বাংলা

এসব প্রাচীন জিনিস আমাদের চীনা জনগণকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে: খো সিন ফেং

CMGPublished: 2023-12-01 21:50:48
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

“দূরের বন্ধুদের সাথে দেখা করা আনন্দের।” এটি কনফুসিয়াসের ‘দি অ্যানালেক্টস’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া একটি লাইন। এটি আড়াই হাজার বছরের পুরানো একটি চিরায়ত সাহিত্যকর্ম, যাতে চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস ও তার শিষ্যদের কথা ও কাজকে গ্রন্থিত করা হয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, কেউ চীনা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হলে, অবশ্যই তিনি ‘দি অ্যানালেক্টস’ সম্পর্কে কিছু না কিছু জানেন।

চীনের শান তোং প্রদেশের কুফু কনফুসিয়াস ও কনফুসিয়ান সংস্কৃতির জন্মস্থান। এখানকার সকল দর্শনার্থী কনফুসিয়াসের দর্শনের চিহ্ন খুঁজে পেতে পছন্দ করে। অধ্যাপক খোং সিন ফেং কনফুসিয়াসের ৭৬তম বংশধর, যিনি চীনের মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কসবাদী স্কুলের পরিচালক।

কনফুসিয়াস কেমন মানুষ ছিলেন এবং চীনা সভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কী? কনফুসিয়াসের ৭৬তম বংশধর হিসেবে এসব প্রশ্নের উত্তরে নিজের মতামতা প্রকাশ করেছেন খোং সিন ফেং।

আমার জন্য কনফুসিয়াস কেবল চীনা সভ্যতার অগ্রদূত ছিলেন না, রক্তের আত্মীয়তার পূর্বপুরুষও ছিলেন। আমি মনে করি, কনফুসিয়াস ছিলেন আমাদের চীনা জনগণের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আমরা তাঁকে দশ হাজারের অধিক শিক্ষকের দৃষ্টান্ত বলে ডাকতাম। চীনারা আজ মনে করে, আমাদের আচরণ কনফুসিয়াসের শিক্ষা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। যেমন, গুণ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা, অবিরাম আত্ম-উন্নয়নের চেষ্টা করা ইত্যাদি। এসব প্রাচীন জিনিস আমাদের চীনা জনগণকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে বলে আমি মনে করি।

চীনা সভ্যতার ইতিহাস ৫ হাজার বছরের। এটি বিশ্ব সভ্যতার বনে একটি উজ্জ্বল ফল। চীনা সভ্যতার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে অধ্যপক খো তার মতামত জানান।

আমরা যখন চপস্টিক ব্যবহার করি, তখন আমাদের অনেক শিষ্টাচার মেনে চলতে হয়, যা অতীত থেকে এ পর্যন্ত জীবনের ক্রমবর্ধমান করণীয় ও করণীয় সম্পর্কিত। প্রবীণদের সামনে তাদের থেকে আগে চপস্টিক ব্যবহার করে খাওয়া যাবে না। চপস্টিকটি খাবার প্লেটে বাড়ি মারা যাবে না। চীনা ভাষায় এ সামাজিক রীতিকে আমরা ‘ফেং সু’ বলি। আমি মনে করি, এটি একটি খুব সাধারণ চীনা শিষ্টাচার। এটি নৈতিকতা গঠনে ভুমিকা পালন করে। দেশ পরিচালনার সময় এটিকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে নিতে হবে। কারণ প্রথা ও রাজনীতির মধ্যে খুব শক্ত যোগসূত্র রয়েছে। প্রথা যথেষ্ট ভালো না হলে, ভালো সামাজিক ব্যবস্থা ও আইন থাকলেও কোনও কাজে আসবে না বলে আমি মনে করি।

স্থানিক ও স্থায়ী - উভয় দিক থেকে চীনা সভ্যতার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে বুঝতে হবে বলে আমি মনে করি। চীনা অক্ষরগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিটি রাজবংশেরই ইতিহাস লেখার চেতনা ছিল। অনেক ইতিহাসের বই লেখা হয়েছে। এসব উপাদান আমাদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলেছে। চীনের সভ্যতা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এটি ছুফু’র কনফুসিয়াস মন্দিরের বিখ্যাত তেরটি প্যাভিলিয়ন। এতে চিন রাজবংশের দুটি, ইউয়ান রাজবংশের দুটি এবং ছিং রাজবংশের নয়টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। আমরা এখানে যে শিলালিপি দেখতে পাই, এর বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে কনফুসিয়াসকে সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁর স্মরণে তার অনুরাগী ও কর্মকর্তাদের লেখা। আরও রয়েছে মন্দির সংস্কারের কিছু রেকর্ড। ঐতিহ্যবাহী চীনা অক্ষর, ইউয়ান রাজবংশের মঙ্গোলীয় জাতি এবং মানজু জাতির ভাষায় এগুলো লেখা হয়েছিল। বিভিন্ন ভাষায় সে লেখাগুলো খোদাই করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, আদিকাল থেকে সমগ্র চীনা জাতি কনফুসিয়াসকে শ্রদ্ধা করে আসছে।

তারপর থেকে, চীনের শাসকরা তাদের জাতিগত উত্স বা পটভূমি আলাদা থাকা সত্ত্বেও, চীনা সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে একটি ঐক্যবদ্ধ চীনা জাতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।

চীনে অনেক বিদেশির জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে একটি হলো যে, লোকেরা একে অপরকে এবং অন্য দেশের লোকেদেরকে ‘বন্ধু’ বা ‘বিদেশি বন্ধু’ বলে উল্লেখ করে৷ এতে ঘনিষ্ঠতা, একতা ও অন্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়। এটি চীনের সংস্কৃতির এক ধরনের বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক চীন সমাজে চীনা সভ্যতা কীভাবে অব্যাহত রাখছে?

আমি মনে করি, চীনের ইতিহাস এমন একটি ইতিহাস, যেখানে বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এক বহুত্ববাদী ও ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং সমসাময়িক চীনের জন্য আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই চীন বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্রের বিকাশ করেছে, আধুনিকীকরণের দিকে একটি নতুন পথ তৈরি করেছে এবং অন্যান্য দেশকে হুবহু অনুকরণ করার পরিবর্তে আধুনিকীকরণের একটি নতুন মডেল নিয়ে এসেছে। এটি হলো সেই শক্তি যা চীনা সভ্যতা ধরে রাখার পাশাপাশি এর জন্য নতুন শক্তি যুগিয়েছে।

ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও দিগন্ত আমাদেরকে ভিন্ন বিশ্ব দেখার দিকে পরিচালিত করে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে চীনকে না জানলে অতীত চীনকে বোঝা যাবে না এবং ভবিষ্যত চীনকেও বোঝা যাবে না। সমসাময়িক চীন তার অতীতের ধারাবাহিকতা ও বিকাশ। এটাকে বুঝতে পারা প্রকৃত চীনকে বোঝার প্রথম ধাপ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn