বাংলা

প্রযুক্তির সহায়তায় ফুল চাষে সমৃদ্ধির পথে শাং তোং গ্রামবাসীরা

CMGPublished: 2024-02-02 10:00:57
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

নতুন বছরের শুরুতে তীব্র শীত ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। কৃষিক্ষেত তুষারে ঢেকে গেছে। চীনের শান তোং প্রদেশের লিয়াও ছেং শহরের কাও থাং জেলার হুই সিন সড়কে অবস্থিত একটি গোলাপ চাষের গ্রিনহাউসে মালিক চি লুয়ান কয়েক দিন ধরে উত্তেজনাকর অবস্থা পার করছেন। জেলা পর্যায়ের কৃষি ও গ্রাম ব্যুরোর ঊধ্বর্তন প্রযুক্তিবিদ এবং কৃষি প্রযুক্তিবিষয়ক হটলাইন কার্যালয়ের পরিচালক তু লি চিকে তিনি বলেন, “ভাগ্য ভালো যে, ফুল গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়নি। না হলে চীনের বসন্ত উত্সবের সময়কালে বিক্রি করা যেতো না।”

ষাট বছর বয়সী তু লি চি ৩০ বছর ধরে কৃষিপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে আসছেন। এ সময় তিনি জেলার ৬০০টিও বেশি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন এবং ৪০ লাখেরও বেশি শব্দের ৭০টিও বেশি বই লিখেছেন। কৃষকরা তাঁকে ‘কৃষিজ্ঞানী’ হিসেবে গণ্য করেন। এবার চি লুয়ানের পাঠানো ছবির মাধ্যমে গোলাপ ফুল কী রোগে আক্রান্ত হয়েছে তা চিহ্নিত করেছেন এবং প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও চাষীরা উদ্বিগ্ন। তাই তিনি তার সহকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন।

বাইরে অনেক শীত হলেও গ্রিনহাউসের ভিতরে বসন্তের মতো উষ্ণ। চি লুয়ানের কাঁধ চাপড়ে তু লি চি বলেন, “ধোয়া দিয়ে গ্রিনহাউসে ফিউমিগেশন করবেন। দুপুরবেলায় গ্রিনহাউস একটু খুলে দিবেন, যাতে বাইরের ও ভিতরের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে। বড় কোনও সমস্যা নেই। আমরা প্রধানত আপনাকে দেখতে আসি।”

কৃষি প্রযুক্তি পরিষেবা উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সালে কাও থাং জেলার প্রধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে তু লি চিকে নিযুক্ত করা হয় এবং কৃষিমহল থেকে ৭০জন প্রযুক্তিবিদকে বেছে নিয়ে ‘তু লি চি কার্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। জনগণের অভিমত সংগ্রহের পাশাপাশি বিনাপয়সায় কৃষি, মত্স্য, বন ও পশুপালনের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা সমাধান করে কার্যালয়টি।

এ কার্যালয়ে প্রবেশ করলে দেখা যায়, পুরো দেয়ালজুড়ে খাদ্যশস্যের বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের ছবি। প্রযুক্তিবিদ ওয়াং হ্য ফেং জানান, প্রযুক্তিকর্মীরা পালাক্রমে অফিস করেন, উইচ্যাটের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশ্নের জবাব দেন এবং হটলাইনের কল ধরেন। ছুটির সময় হটলাইনের কল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযুক্তিকর্মীদের মোবাইলে চলে আসে। তিনি বলেন, “আমাদের কোনও ছুটি নেই। কারণ চাষবাসের কোনও ছুটি নেই। এখানে দরজা সবসময় খোলা থাকে। কৃষকরা জেলায় আসলে এখানে আসতে পারেন।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে তু লি চি চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এ কার্যালয় কৃষকদের রাতের ক্লাস চালু করেছে, যার মাধ্যমে চাষবাসপ্রেমী, প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জানেন এবং পরিচালনায় দক্ষ এমন নতুন কৃষকদের গড়ে তোলা হচ্ছে। তাছাড়া জেলা পর্যায়ের সরকার কৃষি ও শিল্পের কাঠামো সুবিন্যস্ত করেছে এবং সুষ্ঠু বীজবপন এবং ভালো পদ্ধতির মাধ্যমে উত্পাদন ও উপার্জন বৃদ্ধি করছে।

ছিং পিং উপজেলা চীনের ইয়েলো নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে গুরুতর মরুকরণ হয়েছে। গত দুবছরে এ কার্যালয়ের সহায়তায় এক ক্ষেতে চার ভাগ ভুট্টা এবং ছয়ভাবে বাদাম চাষের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, যা খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ২০১৭ সালে পুরো উপজেলায় এমন চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ ছিল মাত্র ২ হেক্টর। বর্তমানে এ পরিমাণ বেড়ে ৬৬৬ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে চাষের ফলে হেক্টরপ্রতি যে আয় হয়, তা একক ভুট্টা চাষের তুলনায় ১৫ হাজার ইউয়ান বেশি।

মাটি পরীক্ষা ও ফর্মুলা নিষিক্তকরণ, দূষণমুক্ত সবজি চাষ, উচ্চ-দক্ষতা এবং কম বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগসহ ‘তু লি চি কার্যালয়’ এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি নতুন প্রযুক্তি এবং ৬টি নতুন মডেল প্রয়োগ করেছে। পাশাপাশি এ কার্যালয় ৯টি নতুন শিল্প গড়ে তুলেছে এবং ৭০টিরও বেশি নতুন প্রজাতির খাদশস্যের চাষ চালু করেছে, যার ফলে কৃষকদের উপার্জন ১ কোটি ইউয়ান বৃদ্ধি পেয়েছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn