বাংলা

চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৪০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে

CMGPublished: 2023-01-25 10:01:29
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনা সাধারণ শুল্ক প্রশাসনের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে চীনের আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ ৪২.০৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা ২০২১ সালের তুলনায় ৭.৭ শতাংশ বেশি এবং টানা ৬ বছর ধরে পণ্য বাণিজ্যে বিশ্বের প্রথম স্থান দখল করে আছে চীন।

এর মধ্যে রপ্তানি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায় এবং এর মোট পরিমাণ ছিল ২৩.৯৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। পাশাপাশি আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। ২০২১ সালের তুলনায় তা ১০.৫ শতাংশ ও ৪০.৩ শতাংশ বেশি।

চীনা সাধারণ শুল্ক প্রশাসনের মুখপাত্র লুই তা লিয়াং বলেছেন, ২০২২ সালে দেশ ও বিদেশের জটিল পরিস্থিতির মুখে চীনের বিদেশি বাণিজ্য নানা অসুবিধার মধ্যে পড়ে। এরপর ২০২২ সালের প্রথমার্ধে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন হয় এবং আমদানি ও রপ্তানি পরিমাণ প্রথমবারের মতো ৪০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। এটা চীনের অর্থনীতির সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

দেখা যায়, সাধারণ বাণিজ্য দ্রুত গতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২২ সালে চীনে সাধারণ বাণিজ্যিক আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ২৬.৮১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হয়। যা ২০২১ সালের তুলনায় ১১.৫ শতাংশ বেশি এবং মোট বাণিজ্যিক পরিমাণে এই অর্থের অনুপাত ৬৩.৭ শতাংশ; এককভাবে সবচেয়ে বেশি।

আসিয়ান জোট চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দু’পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক আদান-প্রদান দিন দিন ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দু’পক্ষের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ৬.৫২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হয়েছে। যা ২০২১ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চীনের আমদানি ও রপ্তানি ১৯.৪ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে, আরসিইপি’র আওতায় অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ৭.৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।

গত বছর চীনে মোট ৫ লাখ ৯৮ হাজারটি বেসরকারি কোম্পানি বিদেশি বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে। আমদানি ও রপ্তানিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫০.৯ শতাংশ হল বেসরকারি খাতের কোম্পানি। এই সংখ্যাও ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অর্ধেকের বেশি হয়েছে।

২০২২ সালে যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি ছিল ২০.৬৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। এর মধ্যে সৌর কোষ, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং গাড়ি রপ্তানি যথাক্রমে ৬৭.৮ শতাংশ. ৮৬.৭ শতাংশ ও ৮২.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া- তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লাসহ জ্বালানি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩.১৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান; যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪০.৯ শতাংশ বেশি হয়েছে।

২০২২ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য নানা ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে রপ্তানি ও আমদানির পরিমাণ যথাক্রমে ৯ ও ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। তৃতীয় প্রান্তিকে ১১.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছায়। যা একক প্রান্তিকের নতুন রেকর্ড। অন্যদিকে ২০০৫ সালে চীনের পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায় এবং ২০১২ ও ২০১৮ সালে ২০ ও ৩০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়ায়।

চীনা বৈদেশিক বাণিজ্যের এমন সফলতা সহজে অর্জিত হয় নি। নানা কষ্ট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চীনের বিদেশি বাণিজ্য সামনে এগিয়েছে এবং দৃঢ় প্রাণশক্তি ও বলিষ্ঠতা দেখিয়েছে।

আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ, গুণগত মান ও মুনাফা স্থানীয় সরকার, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিদেশি বাণিজ্যিক কোম্পানির যৌথ প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে। অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সরকার ধারাবাহিক ও টেকসই নানা ব্যবস্থা নিয়েছে।

পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট নীতির আলোকে বেসরকারি কোম্পানিগুলো প্রধান সত্তা হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বেসরকারি কোম্পানির অনুপাত ৮০.৮ শতাংশ।

গত বছরের ২ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ায় আরসিইপি চুক্তি কার্যকর হয়। চীনের নান নিং শুল্ক বিভাগ কুয়াং সি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত এলাকা প্রথম এতে সই করে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানিকৃত চীনা মধুর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে শূন্যে নেমে আসে।

গেল এক বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ঐতিহ্যিক বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় বজায় রাখার পাশাপাশি আরসিইপি চুক্তির প্রভাবে আসিয়ান, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছে চীন। ২০২২ সালে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় চীনের রপ্তানি যথাক্রমে ১৪.৮ শতাংশ ও ১৪.১ শতাংশ বেড়েছে।

১০ জানুয়ারি রাত ১১টায় আন্তর্জাতিক ই-কমার্স পণ্যবাহী একটি কার্গো বিমান সিনচিয়াংয়ের উরুমুছি থেকে কাজাখস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সিনচিয়াংয়ে প্রথমবারের মতো চালু হয় আন্তর্জাতিক ই-কমার্স মালবাহী কার্গো বিমানের বিশেষ রুট। এই ফ্লাইটে রয়েছে প্রায় আড়াই কোটি ইউয়ান মূল্যের ১৫ টন পণ্য। জামাকাপড়, জুতো এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মধ্য এশিয়ার বিদেশি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স বিদেশি বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশে পরিণত হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চীনের আন্তর্জাতিক ই-কমার্সের পরিমাণ ২.১১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হয়, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৯.৮ শতাংশ বেশি।

আন্তর্জাতিক ই-কমার্স, বিদেশি গুদাম, অবাধ বাণিজ্য এলাকা ও বন্দর, আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা, ক্যান্টন ফেয়ারসহ নানা নতুন ব্যবসায়িক মডেল ও প্ল্যাটফর্ম বাণিজ্যের উচ্চ মানের উন্নয়ন এগিয়ে নিয়েছে এবং চীনকে শক্তিশালী বাণিজ্যের দেশ হিসাবে নির্মাণে নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে।

বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি ধীর হবার ঝুঁকি বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা কমে গেছে। যা বিদেশি বাণিজ্যের জন্য বৃহত্তম হুমকি। চীনে মহামারি প্রতিরোধের নিয়ম সমন্বয় ও উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন স্থানে সরকারের উদ্যোগে চীনা কোম্পানি বিদেশ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করছে।

চীনা অর্থনীতির রয়েছে স্থিতিস্থাপকতা, সম্ভাবনা ও চালিকাশক্তি। যা ভবিষ্যতে অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন বছর চীনের বিদেশি বাণিজ্যের উপর দেশ-বিদেশের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn