বাংলা

এক সময়ের ফাঁকা গ্রাম ছোং সিং এখন তারকা গ্রাম

CMGPublished: 2023-09-15 11:03:10
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের হেই লুং চিয়াং প্রদেশের মু তান চিয়াং শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে রওয়ানা দিয়ে পর্যটন বেল্ট বরাবর ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে একটি সুন্দর গ্রাম চোখে পড়বে। এটি মু তান চিয়াং শহরের সি আন অঞ্চলের হাই নান কোরীয় জাতির বসতি এলাকার ছোং সিং গ্রাম।

এ গ্রামে প্রবেশ করলে দেখা যায়, জাতিগত পোশাক পরা গ্রামবাসীরা চমৎকার সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে নৃত্য করছেন; দলে আসা পর্যটকরা নৌকায় চড়ে বাতাসের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছেন কিংবা দল বেঁধে বিশাল ধানক্ষেতের মধ্যে প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরিবেশে ভাসছেন। এ সময়ে হেই লুং চিয়াং ভ্রমণ খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাই চোং সিং গ্রামে প্রতিদিন চার দিক থেকে পর্যটকের আগমন দেখা যায়।

চোং সিং গ্রামে প্রবেশ করলে প্রথমে চোখে পড়ে কোরীয় ড্রাম আকৃতির একটি বড় স্থাপনা। এ স্থাপনার একদম উপর থেকে চারদিকে তাকালে পুরো গ্রামের দৃশ্য দেখা যায়। চোং সিং গ্রামবাসীদের অধিকাংশ কোরীয় জাতির মানুষ। গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন-সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা মতো এ গ্রামটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোরীয় জাতির সংস্কৃতি ও গ্রামীণ রীতিনীতির সংমিশ্রণ করে কৃষি ও পর্যটনযুক্ত পথ অনুসন্ধান করেছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি’র চোং সিং গ্রাম কমিটির প্রথম সম্পাদক খ্য রুই ফা জানান, পরিবেশ উন্নয়ন, পর্যটনের মাধ্যমে প্রচার এবং নানা শিল্পের মাধ্যমে উপার্জন বৃদ্ধিসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ছোং সিং গ্রাম কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রামের সহযোগিতা, নানা প্রকল্পের সংমিশ্রণ এবং সমন্বিত প্রশাসনের ভিত্তিতে রীতি-উদ্যান ও পারিবারিক হোটেলসহ নানা পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে তারা। এ গ্রামে পর্যটকের সংখ্যা বছরে ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গ্রামটি ছুটি কাটানোর আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

চোং সিং গ্রামের পথে হাঁটলে এখানে-সেখানে কোরীয় জাতির বৈশিষ্ট্যময় রেস্তোরা ও পারিবারিক হোটেলের দেখা মেলে। কোরীয় জাতির পোশাক পরে অনেক পর্যটক আনন্দের সঙ্গে ছবি তোলেন। গ্রামের বিনোদন এলাকায় অনেক বাবা-মা শিশুদের নিয়ে বিনোদন সুবিধা উপভোগ করেন। কানে ভেসে আসে আনন্দ কলরব। মু তান চিয়াংয়ের অধিবাসী চাং ইং হান বলেন, “শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে এ গ্রাম বেশ কাছে। যাতায়াতও বেশ সুবিধাজনক। আমি সব সময় ধানক্ষেতের দৃশ্য উপভোগ করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে বেড়াতে আসি।”

বর্তমানে চোং সিং গ্রাম অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে আগে এ গ্রামটি খুব ফাঁকা ছিল। গ্রামের ৯০ শতাংশ অধিবাসী অন্য স্থানে কাজ করতে যেতেন। ২০১৪ সালে বাইরে থেকে গ্রামে ফিরে আসা অধিবাসী হান ছুন শান গ্রামের উন্নয়নে ২ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করেন। তিনি চোং সিং গ্রামের পর্যটন শিল্পের অগ্রণী হিসেবে খ্যাত। তার নেতৃত্বে ৪০ জনেরও বেশি গ্রামবাসী গ্রামে ফিরে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন।

গ্রামের অধিবাসী চিন মিং চু তাদের মধ্যে একজন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরেছেন। বর্তমানে তিনি গ্রামে একটি রেস্তোঁরা চালান। তিনি বেশ ভালো ব্যবসা করছেন। চিন মিং চু বলেন, “অনেক পর্যটক আমার রেস্তোরাঁয় আসেন এবং আমাদের খাবারের প্রশংসা করেন। বর্তমানে আমি যে আয় করি, তা বিদেশে চাকরির আয়ের চেয়ে অনেক বেশি।”

পরবর্তীতে চিন মিন চু রেস্তোরার আকার বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন, যাতে আরও বেশি পর্যটকের চাহিদা মেটানো যায়।

সম্পাদক খ্য রুই ফা জানান, গ্রাম কতৃপক্ষ গ্রামবাসীদেরকে তাদের খালি বাড়িঘর সংস্কার করে পারিবারিক হোটেল ও রেস্তোঁরা গড়ে তুলতে উত্সাহ দেয়। পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে চোং সিং ও আশেপাশের গ্রামের অধিবাসীদের বাড়ির সামনে কর্মসংস্থানে করা হয়েছে। বর্তমানে চোং সিং গ্রামের অধিবাসীদের বার্ষিক গড় মাথাপিছু উপার্জন ৩৫ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।

একই সঙ্গে ছোং সিং গ্রাম স্কিইং ও স্কেটিং বিনোদনের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে, যাতে চার মৌসুমেই এখানকার পর্যটন শিল্প সজীব থাকে। অনেক প্রচেষ্টার ফলে চোং সিং গ্রাম নিখিল চীন গ্রাম পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম এবং ‘এক গ্রামে এক শৈলী’র প্রতীকী গ্রামে পরিণত হয়েছে। গ্রামের অধিবাসী সুই ইং লান বলেন, “বর্তমানে গ্রামটি আরও সুন্দর হয়েছে। অধিকতর সংখ্যক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসছেন। গ্রামবাসীদের উপার্জনও অনেক বেড়েছে। এখানকার জীবন সুখের হয়েছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn