বাংলা

ছোট জায়গায় বড় অর্থনৈতিক শক্তি

CMGPublished: 2024-02-28 09:06:23
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংশা শহরের তুং কুয়া শান রাতের মেলা যেমন স্থানীয় সুস্বাদু খাবারের একটি বৈশিষ্টময় জায়গা, তেমন স্থানীয় ভোগ-অর্থনীতি ও ব্যক্তিখাতের ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের কেন্দ্র। দুশ’ মিটার দীর্ঘ এ সড়কে রয়েছে ৩০টির বেশি খাবারের দোকান, যেখানে দূধ চা, বারবিকিউ, সসেজসহ নানা খাবার বিক্রি করা হয়।

গরম কাঠকয়লার আগুন ও কাবাবের সুগন্ধে ভরে থাকে তুং কুয়া শান। এখানে জীবনের সারমর্ম অনুভব করা যায়। তবে আপনি কি জানেন এখানে ব্যবসায়ীদের মতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পরিবর্তনই এ মেলার মূল কথা।

মেং চুং বারবিকিউর মালিক লি চিং জানান, ছাং শা শহরে খাবারের ব্যবসায়ে সবসময় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। তার দোকান যদিও জনপ্রিয় দোকানগুলোর মধ্যে একটি তবে তিনিও সবসময় চাপের মুখে থাকেন। গেল কয়েক বছর ছাং শা চীনে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য-শহরের মধ্যে অন্যতম এবং ইয়াং ফান ও সি ফাং পিং নামে এখানকার দুটি রাতের মার্কেট বেশ জনপ্রিয়। রাতের মার্কেট হিসেবে তুং কুয়া শান এত বৈশিষ্ট্যময় নয় বলে তাদের ব্যবসা তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে একটু খারাপ। প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার মুখে কোন কোন দোকান নিজেকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়।

হুও নান বারবিকিউ দোকান এখানে ২৩ বছর আগে চালু হয়। দোকানের মালিক কুও ইউয়ু সং তার ছেলের হাতে দিয়েছেন এ দোকান। এখন তার ছেলে কুও লিয়াং মালিক হয়েছে আর তিনি কেবল ছেলেকে সাহায্য করেন। তার ছেলে একজন যুবক। তার মতে, দোকানের ব্যবসা ভাল করতে চাইলে ভাল মানের পণ্য ও আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। কু লিয়াং আগে একজন গাড়ি বিক্রি কর্মী ছিলেন, পরে অন্য জায়গায় বারবিকিউ শিখতে যান। বসন্ত উত্সবের সময়ে তিনি কাঁকড়া স্ট্যু, চিকেন ফুট স্ট্যুসহ নানা নতুন পণ্য এনেছেন। মাংস ও সবজি একসাখে খেলে আরও মজা পাওয়া যায়। যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয় খাবার ও খাওয়ার পদ্ধতি দিয়ে নিজের দোকানে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করেছেন কুও লিয়াং।

নতুন বছরে তার নতুন কিছু পরিকল্পনাও আছে। তরুণ মানুষেরা দোকানের পরিবেশের উপর বেশ গুরুত্ব দেয় তাই তিনি এ রেস্তোরাঁ নতুনভাবে সাজাতে চান। পাশাপাশি অন্য কয়েকটি রেস্তোরাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বিজ্ঞাপন দেবেন। কারণ এখন অনেক মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেস্তোরাঁর তথ্য অনুসন্ধান করে।

তান তান নামে একটি ব্রেসড খাবারের রেস্তোরাঁ ১০ বছর আগে ছোট একটি স্টল ছিল। আর এখন তার মালিক ৭টি রুম ভাড়া নিয়ে তুং কুয়া শানে একটি বৃহৎ রেস্তোরাঁ খুলেছেন। তার মালিক ওয়াং তুং ছেন একজন গবেষকের মতো বস। তার মতে, যেসব রেস্তোরাঁর ব্যবসা ভাল না তাদের মালিক ঘুমানো এবং ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করেন না। ভাল ব্যবসা করতে চাইলে সবসময় চিন্তা করতে হয়, অগ্রগতি অর্জন করতে হয়। ওয়াং তুং ছেং সবসময় টপ ক্যাটারিং কোম্পানি নিয়ে গবেষণা করেন। তারা কী পণ্য তৈরি করে, ইন্টারনেটে তারা কোন খাবারের বিজ্ঞাপন প্রচার করেন এবং কোন কোন খাবার ব্লগে সবচেয়ে জনপ্রিয় - তা সব জানেন ওয়াং তুং ছেং। তিনিও নিজের খরচে ক্যাটারিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন। প্রতি প্রশিক্ষণে ৭-৮ হাজার ইউয়ান লাগে, তবে নতুন কিছু শিখতে পারেন বলে মনে হয়।

প্রশিক্ষণে তিনি যা শিখছেন, তা কাজে লাগছে। ওয়াং তুং ছেং তার রেস্তোরাঁর জন্য নতুন বছরের পরিকল্পনা তৈরি করেন। মার্চ মাসে তারা কিছু জনপ্রিয় জলখাবার আনবেন এবং দুটি শাখা রেস্তোরাঁ খুলবেন। পাশাপাশি তাদের কেন্দ্রীয় রান্নাঘর প্রসারিত করবেন। ওয়াং তুং ছেং বলেন, “কখনও ভুলি না কেন আমি এ ব্যবসা শুরু করি। আমি শুধু ইন্টারনেটে জনপ্রিয় খাবার তৈরি করতে চাই না; বরং ছাংশা শহরের ঐতিহ্যিবাহী খাবার আরও বেশি মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই।”

চুয়াং ইউয়ান বারবিকিউয়ের মালিক ইয়াং ফান একজন তরুণ তবে নিজস্ব ধারণা পোষণ করেন। তার মতে, পণ্যের মান সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের স্বাদ ভাল হলেই কেবল তা জনপ্রিয়তা পেতে পারে। তার রেস্তোরাঁয় আগে গরুর মাংসে কাবাব বিক্রি হতো আর এখন তিনি গরুর মাংসের ভিন্নতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাবাব তৈরি করেন। বসন্ত উত্সবের আগে ইয়াং ফান হুনান প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতি অধুষ্যিত এলাকায় কয়েক বার ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি স্থানীয় খাবার ও উপাদান তার রেস্তোরাঁয় নিতে চান। মরিচ ও রাইস তোফুসহ স্থানীয় খাবার তার মেন্যেুতে যোগ করবেন। তিনি জানান, আগে তারা শুধু ভোক্তার জন্য অপেক্ষা করতেন আর এখন তারা ভোক্তার মন জয় করতে সক্রিয়।

বয়স নির্বিশেষে তুং কুয়াং শানের রেস্তোরাঁর মালিকেরা নানা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসার সুযোগ খুঁজছেন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া তাদের জন্য প্রধান লক্ষ্য।

বসন্ত উত্সবের অষ্টম দিন, হু নান প্রদেশের লিউ ইয়াং শহরের অর্থনীতি উন্নয়ন এলাকার একটি পাম্প কোম্পানি ছুটির পর পুনরায় উত্পাদন শুরু করে। এ কোম্পানি মূলত খনিতে ব্যবহৃত পাম্প তৈরি করে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার উত্পাদন বছরে গড়ে ২০-৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকেও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রয়েছে। সাধারণত বসন্ত উত্সবের ৭ দিন আগে থেকেই কারখানার ছুটি শুরু হয় তবে এ বছর তাদের অর্ডার বেশি বলে অনেক কর্মী বসন্ত উত্সবের দু দিন আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন। পরীক্ষা বিভাগের পরিচালক ছেন হু ছিং ও তার সহকর্মীরা মনোযোগ দিয়ে পণ্যের মান পরীক্ষা করেন। তারা রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করেন। আগে প্রতি মাসে তিনি ৩০টি মশিনের পরীক্ষা করতেন আর এখন প্রতি মাসে ৪০টি মেশিন টেস্ট করতে হয়।

নির্মাণখাতের একটি ঐতিহ্যবাহী কোম্পানি হিসেবে ‘চিয়া নেং’ নামের এ কোম্পানির সাফল্যের রহস্য হয়েতো তাদের নবায়ন। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সহকারী লি ইয়ুন বলেন, আগে বেশিরভাগ কোম্পানি অন্যদের কপি করতো। অন্যদের পণ্য অনুযায়ী নিজেদের পণ্য তৈরি করতো। তবে এখন তারা নবায়নের উপর গুরুত্ব দেয়। একটি শক্তিশালী ও বড় কোম্পানি হতে চাইলে নিজের বৈশিষ্ট্যের পণ্য থাকতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিয়া নেং নিজের গবেষণায় নতুন কয়েকটি ধরনের পণ্য তৈরিতে সফল হয় এবং গবেষণা অবহ্যাত রেখেছে। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিজের পণ্যের আপগ্রেড বাস্তবায়ন করছে।

একই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এলাকায় অবস্থিত ‘পাও শান’ নামের আরেকটি কোম্পানি গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করে। কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক সু ই কুও জানান, সাধারণত গাড়ি শিল্পের জন্য জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি অফ সিজন, তবে এ বছরের শুরুতে তাদের ব্যবসা ভাল ছিল। বসন্ত উত্সবের আগে কোম্পানির কারখানায় ২৪ঘন্টার মতো উত্পাদন চলেছে। বসন্ত উত্সবের সময় চীনারা অনেক কানাকাটা করে এবং কোম্পানির গুদামে থাকা যন্ত্রাংশকে বসন্ত উত্সবের স্টক মনে করা হয়। কারখানার শ্রমিকদের তুলনায় একদিন পরে লজিস্টিক বিভাগের কর্মীদের ছুটি শুরু হয়। কারণ ছুটির আগে সব পণ্য গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। বসন্ত উত্সবের নবম দিন কারখানা আবার চালু হয় এবং তারা নতুন বছরের কাজ শুরু করে। সু ই কুও বলেন, এখন নতুন জ্বালানিচালিত গাড়িশিল্পে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে এবং তাদের পরিবর্তন অনুযায়ী যন্ত্রাংশ কোম্পানিকে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। আগে বছরে এ কোম্পানি ১-২টি নতুন প্রকল্প চালু করতো আর এ বছর তারা ৫টি নতুন প্রকল্প একসাথে শুরু করেছে। আগে ছাংশা শাখা কোম্পানিতে ছিল কেবল উত্পাদন ও বিক্রয় – এ দুটি বিভাগ। এখন কোম্পানিতে যোগ দিয়েছেন ১০ জনের একটি গবেষণা দল। ছোট কোম্পানির জন্য তাদের একটি সুবিধা রয়েছে। সেটি হলো বাজারের পরিবর্তন অনুযায়ী তারা দ্রুত নিজের উত্পাদন সমন্বয় করতে পারে।

শীতকালের উষ্ণ রোদে ফিনিক্সের আকারে একটি বুলেট ট্রেন স্টেশন জ্বলজ্বল করছে। হু নান প্রদেশের সিয়াং সি থু চিয়া ও মিয়াও জাতি স্বায়ত্তশাসিত এলাকার ফিনিক্স জেলায় অবস্থিত এ বুলেট ট্রেন স্টেশন দেশব্যাপী পর্যটকের আকর্ষণ করে। ছুটির সময়ে স্টেশনের কর্মীরা মিয়াও জাতির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নাচ-গান করেন এবং সবাইকে আধুনিক এ ম্যাগলেভ সাইটসিয়িং এক্সপ্রেসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ফিনিক্স নামে এ এক্সপ্রেস চীনের প্রথম জেলা পর্যায়ের একটি ম্যাগলেভ সাইটসিয়িং এক্সপ্রেস। যে কেউ বুলেট ট্রেন থেকে নেমে একই স্টেশনে এ এক্সপ্রেসে চড়তে এবং ১৫ মিনিট পর ফিনিক্স নামে পুরাতন নগরে পৌঁছাতে পারে।

দীর্ঘ সময় ধরে ফিনিক্স জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সীমাবদ্ধতা ছিল পরিবহন। আগে রাজধানী থেকে ফিনিক্স জেলায় আসতে বাসে করে ৬-৭ ঘন্টা লাগত। যদিও ফিনিক্স চীনে বিখ্যাত একটি দর্শনীয় স্থান তবে এখানে আসা সুবিধাজনক ছিল না বলে অনেকে আসতে পারতো না।

২০২১ সালে বুলেট ট্রেন চালু হবার পর ছাংশা ও ফিনিক্স জেলার মধ্যে যাত্রার সময় ৩ ঘন্টায় নেমে এসেছে। তবে বুলেট ট্রেন স্টেশন ও পুরাতন নগরের মধ্যে আরও রয়েছে ১০ কিলোমিটারের একটি যাত্রা। পর্যটকরা ফিনিক্স জেলায় যেতে চাইলে আরেকটি বাস ধরতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের মে মাসে চালু হয় ম্যাগলেভ সাইটসিয়িং এক্সপ্রেস।

৯.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসে রয়েছে ৪টি ছোট স্টেশন। স্টেশনগুলো পর্যটকদেরকে মজার অভিজ্ঞতা দেয়। এক্সপ্রেসের কোচে সংখ্যালঘু জাতির স্টাইল অনুযায়ী সাজানো। পর্যটকরা এখানে যেমন আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপভোগ করতে পারেন তেমন পুরাতন নগরের পাহাড় ও নদীর দৃশ্যও উপভোগ করতে পারেন। এটি শুধু একটি এক্সপ্রেস নয় বরং নতুন একটি দৃর্শনীয় স্থান। তাই এ এক্সপ্রেসও থ্রি-এ পর্যায়ের একটি দর্শনীয় স্থান। বসন্ত উত্সবের সময়ে ফিনিক্স এক্সপ্রেসে চড়ে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি পর্যটক।

ভোরে, হালকা কুয়াশায় জেগে উঠে নান মু ছিয়াও নামের একটি গ্রাম। এ গ্রাম অবস্থিত হু নান প্রদেশের মাইয়াং মিয়াও জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায়। সূর্যোদয়ে পাহাড়ে শোনা যায় হাসি। এখানে নির্মিত নতুন একটি গবেষণা ও লেখাপড়া বেইস এবং এখানে অনেক বাবা-মা নিজেদের বাচ্চা নিয়ে আসেন। তারা এখান মিয়াও জাতির গান শেখেন, আঠালো চালের কেক তৈরি করেন এবং সিংহ নাচ ও ড্রাগন নাচ উপভোগ করেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসির এ গ্রাম শাখার সম্পাদক থান চ্য ইউংয়ের মতে, তাদের এ গ্রামের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য আছে এবং গ্রামে ঘুরে বেড়ানো খুব মজার। থানচ্য ইউংয়ের জন্য গর্বের আরেকটি ব্যাপার হলো ২০২৩ সালে গ্রামের আয় ছিল ১৫ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান। অনুর্বর পর্বত এখন ফলের বাগানে পরিণত হয়েছে। ফল চাষ, পশুপালন ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের মাধ্যমে এ গ্রামের রূপান্তর হয়েছে।

থান চ্য ইউং তিনটি গল্পের মাধ্যমে এ পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়েছেন।

প্রথম গল্প, যুব মানুষ পুরাতন গ্রামে প্রাণশক্তি যোগায়। ২০০৮ সালে চীনে চালু হয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের গ্রামে নিয়োগ প্রকল্প এবং মা ইয়াং জেলায় এসেছেন বেশ কয়েকজন যুবক। তারা নান মু ছিয়াও গ্রামে সম্ভাবনা দেখেছেন। এখানে পাহাড়ি অঞ্চল এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাল। অনেকে পশুপালন ও চাষবাস কাজ করেন। তেরজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের উদ্যোগে গ্রামে একটি উদ্যোগ পার্ক চালু হয়েছে এবং ফল চাষ শুরু হয়েছে।

পরে এ যুবকরা একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং যারা এখানে ব্যবসা করতে চান তাদেরকে ঋণ গ্যারান্টি ও প্রযুক্তি সমর্থন দেন। দরিদ্র এ গ্রাম হু নান প্রদেশের দৃষ্টান্ত গ্রামে পরিণত হয়েছে।

এখন শুধু স্নাতকরা নয়, গ্রামের সাধারণ বাসিন্দারাও ব্যবসা শুরু করেছেন। গ্রামে চাষ করা ফলের প্রজাতিও আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। কমলা, কিউই, হলুদ পিচ, ব্লুবেরি, আঙ্গুরসহ নানা ফল এখানে পাওয়া যায়। উদ্যোগ পার্কের আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ হেক্টরে।

দ্বিতীয় গল্প, সহযোগিতা ও ঐক্যের গল্প।

২০১৬ সালে নান মু ছিয়াও গ্রাম ও পাশেরে দুটি গ্রাম নিয়ে নতুন একটি গ্রাম হয়। তবে পাশে দুটি গ্রামে দরিদ্র মানুষ বেশি বলে নতুন গ্রামও দরিদ্র গ্রাম হয়ে যায়। থান চ্য ইউং মনে করেন, দারিদ্রমুক্ত হতে চাইলে সহযোগিতা করতে হয়। তারা কাছেকাছি ৫টি গ্রামের সঙ্গে যৌথ উন্নয়নের একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। ফলে ৬টি গ্রামের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৩৩ হেক্টরের বড় একটি শিল্প পার্ক। সেখানে কিউই, ব্লুবেরি ও চীনা ভেষজ চাষ করা হয়। স্থানীয় কৃষকরা একদিকে শিল্প পার্কে কাজ করার মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারেন অন্যদিকে তারা জমি দিয়ে ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পারেন। প্রতি বছর তারা লভ্যাংশ পান। ছটি গ্রামের সহযোগিতার ফলে গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।

তৃতীয় গল্প, গ্রাম পুনরুজ্জীবনের গল্প।

থান চ্য ইউং বলেন, “ফল চাষ খাত এখন ভালভাবে এগিয়ে চলছে। তবে তার মানে নয় যে আমদের আর এগিয়ে যাবার কোন দরকার নেই। কৃষি, প্রাকৃতিক দৃ্শ্য ও সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে আমরা আরও বেশি অর্থনৈতিক মূল্য সৃষ্টি করতে পারি। আমরা কৃষি ও পর্যটনের সমন্বয়ের সম্ভবনা সন্ধান করি। এর প্রেক্ষাপটে আমরা এ গবেষণা ও লেখাপড়া বেইস প্রতিষ্ঠা করি। এ বেইসের পাশে আমাদের ফলবাগান এবং ছাত্রছাত্রীরা এখানে কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন।

ছয় মাসের মধ্যে মোট ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ এখানে এসেছে। গবেষণা ও লেখাপড়া ছাড়া ক্যাম্প ও গ্রামীণ হোটেলের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। যারা গ্রামে আসে পারিপারিক হোটেল বা ক্যাম্পে থাকতে পারে।

ছোট এ গ্রামের পরিবর্তনে প্রতিফলিত হয় চীনা গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের নতৃন দৃশ্য। থান চ্য ইউং বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও উন্নয়নের প্রবাহ অনুযায়ী নিজের গ্রামের জন্য উপযোগী উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলো গ্রাম পুনরুজ্জীবন বাস্তবায়নের সবচেয়ে ভাল উপায় এবং আমি বিশ্বাস করি আমাদের জীবন আরও সুন্দর ও ভাল হবে।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এ প্রতিবেদনে চীনের হু নান প্রদেশের নানা জায়গায় উন্নয়নের কথা জানিয়েছি। ক্যাটারিং, নির্মাণ শিল্প, পর্যটন শিল্প ও গ্রাম পুরুজ্জীবন - এ গল্পগুলোর মাধ্যমে আপনারা চীনের উন্নয়নের ধারণা কিছুটা হলেও পাবেন বলে আশা করি।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn