বাংলা

পিচ ফলের আদি শহরে এর ফলনে প্রযুক্তির ভূমিকা বেড়েছে

CMGPublished: 2023-09-01 19:24:43
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহে পিচের আদি শহর হিসেবে খ্যাত চীনের চিয়াং সু প্রদেশের উ সি শহরের ইয়াং শান উপজেলায় প্রবেশ করলে বাতাসে পিচের সুগন্ধ পাওয়া যায়। পিচ বনের মধ্যে দৃষ্টি প্রসারিত করলে দেখা যায় পিচ তোলা ও প্যাকেটিংয়ে চাষীদের ব্যস্ততা। আর সবাইকে আশ্চর্য করে দেয় প্রযুক্তি-নির্ভর পিচ চাষের দৃশ্য।

“এটি আমাদের পরীক্ষামূলকভাবে ইংরেজি শব্দ ‘Y’ (ওয়াই) আকারের পদ্ধতিতে চাষ করা পিচ খাত। ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি প্রযুক্তির মাধ্যমে সময়মতো পিচ বড় হওয়া তত্ত্বাবধান করা যায়। এটি বিশেষ করে যান্ত্রিক কাজের জন্য অনুকূল।” ইয়াং শান উপজেলার পিচ চাষী এবং চিয়াং ছিন পারিবারিক সমবায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সুন চিয়ান ছিন অদূরে একটি পিচ বাগান লক্ষ্য করে এ কথাগুলো বলছিলেন। সে পিচ বাগানে দেখা যায় নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষ করা পিচ গাছের উচ্চতা চার মিটারেরও বেশি। এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব দেড় মিটার, যার ভিতর দিয়ে পরিবহন গাড়ি ও পিচ তোলার যন্ত্র বাগানে সহজে যাতায়াত করতে পারে।

সুন চিয়ান ছিন জানান, তিনি ১০ হেক্টর জমিতে পিচ চাষ করেছেন। নতুন পদ্ধতিতে পিচ চাষ করলে ফলন ২০ শতাংশ বাড়ে। মানুষের পরিবর্তে যন্ত্র ব্যবহার করা হলে, কার্যকারিতাও বাড়ে। চলতি বছর তার বাগানে উৎপাদিত ফল বিক্রি ৩০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন তিনি।

সুন চিয়ান ছিন বলেন, “আমাদের পিচ বাগানে আছে ৩০টিরও বেশি পিচ প্রজাতি। কৃষি প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করে আমরা গাছে ফল ধরার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।”

ইয়াং শান উপজেলায় প্রায়ই প্রতিটি পরিবার পিচ চাষ করে। সুন চিয়ান ছিনের মতো প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণকারী লোকের সংখ্যাও কম নয়। গত বছরে ইয়াং শান উপজেলায় পিচ চাষ করা হয়েছিল ২ হাজার ৫৩৩ হেক্টর জমিতে। উপযুক্ত যান্ত্রিক চাষের মাধ্যমে এখানকার পিচের উত্পাদন ৩৪ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। পিচ শিল্প-চেইনের আকার ২০০ কোটি ইউয়ান অতিক্রম করেছে। কৃষকদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ইউয়ানে।

ইয়াং শান পিচ চাষী সমিতির সাবেক মহাসচিব কৃষি প্রযুক্তিবিদ চাও ই রেন বলেন, ইয়াং শান উপজেলার পিচের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর খোসা পাতলা এবং খাবার উপযোগী অংশ পরিমাণে বেশি, রসালো ও মিষ্টি। অনুকূল পরিবেশ ছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে ইয়াং শান উপজেলার পিচ দীর্ঘকাল ধরে বাজারে জনপ্রিয় থাকছে।

সেন্সরের মাধ্যমে পিচ গাছের বৃদ্ধির পরিবেশ-সংক্রান্ত ডেটা সংগ্রহ করা, পোকা প্রতিরোধের পুর্বাভাস এবং প্রযুক্তি-নির্ভর মাধ্যমে সেচ দেওয়াসহ নানা নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি প্রদর্শন করছে হুই শান অঞ্চলের ইয়াং শান উপজেলার গবেষণালয়।

হুই শান জাতীয় আধুনিক কৃষিশিল্প উদ্যানের উত্পাদন প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান তাই হুই চুন বলেন, “আমরা দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্ব দিতে চাই, যাতে অধিতর সংখ্যক কৃষক ‘প্রযুক্তি-নির্ভর পিচ চাষ করতে চান।” তিনি আরও জানান, ইয়াং শান উপেজলায় তাদের শিল্প উদ্যানে বীজসম্পদ খাতের পাশাপাশি গ্রিনহাউসে পিচ চাষসহ নানা শিক্ষণীয় নতুন পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে।

উ সি শহরের থাই হু অঞ্চলের ইয়াং শান পিচ প্রযুক্তি কোম্পানি লিমিটেডের আছে ২৩৩ হেক্টর পিচ গবেষণা কেন্দ্র। এ কোম্পানি থ্রিডি দৃষ্টি প্রযুক্তির ভিত্তিতে স্মার্ট যন্ত্রের মাধ্যমে পিচের আকার, ওজন ও মাধুর্য অনুযায়ী সেগুলোর শ্রেণীবিন্যাস করে। প্রতি মিনিটে ১৮০টি পিচের শ্রেণীবিন্যাস করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি ফল রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা, তাও লক্ষ্য করা যায় এ যন্ত্রের মাধ্যমে।

প্রযুক্তির সাহায্য পিচ সংগ্রহ করা এবং প্যাকেটিং করা আরও স্মার্ট হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও অনেক বেড়েছে। এক মোবাইল স্ক্রিনের আমলে জন্মগ্রহণ করা কৃষক লু ইয়ু লিন লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে পিচ বিক্রি করছেন। তিনি জানান, পিক সিজনে তিনি একবার লাইভ স্ট্রিমিং করলে ৩ লাখ ইউয়ান পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।

ইয়াং শান উপজেলার ভাইস-গভর্নর ইয়াও কুও চিন জানান, চলতি বছর অনলাইনে ইয়াং শানের পিচ বিক্রির পরিমাণ জেলার মোট বিক্রির ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, “প্রযুক্তি গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনে চালিকাশক্তি যোগাচ্ছে। পিচ শিল্পে সবুজ রূপান্তর ও ডিজিটাইজ করতে হবে, যাতে ইয়াং শান পিচের নাম আরও উজ্জ্বল হয়।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn