বাংলা

বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম

CMGPublished: 2024-02-16 19:30:55
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

বসন্ত উত্সব চলাকালে চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের ফু আন শহরের ফান খোং উপজেলার মাও চিয়া পিং গ্রামে ভোরবেলায় নীরবতা ভেঙেছে একটি হট্টগোল। গ্রামবাসীরা চত্ত্বরে একটি চায়ের চারা বহনকারী গাড়ি ঘিরে আগ্রহের সঙ্গে দাম জিজ্ঞেস করছেন।

আটান্ন বছর বয়সী মাও খ্য শুন নতুন কিছু চায়ের চারা বেছে নিয়েছেন। তিনি মাত্র দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভালো ফলন হলে আমার দশমিক ৬ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার ইউয়ান উপার্জন করতে পারি। গত বছরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ভাতা পেয়েছি, যার পরিমাণ ৫ হাজার ইউয়ান। আসন্ন লণ্ঠন উত্সবের পর নতুন প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছি, যা আসলে আরও ভালো চায়ের চারা উদ্ভাবন করা।”

গত বছর থেকে গ্রাম কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে অধিকতর সংখ্যক গ্রামবাসী চায়ের জাত উন্নয়ন গ্রুপে অংশ নিয়েছেন। এ কাজে দক্ষ মাও জে ছুয়ান এক মাস আগে পাহাড়ে গিয়ে ব্যস্ত সময় শুরু করেছেন। আগে তিনি অন্যদের সঙ্গে ২ হেক্টর জমিতে ফু ইয়ু নামের চা চাষ করেছিলেন। চলতি বছর ওই ১ দশমিক ৩ হেক্টর জমিতে ফু ইয়ুন বাদ দিয়ে সোনার পিওনি নামের চা চাষ শুরু করেন। মাও জে ছুয়ান বলেন, ‘গত বছর বসন্তকালে সোনার পিওনি চা প্রতি কেজি সাড়ে ১২ ইউয়ান করে বিক্রি হয়। এ উপার্জন ফু ইয়ুন চায়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

গত শতাব্দীর আশির দশকে মাও চিয়া পিং গ্রাম ফু চিয়ান প্রদেশের বিপ্লবী অঞ্চলের গ্রামের একটি এবং চরম দরিদ্র্য ছিল। সকলের ৩০ বছরের পরিশ্রমের পর ২০১৮ সালে মাও চিয়া পিং গ্রাম পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। ২০২৩ সালে গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ২৮ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। এ অঙ্ক পুরো প্রদেশের গড় আয়ের চেয়ে বেশি।

বাইরে কর্মরত গ্রামবাসীরা বসন্ত উত্সবের সময় গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামের চত্ত্বরে আবার হৈচৈ শুরু হয়। গ্রামের কর্মকর্তা ও অধিবাসীরা পরস্পরকে বসন্তের শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন।

ঊনআশি বছর বয়সী গ্রামবাসী মাও তোং ফু বলেন, ‘সব ডিম একটি বাক্সে রাখা যায় না। চায়ের পাতার দাম উঠানামা করে। তাই বিভিন্ন প্রজাতির চা চাষ করতে হয়।” বর্তমানে মাও চিয়া পিং গ্রামে চাষাবাদ দুটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে: একটি হলো আবাদি জমির অপ্রতুলতা এবং আরেকটি হলো তরুণ কর্মীর অভাব।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামের অনেক তরুণ অন্য স্থানে শ্রম দিতে যান। মাও চিয়া পিং গ্রামে ৫০০জন অধিবাসী ছিলেন। এখন মাত্র ২০০জন অধিবাসী স্থায়ীভাবে বাস করছেন। যারা চত্ত্বরে সমবেত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই প্রবীণ।

মাও চিয়া পিং গ্রামের জমি উর্বর নয়। তাই গাছে সহজে ফল ধরে না। তবে ক্যামেলিয়া অলিফেরা গাছ খরা-সহনীয়। তাই বেশি যত্ন নেওয়ার দরকার হয় না।

২০১৯ সালে মাও চিয়া পিং গ্রামে ১৫ দশমিক ৩ হেক্টর জমিতে ক্যামেলিয়া অলিফেরা চাষের মধ্য দিয়ে এ ফসল চাষের গোড়াপত্তন হয়। বর্তমানে সে সব চারা মানুষের উচ্চতার অর্ধেক হয়ে উঠেছে। পতিত জমিতে সবুজ ছড়িয়ে পড়ছে। পাহাড়ের পাদদেশে একটি নতুন ক্যামেলিয়া অলিফেরা কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এখানে ক্যামেলিয়া অলিফেরা তেল তৈরি করে পাহাড়ের বাইরে পাঠানো হবে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসির মাও চিয়া পিং গ্রাম কমিটির সম্পাদক ছেন ইয়ু পিং একটি হিসাব দেন। চারা লালনে মু প্রতি (০.০৬ হেক্টরে) খরচ দাঁড়ায় ১ হাজার ইউয়ানে। ক্যামেলিয়া অলিফেরা তেল উত্পাদিত হলে ৪ হাজার ইউয়ান উপার্জন করা সম্ভব হবে। প্রথম কিস্তির চারা আগামী বছর ফল ধরা শুরু করার পর প্রতি বছর গ্রামে ৮ লাখ ইউয়ান উপার্জন করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে উত্পাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক ও শাওয়ার জেলসহ নানা পণ্য তৈরি করা যাবে, যার ফলে উপার্জন আরও কয়েক গুণ বাড়বে।

ছেন ইয়ু পিং বলেন, ‘গ্রাম কর্তৃপক্ষের অর্থে গ্রামবাসীদের অনেক কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ভবিষ্যতে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক উন্নত হবে। ফলে আমরা গ্রামবাসীদের জন্য আরও বেশি কিছু করতে পারছি।”

পাহাড় তো আগের পাহাড়, জমিও আগের জমি। তবে পাহাড়কে নির্ভর করে জীবনে উন্নতির পদ্ধতি বের করতে হবে। গ্রামকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলে শিল্পের ওপর নির্ভর করতে হয়। শিল্প উন্নয়নে প্রকল্পকে প্রাধান্য দিতে হয়। গ্রাম কমিটির উচিত নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে পতিত জমি ও বনসম্পদকে এক করে আকারভিত্তিক পরিচালনার ব্যবস্থা করা, যাতে গ্রামে শ্রমশক্তির অভাব দূর করার পাশাপাশি বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।

নতুন বছরে মাও চিয়া পিং গ্রামবাসীরা অপার আশার আলো দেখছেন।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn