কেকেয়ার সবুজ কিংবদন্তি
ইমামু মাইমাইতি
শরত্কালে ঘন পপলার বনে উত্তপ্ত সূর্য যেন নিঃশব্দে জ্বলছে। ৭৮ বছর বয়সী ইমামু মাইমাইতি তাঁর ছেলে এসকার ইমামু বনের ভিতর হেঁটে হেঁটে গাছের অবস্থা পরীক্ষা করছেন। গাছগুলোকে নিজের বাচ্চার মতো স্নেহশীল স্পর্শ দেন তিনি। এই জায়গাটির নাম কেকেয়া। চীনের ম্যাপ খুললে দেখা যাবে কেকেয়া সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আখসু এলাকার ওয়েন সু জেলায় অবস্থিত। তার পাশে ‘মৃত সাগর’ তাকলিমাকান মরুভূমি। গত শতাব্দীর ৮০ দশকে হলুদ বালির বিরুদ্ধে এখানে এক লড়াই শুরু হয় এবং সবাই বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে একটি বড় প্রকল্পে অংশ নেন।
আজকাল শুধু কেকেয়া নয়, সারা আখসু অঞ্চলে সবুজ বন আর নতুন কোনও ব্যাপার নয়। কেকেয়ার বন চীনের ‘সান পেই’ প্রতিরক্ষামূলক বন প্রকল্পের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রসের পর থেকে আখসু অঞ্চলে মোট ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে এবং সেখানে বনের আয়তন ২০১২ সালে ছিল যেখানে প্রায় ৯ লাখ হেক্টর, সেখানে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ লাখ হেক্টরে।
সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমুছি থেকে দক্ষিণ দিয়ে গিয়ে থিয়ান শান পাহাড় অতিক্রম করার পর আখসুতে পৌঁছানো যায়। আখসু বিমানবন্দরের অদূরে বড় বড় ফল বাগান দেখা যায়। চীনে বিখ্যাত আখসু আইসড সুগার হার্ট আপেল এখানকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফল। তবে ৪০ বছর আগে, এখানে কোনও ফলের বাগান ছিল না। বসন্ত কাল শুরু হতো একটি বালিঝড় থেকে। তারপর বার বার বালিঝড়ে বছর কাটতো। ওই সময়ের অবস্থা স্মরণে এলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আখসু অঞ্চল কমিটির সাবেক সম্পাদক ৮৯ বছর বয়সী চিয়ে ফু পিংয়ের চোখ জলে ভরে যায়। তিনি বলেন, ওই সময় মানুষেরা কঠিন জীবনযাপন করতো, এক বাটি ভাতে অর্ধেক থাকতো বালি।
আগের সে পরিস্থিতি পরিবর্তনে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল স্থানীয়রা। ছিং রাজবংশের শেষ দিক থেকে অধিবাসীরা কৃত্রিম বন গড়তে শুরু করে। তবে সেখানে সব গাছ বাঁচে না। বসন্তে যে গাছে রোপণ করা হয়, তা শরত্কালে আগুনের কাঠে পরিণত হয়।