবিষ্যৎটা সুবিশাল। আরও বেশি চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহন স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির সরকার জ্বালানি সাশ্রয় করার পাশাপাশি দূষণ কমানোর নানা প্রকল্প বাস্তবায়নেও সহায়তা বাড়াবে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে কম্পানিটি আলাদা আলাদা পার্টস আকারে চীন থেকে বৈদ্যুতিক যান আমদানি শুরু করে। এতে আমদানির খরচও ব্যাপকভাবে কমে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ গাড়ির আমদানি শুল্ক প্রায় ১৫ শতাংশ হলেও বিচ্ছিন্নভাবে যন্ত্রাংশ আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না।

ইথিওপিয়া সরকার বৈদ্যুতিক যানবাহনের উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি হস্তান্তর বেগবান করতে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, এটি তারই একটি অংশ।

শেভালিয়ার বলেন, এসব বৈদ্যুতিক মিনিবাসের অ্যাসেম্বলিং ইথিওপিয়ায় করা হলে স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়বে। কম্পানিটিতে এখন ৭৫ জন কর্মী ২১৬টি বাস জুড়ে দেওয়ার কাজ করছেন। বর্তমানে এ বৈদ্যুতিক মিনিবাসগুলোর অর্ধেকই বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে শহরের গণপরিবহন পরিষেবা প্রদানকারী এবং সরকারি সংস্থা।

কম্পানির উৎপাদন ব্যবস্থাপক এবেলার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, প্রথম দফার ৫০টি বৈদ্যুতিক মিনিবাস চীনা সহকর্মীর সাহায্যে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চীনের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘চীনা প্রকৌশলীরা ইথিওপিয়ায় এসে আমাদের সঙ্গে বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান ভাগাভাগি করেছেন। ভবিষ্যতে সমস্যা হলে ভিডিও যোগাযোগের মাধ্যমে চীনা সহকর্মীদের কাছ থেকে শিখে নিতে পারব।’

প্রেমা/ফয়সল

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn