স্বর্গের মতো শহর হাংচৌ
গত কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে আমার ১৩ দিনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। সেখান থেকে বেইজিংয়ে ফিরে আসার দু সপ্তাহ পর আমি আবার নতুন যাত্রা শুরু করি। এবার আমি যাই চীনের চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌ। হাংচৌয়ের কথা যখন আসে, মনে পড়ে যায় একটি প্রবাদ, যা চীনে এত জনপ্রিয় ও প্রচলিত যে সবাই মুখস্ত বলতে পারে। প্রবাদটি হলো স্বর্গ যদি আকাশে থাকে, তাহলে পৃথিবীতে হাংচৌ ও সুচৌ শহর দুটি আমাদের স্বর্গ। ইতিহাসে হাংচৌ ৭ বারের মতো চীনের রাজধানী হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল। হাজার বছরের প্রাচীন এ নগরে রয়েছে যেমন সুন্দর ঐতিহ্য ও ইতিহাস তেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ। কারণ হাংচৌ একটি পার্কের শহরও। তাই হাংচৌ যাবার সুযোগের কথা শুনে আমার অনেক ভাল লাগে।
আসলে তিব্বতের ওই যাত্রা পরিকল্পিত সময় থেকে বেশ কিছু দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিব্বত থেকে ফিরে আসার পর একটি তথ্যচিত্রের শুটিংয়ের জন্য অন্তর্মঙ্গোলিয়া যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিব্বত থেকে ফিরে আসার পর পরই অন্তর্মঙ্গোলিয়া যাত্রার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তাই আমি ওই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসি। ঠিক ওই সময় আমার সহকর্মী রুবি আমাকে বলেন যে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হবে। যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে আমরা দুজন এই ক্রীড়া মহোৎসব কভার করতে হাংচৌ যেতে পারি। একথা শুনে আমি ভাবি, কেন যাব না, অবশ্যই যাব। তাই আমরা দুজন নিবন্ধনের জন্য সব তথ্য জমা দিই। অলিম্পিকের পর বৃহত্তম ক্রীড়া আয়োজন হিসেবে এশিয়ান গেমস উপলক্ষ্যে নানা দেশের ক্রীড়াবিদ, কর্মকর্তা ও সাংবাদিক হাংচৌয়ে আসবেন। তাই এর ব্যবস্থাপনা ও সেবা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল একটি কাজ। এবারের হাংচৌর আয়োজন আমার মনে গভীর ছাপ ফেলে। সেটি পরের কথা।
যাই হোক, আমাদের যাবার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সাধারণত আমরা যখন বেইজিংয়ের বাইরে কোনও অ্যাসাইনমেন্টে যাই, তখন অনলাইনে সেখানকার স্থানীয় হোটেল বুক করি। তবে এবার আমরা হাংচৌ এশিয়ান গেমসের ‘সাংবাদিক গ্রামে’ থাকবো। হাংচৌ এশিয়ান গেমসে উপলক্ষ্যে নতুন তিনটি কমিউনিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো হলো ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক ও প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের গ্রাম। এশিয়ান গেমসের পর এসব বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হবে। ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে এশিয়ান গেমস আয়োজন করা হয়েছিল। সেটি ছিল চীনের কোনও শহরে আয়োজিত প্রথম এশিয়ান গেমস। সে ক্রীড়া আয়োজনের পর বেইজিংয়ের এশিয়ান গেমস ভিলেজও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই অঞ্চল এখনও বেইজিংয়ের একটি উন্নত ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বড় একটি গেমস আয়োজনে ব্যয়ও অনেক। তাই গেমসের সব স্থাপনা যদি আবার ব্যবহার করা যায়, সেটাও একধরনের সাশ্রয়।